সুপ্রভাত বগুড়া (আবদুল ওহাব শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি): বগুড়ার শাজাহানপুরে ধনাঢ্য দুই পরিবারের চির শত্রæতার জেরে তাদের সেচ প্রকল্প নিয়ে সংঘাত ও মারপিটের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় এক পুলিশ সদস্য এবং ছাত্রলীগ নেতার মধ্যে সংঘর্ষ সাজিয়ে নিজ নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করতে টানা-হেচড়া শুরু হয়েছে। পরিবার দুটির অন্ততঃ ৬ জন আহত হয়েছে এবং উভয় পক্ষ থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগও দায়ের করেছেন।
অনাকাংখিত এই ঘটনাটি চলছে উপজেলার আমরুল ইউনিয়নের ক্ষুদ্র ফুলকোর্ট গ্রামে। ঘটনার বিবরণে জানাযায়, ক্ষুদ্রফুলকোট গ্রামের পুর্ব পুরুষ বারাকী দেওয়ান ও তাহের মাহমুদ দেওয়ান দুই ভাই হলেও জমি-জমা ও পারিবারিক কলহে একে অপরের সাথে ছিল সম্পর্কচ্যুত। তাদের মৃত্যুর পর, বছরের পর বছর আর যুগের পর যুগ পেরিয়ে শতাব্দী বছর অতিক্রম করলেও দুই দেওয়ান পরিবারের মাঝে বংশানুক্রমিক চির শত্রæতা আজও রয়েছে চলমান।
ফলে তুচ্ছ ঘটনায় একে অপরের সাথে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে অনায়াসে। কারন- ক্ষমতা ও আধিপত্যের দাপটে কেউ কারো চেয়ে কোন অংশে কম নয়। তাদেরই দুই পরিবারে জন্ম মৃত আবদুস সামাদ দেওয়ানের ছেলে শামীম আহমেদ (৩৮) ও মৃত ইছাহাক আলীর ছেলে মোজাম্মেল হোসেন (৫০)।
প্রতিবেশীরা জানায়, দুটি পরিবারের মাঝে চির শত্রæতা থাকলেও শামীম আহমেদের চাচাতো বোন মুক্তির সাথে মোজাম্মেল হোসেনের বড় ছেলে জুয়েলের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। বিষয়টিতে চির শত্রæতা অবসানের সম্ভাবনা থাকলেও তা প্রত্যাখ্যান হয় পরিবারে।
দ্রæত জুয়েলকে অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করা হয়। এরপর মুক্তিকে অন্যত্র বিয়ে দেয়া হলেও সে সংসার জীবন প্রত্যাখ্যাান করে আজও অবিবাহিত জীবন যাপন করছে। এ বিষয়ে মুক্তির কাছে জানতে চাইলে তিনি জুয়েলের সাথে প্রেম পরিণয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেন এবং অবিবাহিত জীবনের গল্পও স্বীকার করেন।
তারা আরও জানান, দিনের পর দিন এসব বিষয় ছাড়াও বংশানুক্রমিক চির শত্রæতা আরও ঘণীভুত হয়ে উঠে। ফলে তুষের আগুনের ঝড় উঠে দুটো পরিবারেই। তুচ্ছ ঘটনাতেই রক্তক্ষয়ী মারপিট যেন চা- নাস্তা।
তবে চলমান মারপিট ঘটনা সম্পর্কে মোজাম্মেল হক দেওয়ান জানান, বাধের পশ্চিম পাশে তার সেচ স্কীম এবং পুর্ব পাশে শামীমের সেচ স্কীম এলাকার মধ্যে তার প্রায় ১৫ বিঘা জমি থাকায় পরিবারের লোকজন বুধবার ড্রেন নির্মান কাজ শুরু করে। কিন্তু শামীম সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হওয়ায় ভাড়া করা লোক নিয়ে পুর্ব শত্রæতার জেরে তাদের উপর অতর্কিত হামলা ও মারপিট করে।
আর এবিষয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীম জানান, অবৈধভাবে তার সেচ পাম্প স্কীম এলাকার মধ্যে ড্রেন নির্মান কাজে বাধা দেয়ায় মোজাম্মেল হক দেওয়ানের ছেলে পুলিশ সদস্য ফরহাদের নেতৃত্বে তাদেরকে মারপিট করা হয়। আহতরা হলেন আব্দুস সামাদ দেওয়ান, তার ছেলে ছাত্রলীগ নেতা শামীম, আব্দুর রশিদ, রবিন।
অপর পক্ষের আহতরা হলেন মোজাম্মেল দেওয়ানের ছেলে ফারুক হোসেন, জুয়েল এবং শাহাদাত হোসেন।এঘটনায় মোজাম্মল হক দেওয়ান বাদি হয়ে ছাত্রলীগ নেতা শামীমসহ ৬জনকে বিবাদী করে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। এদিকে ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি শামীম আহমেদ বাদি হয়ে পুলিশ সদস্য সহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানান, উভয় পক্ষের অন্ততঃ ৬ জন আহত হলে এক গ্রæপ পুলিশ সদস্যের নেতৃত্বে আরেক গ্রæপ ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে সংঘর্ষের অভিযোগ করছে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে এখানে পুলিশ- ছাত্রলীগ সংঘর্ষ বা সংঘাতের কোন ঘটনা ঘটেনি। এ সব কিছুই তাদের বংশানুক্রমিক ও পারিবারিক চির শত্রæতার কারনে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে।
এবিষয়ে ছুটিতে থাকা পুলিশ সদস্য নায়েক ফরহাদ জানান, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীম তার বাহিনী নিয়ে আমার বাবা ও দুই ভাইয়ের উপর হামলা চালায়। এক ভাইয়ের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। আমি খবর শুনে দুই ভাইকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। অথচ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ করছে। শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা (ওসি) আজিম উদ্দীন বলেন, দুই পক্ষের অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।