অবহেলা ও উপেক্ষায় বিলুপ্ত মুক্তিযুদ্ধের নিদর্শন

অবহেলা ও উপেক্ষায় বিলুপ্ত মুক্তিযুদ্ধের নিদর্শন। ছবি-ওহাব

সুপ্রভাত বগুড়া (আবদুল ওহাব (বগুড়া) শাজাহানপুর প্রতিনিধি: চরম অবহেলা ও উপেক্ষায় পড়ে আছে বগুড়া শাজাহানপুরের আড়িয়া বাজারে এ এলাকার একমাত্র মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থানটি। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তি পাগল বীর সেনানীরা সহযোদ্ধা শহীদদের স্মরণে রক্তাক্ত হাতে ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে এখানে শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠা করলেও স্বাধীনতার ৪৯ বছরে তা সংস্কার ও সংরক্ষন না করায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে মুক্তিযুদ্ধের এ নিদর্শন। শুধু তাই নয়, অযতœ অবহেলা ও রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে সময়ের আবর্তে ইতিহাস থেকে মুছে যেতে বসেছে।

এভাব চলতে থাকলে কালের বিবর্তনে আগামী প্রজন্ম জানতেও পারবেনা এই সেই জায়গা- যেখানে লুকিয়ে আছে মহান স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তে রাঙ্গানো বিন¤্র শ্রদ্ধা জানানোর ইতিহাস। সংগত কারনে এলাকাবাসীর প্রশ্ন হয়ে দাড়িয়েছে- এ উপজেলায় প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহন করা হলেও মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক এ নিদর্শন চিরন্তন করে ধরে রাখার জন্য কোন প্রকল্প গ্রহন করা হয়না।। যা শুধু বেদনাদায়ক না, স্পর্শকাতরও।

Pop Ads

অনুসন্ধানে জানাযায়, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে শাজাহানপুর উপজেলার আড়িয়া বাজারে ছিল পাকিস্তানী সেনাক্যাম্প। এখান থেকে পাকিস্তানী সেনারা এ অঞ্চলের নিরীহ জনগনের উপর ঝাপিয়ে পড়েছিল। যুদ্ধ করেছিল। এসময় এখানকার স্থানীয় স্বাধীনতাকামী কিছু যুবক সংঘবদ্ধ হয়ে রাতের আধারে আক্রমন চালায় এ সেনা ছাউনিতে। এরপর তারা পাকিস্তানী সেনাদের হত্যা করে ছাউনিটি দখল ও তাদের অস্ত্র গোলাবারুদ নিয়ে দৃঢ প্রত্যয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। ক্যাম্পটি পরিনত হয় মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে এবং এখান থেকে সরবরাহ করা হতো রশদ। তবে পাকিস্তানী এ সেনা ক্যাম্পিিট দখল করতে অপারেশনে নেতৃত্ব দানকারী বগুড়ার কৃতি সন্তান টিএইচ খানের ছেলে মাসুদ সহ এখানে শহীদ হয় বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা।

তাদের স্মরনে ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা সেই সময়েই সেখানে নির্মান করেছিল শহীদ মিনার এবং স্থানীয় জনতা স্থানটির নামকরণ করেন “মাসুদ নগর”। নাম ফলক “মাসুদ নগর”, স্মৃতি স্তম্ভ, সেনা ক্যাম্প ও ট্রেনিং গ্রাউন্ড কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল বছরের পর বছর। স্থানটি দেখলেই স্মরণ করিয়ে দিত ৭১ এর ভয়াবহ দিনগুলোর কথা। এখন সেনা ক্যাম্পটির একটি ভবন প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। গোলা বারুদ রাখার অপর ভবনটির দেয়াল, ছাদ ও দরজা-জানালা খসে ও ধসে পড়ছে। হয়ে আছে ভুতুরে ঘড়। আর শহীদ মিনারটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ভবনটির চারপাশে গড়ে উঠেছে বাসা-বাড়ী। আর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষনে কর্তাদের সীমাহীন অবহেলা ও উদাসীনতার সুযোগে টাউটরা ইতিমধ্যে ভুমিও দখল করে নিয়েছে।

এমনি ভাবে যুগের পর যুগ এসব স্মৃতি বিজড়িত সেনা ক্যাম্প ভবন ও শহীদ মিনার সংরক্ষন না করায় কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের এই চিরন্তন নিদর্শন। এ অবস্থায় স্থানীয় বয়োবৃদ্ধরা চিরবিদায় নিলে ভুলে যাবে আগামী প্রজন্মও। এমনিভাবে মুছে যেতে বসেছে এ ইতিহাস ও ঐতিহ্য। তবে নব প্রজন্ম ইতিহাস ভুলে যেতে বসলেও আজও স্থানটি ঐতিহাসিক আড়িয়া বাজার হিসেবে পরিচিত। পরিচিতি পায়নি মাসুদ নগর হিসেবে।

এ প্রসংগে আড়িয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান তছলিম উদ্দিন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষনে এমন অবহেলা সত্যিই দুঃখজনক। আর স্থানীয়রা বলেন, স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে শহীদদের ফুল দিয়ে স্মরণ করলেও তাদের স্মৃতি সংরক্ষন করাটাও দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাই প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষার্থে স্থানটি সংরক্ষনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করবে এমন প্রত্যাশা সকলের।