স্টাফ রিপোর্টার : বগুড়া শহরতলীর ১৪নং ওয়ার্ডে পুরান বগুড়া হিন্দুপাড়ায় গতকাল সন্ধ্যা আনুমানিক ৬ঘটিকায় দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে সজল হেয়ার ড্রেসারের মালিক শ্রী সজল চন্দ্র শীলের আধাপাকা টিন সেডের বসত বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে ব্যপক ক্ষয়-ক্ষতি হলেও অল্পের জন্য বেঁচে গেছে প্রাণ। অগ্নিকান্ডের সাথে সাথেই খবর দেয়া হয় ফায়ার সার্ভিসকে। কিন্তু বসতবাড়িটি গলির ভেতরে হওয়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে অগ্নিনীর্বাপক দলকে।
এসময় প্রায় এক ঘন্টার প্রাণপণ চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন ফায়ার সার্ভিসের চৌখস টিম। কিন্তু, ততক্ষণে বাড়ির টিনের চালা, সমস্ত আসবাবপত্র, খাট, আলমারি সোকেজ, চেয়ার টেবিল, টিভি ও ২টি ফ্রিজ সহ ব্যবহৃত কাপড়-চোপড় এমনি নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার , জমির দলিল থেকে শুরু করে সমস্ত কিছু আগুণে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এখন শুধু শূণ্য জায়গাটিতে ইটের দেয়াল ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। সব কিছু হারিয়ে প্রায় নি:স্ব সেলুন ব্যবসায়ী সজল চন্দ্র।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গতকাল সন্ধ্যায় সজল ও তার পরিবারের সবাই পাশের বাড়িতে তার মামাতো বোনের বিয়ের অনুষ্ঠানে ব্যস্থ ছিলো। এ সময় বাড়ির সদর দরজায় তালা দেয়া ছিলো। কিন্তু, পাশের ঘড়ের একটি জানালার উপরের অংশ খোলা ছিলো সেখান থেকে প্রথমে খাটের উপরে আগুন জলতে দেখে স্থানীয়রা সজলকে সংবাদ দিলে সে আসতে আসতে বাড়ির মেইন গেট ও পাশের রুম পর্যন্ত আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে, ফলে বাসার ভেতরে ঢোকা সম্ভব হয়নি। এর পরই ফায়ার সার্ভিসে সংবাদ দেয়া হয়।
স্থানীয়দের ধারণা, হয় তো গ্যাসের চুলা বা বৈদুতিক সর্ট সার্কিটে উক্ত অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তবে আজ রবিবার সকালে স্থানীয় পল্লিবিদ্যুত অফিসের কর্মীরা পরিদর্শনে এসে সরেজমিন তদন্ত করে নিশ্চিত করেছেন যে এটি কোন বৈদ্যুতিক সর্ট সার্কিটের ঘটনা নয়। এমনকি চুলা থেকেও আগুনের সুত্রপাতের কোন নমুনা পাওয়া যায়নি, কেউ উচ্ছা করেই সুপরিকল্পিত ভাবে এই অগ্নি সংযোগ ঘটিয়ে থাকতে পারে।
বিষয়টি নিয়ে বাড়ির মালিক শ্রী সজল চন্দ্র শীলের সাথে কথা বললে তিনি দৈনিক সুপ্রভাত বগুড়াকে জানান, ‘গতকাল সন্ধ্যায় আমি বোনের বিয়ের অনুষ্ঠানে ব্যস্থ ছিলাম। আমার এক প্রতিবেশি খবর দিলে এসে দেখি চোখের সামনে আমার বাড়িটা আগুনের দাউ-দাউ লেলিহান শিখায় পড়ে যাচ্ছে। অনেক চেষ্টা করেও ভেতরে ঢুকতে পারিনি। সব কিছু পুড়ে ছাই ! আমার আর কিছুই অবশিষ্ট্য রইলো না’।
তিনি অক্ষেপ করে বলেন, ‘আমি একজন সেলুন ব্যবসায়ী, এলাকায় আমার কোনদিন কারও সাথে একটা কটু কথা হয়নি, আমি প্রায় ২০ বছর যাবৎ তিনমাথা রেলগেটে সজল হেয়ার ড্রেসার নামে সেলুন ব্যবসা পরিচালোনা করে আসছি। আমার তো এমন কোন শত্রæ নেই তাহলে এভাবে কে আমার সংসারটা পুড়ে ছাই করে দিলো আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।
স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ন্যায় বিচার দাবি করে তিনি আরও বলেন, আমার সাথে কেন এমন হলো ?’ যেই আমার এই ক্ষতি করে থাকুক ভগবান তার বিচার অবশ্যই করবেন। আমি কোনদিন কারো কোন ক্ষতি করিনি। আমি প্রসাশন সহ সকলের কাছে এর বিচার চাই বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।
ক্ষয়-ক্ষতির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই মুহুর্ত্বে সঠিক ভাবে বলা কঠিন, আমার তো কিছুই নাই সবই শেষ হয়ে গেছে। ঘরে নিজের আলমারিতে সংরক্ষিত ছিলো নগদ এক লক্ষ্য টাকা, বাবার ঘরে ছিলো ব্যবসার ষাট হাজার টাকা এবং ছোট ভাইয়ের ঘরে যা নগদ টাকা ছিলো সব মিলিয়ে নগদ দুই লক্ষ্য টাকা হবে, এছাড়া ৭ ভড়ি সোনার গহনা, ব্যবহৃত কাপড়-চোপড় ও তৈজসপত্র যা ধ্বংসস্তুপের ভেতরে পড়ে থাকতে পারে। এছাড়া বাড়ির ৭টি ঘরে দামি দামি জিনিসপত্র যা ছিলো সব মিলিয়ে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক প্রায় ২০,০০,০০০/- (বিশ লক্ষ) টাকা।’
স্থানীয়রা বলেন, ‘সজল খুব মিশুক প্রকৃতির মানুষ এলাকায় তার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে তার কোন প্রকাশ্য শত্রæ নেই। তবে সংখ্যালঘু হবার কারণে যদি প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে কেউ তার এমন ক্ষতি করে থাকে তাহলে তার অবশ্যই বিচার হওয়া উচিত।’ এ ব্যাপারে সরেজমিন তদন্ত পূর্বক স্থানীয় প্রসাশনের হস্তক্ষেপে ন্যায় বিচার দাবি করছেন এলাকার মানুষ।
শীতের মৗসুমে বিভিন্ন স্থানের অনাকাংখিত ভাবে আগুন লাগার ঘটনা শোনা গেলেও বসত বাড়িতে রহস্যজনকভাবে এমন আগুণ লাগার ঘটনা খুবই দু:খজনক। ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। সকাল থেকে শতশত উৎসুখ জনতা একনজর বাড়িটি দেখার জন্য ভীর জমাতে থাকেন। এরই মধ্যে স্থানীয় বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ন্যায় বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় অভিযোগের প্রস্তুতি চলছিলো।