বৈষম্য ও অভিভাবকদের অপমান করায় বগুড়ায় শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ

বৈষম্য ও অভিভাবকদের অপমান করায় বগুড়ায় শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ

বৈষম্য ও অভিভাবককে অপমান করায় বগুড়া সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা শহরের সার্কিট হাউজের সামনে নবাববাড়ি সড়কে মঙ্গলবার বেলা ৩টা থেকে দু’দফায় ঘন্টাব্যাপী অবরোধ করেছে।অবরোধ করা শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, বিদ্যালয়ের দিবা শাখার অষ্টম শ্রেণির ‘ঘ’ শাখার সম্প্রতি ভর্তি হয়েছেন জেলার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-৩ এর একজন বিচারকের মেয়ে। শ্রেণির নিয়ম অনুযায়ী কক্ষ পরিষ্কার করার জন্য দল গঠন করা হয়। সে দলে ওই বিচারকের মেয়ে ছিল।

সেসময় তাকে শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার করতে বলা হয়। কিন্তু সে তখন তা করতে অপারগতা দেখায় এবং বিচারকের মেয়ে এসব করবে না। তখন শিক্ষার্থীরা তাকে বলে, আমরা পারলে তুমি পারবে না কেন। তখন ওই শিক্ষার্থী কান্না করতে করতে শ্রেণিকক্ষ থেকে বের হয়ে প্রধান শিক্ষককে অভিযোগ করেন। বিষয়টি শ্রেণির এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে।

Pop Ads

এতে বিচারকের মেয়ে ক্ষিপ্র হয়ে রাতে ফেসবুকে স্টোরিতে তার নামে অভিযোগ করা শিক্ষার্থীদের ‘বসির মেয়ে’ বলে স্ট্যাটাস দেয়। তা বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষার্থীরা জানার পর তারাও রিপ্লে স্টোরি দেয়। এতে বিষয়টি বিচারকের নজরে আসে। এরপর বিদ্যালয়ের পক্ষথেকে নিদিষ্ট কিছু শিক্ষার্থীদের অভিভাবককে ফোন করে সকালে স্কুলে আসতে বলা হয়।

এরপর মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে বিদ্যালয়ে বিচারক ও তার মেয়ে আসেন এবং ফেস্বুকে স্টোরি রিপ্লে দেয়া শিক্ষার্থীর মা ও মেয়েকে নানা ভাবে অপমানিত করেন এবং তাদের কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেন বলে দাবি করে অবরোধ করা শিক্ষার্থীরা। বেলা ৩টার পর থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সার্কিট হাউজ সড়ক অবরোধ করে। এসময় শিক্ষার্থীরা আরও দাবি করেন, তাদের সাথে বৈষম্য করা হচ্ছে। বিচারকের মেয়ে হয়ে তার সবকিছুকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। বিদ্যালয়ের অনেক নিয়ম সে মানে না। এমনকি বিচারকের মেয়ে বলে তার জন্মদিন বিদ্যালয়ে পালন করা হয়।

এদিকে শিক্ষার্থীরা পুলিশের আশ্বাসের বেলা ৪টার পর সড়ক সরে বিদ্যালয়ের বিভতরে অবস্থান নেন। এরপর এবিষয়টি নিয়ে কথা বলেন বগুড়া সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুন। তিনি জানান, বিষয়টি বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষক ও অভিভাবকদের মাঝে। শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে ঝাড়ু দেয়া নিয়ে ঘটনার সুত্রপাত হয়। তারপর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয় বিচারকের মেয়ে। এতে বিষয়টি আরও বড় হয়। মঙ্গলবার সকালে ওই বিচারক স্কুলে আসেন। আমরা অন্যান্য অভিভাবকদেরও ডাকি। কিন্তু কাউকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য বলা হয়নি। ঘটনাটি আচমকা ঘটে গেছে। আমরা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি।

এরপর বেলা সাড়ে ৪টার পর শিক্ষার্থীরা আবারও বিদ্যালয় চত্বর থেকে বেরিয়ে সড়ক অবরোধ করে। এবং দাবি জানায় সুষ্টু সমাধানের আশ্বাস না দিলে তারা সড়ক অবরোধ থেকে সরে দাড়াবে না। প্রায় ৩০ মিনিট সড়ক অবরোধ চলাকালে জেলা প্রশাসকের পক্ষে জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নিলুফা ইয়াসমিন অবরোধ করা শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে ফিরে আসে। এসময় বিদ্যালয়ের হল শিক্ষার্থীদের নিয়ে বসেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নিলুফা ইয়াসমিন।

এসময় শিক্ষার্থীরা তাদের অবরোধের বিষয় বিস্তারিত উপস্থাপন করে এবং দাবি জানায়, যে শিক্ষার্থীরা ও তার মায়ের ক্ষমা চেয়েছে তাদের কাছে ওই বিচারককে সবার সামনে ক্ষমা চাইতে হবে। কারণ প্রধান শিক্ষক তাদের বলেছিলেন, ক্ষমা চাইলে যদি জাত না যায়, তাহলে ক্ষমা চাইতে হবে। এবং বিচারকের মেয়ে বিদ্যালয়ের পড়তে হলে নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে। কোন বৈষম্য করা যাবেনা। সুষ্ঠু সমাধান না হলে ও বৈষম্য করলে তারা সকলে টিসি (ট্রান্সফার সার্টিফিকেট) নিয়ে চলে যাবে অষ্টম দিবা ‘গ’ ও ‘ঘ’ শাখার সকল শিক্ষার্থী।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার (২২ মার্চ) রাতেই বিদ্যালয়ে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় করেন বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম। এসময় তিনি বলেন, বিদ্যালয়ে আসার পর সে ডিসির মেয়ে হোক, কিংবা যারই মেয়ে হোক সবাই শিক্ষার্থী, তাদের বিদ্যালয়ের সব রুলস্ মেনে চলতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বিষয়টি ইতোমধ্যে মহামান্য হাইকোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয় অবগত হয়েছেন। অভিযুক্ত বিচারকের বিরুদ্ধে ডিপার্টমেন্টাল ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নিলুফা ইয়াসমিনকে তদন্ত করার জন্য নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম।