সীমিত পরিসরে হচ্ছে এবারের হজ

সীমিত পরিসরে হচ্ছে এবারের হজ ছবি-সংগ্রহ

সুপ্রভাত বগুড়া (ধর্ম ও জীবন): আজ পবিত্র হজ। সীমিত পরিসরে হচ্ছে এবারের হজ। একেবারেই ভিন্ন পরিস্থিতি, ভিন্ন চিত্র।

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে প্রায় ১০০ বছরের মধ্যে এই প্রথম সৌদি আরব সরকার হজে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।

Pop Ads

এমন হজ আগে কখনও দেখেনি বিশ্ব। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে এবার পবিত্র হজের সব আনুষ্ঠানিকতাই আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর।

করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু শূন্যের কোঠায় রাখতেই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো হজ প্রক্রিয়ায় থাকবে নানা প্রযুক্তির ব্যবহার।

যেমন হাজীদের শরীরের তাপমাত্রা মাপার জন্য বসানো হয়েছে থার্মাল স্ক্যানার। তাদেরকে যাতে সহজেই ট্র্যাক করা যায় সেজন্য সরবরাহ করা হয়েছে ইলেকট্রনিক পরিচয়পত্র।

খবর ডন, ডয়েচেভেলে ও আরব নিউজের।এদিকে হাজীদের স্বাগত জানাতে পুরোপুরি প্রস্তুত মক্কার গ্রান্ড মসজিদ।

ইতোমধ্যে মক্কায় উপস্থিত হতে শুরু করেছেন হাজীরা। বিশ্বে এবারই প্রথম, হজ করতে সৌদি যেতে পারেনি অন্য দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।

গত বছরও যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ পবিত্র হজ পালন করেছিলেন, সেখানে এবার এ সুযোগ পাচ্ছেন মাত্র ১০ হাজার জন।তাদের সবাই সৌদি আরবে অবস্থানরত।

অর্থাৎ এবার সৌদি আরবের বাইরে থেকে গিয়ে কাউকে হজ করতে দেয়া হচ্ছে না। তবে যারা সুযোগ পেয়েছেন তাদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই সৌদি আরবে অবস্থানরত প্রবাসী।

বুধবার থেকে শুরু হয়েছে পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা। কোভিড-১৯ থেকে রক্ষা পেতে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে সৌদি সরকার।

হজের জন্য মনোনীতদের প্রত্যেকের করোনা পরীক্ষা করানো হয়েছে। হজ শুরুর আগে দুই ধাপে সবার জন্য কোয়ারেন্টিনে থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়।

এই স্বল্প সংখ্যক হাজীকে বারবার করোনা শনাক্ত পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। হজ চলাকালে মক্কার হোটেলগুলোতে তারা থাকবেন আইসোলেশনে।

প্রতিটি ক্ষেত্রেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও উন্নত প্রযুক্তির কার্যকর ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে।মক্কায় প্রবেশের আগেই হাজীদের হাতে পরার জন্য একটি রিস্টব্যান্ড সরবরাহ করেছে সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

এই ব্যান্ডের মাধ্যমে তাদের চলাফেরা পর্যবেক্ষণ এবং বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন নজরদারি নিশ্চিত করা হবে।শরীর জীবাণুমুক্ত করতে মসজিদে প্রবেশপথে বসানো হয়েছে স্বয়ংক্রিয় জীবাণুমুক্তকরণ মেশিন।

হাজীদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষার জন্য কাবাঘরের আশপাশের সব জায়গায় থার্মাল স্ক্যানার বসানো হয়েছে।প্রত্যেক হাজীকে ২০ জনের একটি গ্রুপে যুক্ত করা হয়েছে।

হজের আনুষ্ঠানিকতা পালনের জন্য দলনেতা হাজীদের নির্দিষ্ট স্থানগুলোতে নির্দিষ্ট সময়ে নিয়ে যাবেন।

গ্রান্ড মসজিদে নামাজ আদায়, তাওয়াফ বা অন্য কোথাও যাতে ভিড় না হয় সে জন্য এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

যাতে সংক্রমণ ছড়াতে না পারে সে জন্য জমজমের পবিত্র পানি পানেও থাকছে নিয়মের কঠোরতা। এবার সবার জন্য জমজমের পবিত্র পানি সরবরাহ করা হবে প্লাস্টিকের প্যাকেটে।

সেই পানিই পান করতে হবে সবাইকে। হজের ফরজ আহকামগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে আরাফার ময়দানে অবস্থান।

আরাফায় হাজীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে উন্নত প্রযুক্তির পরিচয়পত্র সরবরাহ করা হয়েছে। অ্যাপসের মাধ্যমে এই পরিচয়পত্রটির সঙ্গে ফোনে সংযোগ থাকবেন হাজীরা।

অ্যাপস ও পরিচয়পত্রের মাধ্যমে দলছুট হাজীকে শনাক্ত করে তার দলের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা যাবে এবং হাজীর কোনো বিশেষ খাবারের চাহিদা থাকলে সেই অনুরোধও করা যাবে।

এই কার্ডে হাজীদের ব্যক্তিগত তথ্য, স্বাস্থ্যের অবস্থা, আবাস স্থান ও অন্যান্য তথ্য থাকবে।ইহরামের কাপড়ে সিলভার ন্যানো টেকনোলজি যুক্ত করা হয়েছে।

এটি কাপড়ের ব্যাক্টেরিয়াকে মেরে ফেলতে সাহায্য করবে এবং কাপড়কে পানি নিরোধক করবে।বিশেষ পরিস্থিতির কারণে শয়তানকে পাথর ছোঁড়ার আনুষ্ঠানিকতাতেও থাকছে নতুনত্ব।

এবার সর্বোচ্চ ৫০ জন হাজী একসঙ্গে পাথর নিক্ষেপ করতে পারবেন। তবে সে পাথর সাধারণ কোনো পাথর নয়। এবার জীবাণুমুক্ত পাথর সরবরাহ করা হবে হাজীদের।

হজে প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার নিয়ে সৌদির হজ মন্ত্রণালয়ের মুখ্য পরিকল্পনা কর্মকর্তা আমর আল মাদ্দাহ বলেন, ‘এই মুহূর্তে পুরো হজপ্রক্রিয়া শেষ করতে প্রযুক্তিই আমাদের কালো ঘোড়া।

কোভিড-১৯ সংক্রমণের কোনো ঘটনা এবং এতে মৃত্যু ছাড়াই যাতে হজ শেষ হয় তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ নিচ্ছি।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here