আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে দেশব্যাপী করোনার টিকাদান কর্মূসচি

আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে দেশব্যাপী করোনার টিকাদান কর্মূসচি

সুপ্রভাত বগুড়া (জাতীয়): আগামীকাল রবিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হচ্ছে দেশব্যাপী টিকাদান কর্মূসচি। এরই মধ্যে প্রায় সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, শনিবার সকাল পর্যন্ত দুই লাখ ৯৬ হাজার জন করোনার টিকার জন্য নিবন্ধন করেছে।

তিনি জানান, ঢাকায় ৪৩টি হাসপাতালে করোনার টিকা কেন্দ্র করা হয়েছে। কোন ধরনের গুজবে কান না দিয়ে সবাইকে টিকা কার্যক্রমে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক। গত ২৭ জানুয়ারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে একজন নার্সসহ ২৪ জন সম্মুখসারির যোদ্ধাকে টিকা প্রয়োগের মাধ্যমে দেশের প্রথম করোনার টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

Pop Ads

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় ঢাকা থেকে ৬৪টি জেলার ইপিআই স্টোরে টিকা পাঠানো হয়েছে। জেলা থেকে টিকা যাবে। ৪৮৩টি উপজেলা ইপিআই স্টোরে। ইপিআই স্টোরের আইএলআরে (হিমায়িত বাক্সে টিকা রাখার ব্যবস্থা) এসব টিকা রাখা হচ্ছে। সেখান থেকে কোল্ড বক্সে করে নেওয়া হবে টিকাদান কেন্দ্রে।

মাঠ পর্যায়ের প্রস্তুতি :স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমএনসিএএইচ সূত্র জানিয়েছে জেলা থেকে উপজেলায় টিকা পাঠানোর জন্য কয়েক হাজার বক্স মজুদ রাখা হয়েছে। আর জাতীয়ভাবে কোভিড-১৯ টিকা বিতরণ ও প্রস্তুতির পরিকল্পনা অনুযায়ী, সারাদেশে ৬ হাজার ৯৯০টি বুথে ৭ হাজার ৩৪৪টি প্রশিক্ষিত টিম টিকাদান কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবেন। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত টিকাদান কর্মসূচি চলবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ৪ হাজার ৬শটি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, ৬শটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স এবং ২০ ও ১০ শয্যার হাসপাতালে কেন্দ্র হবে।

এছাড়া জেলা সদর হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ (সরকারি- বেসরকারি) সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে কেন্দ্র হবে। সিটি করপোরেশন এলাকার বিশেষায়িত হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়, নগর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে টিকাদান কেন্দ্র থাকবে। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, পুলিশ হাসপাতাল, সচিবালয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং সংসদ সচিবালয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র মিলিয়ে টিকাদান কেন্দ্র হবে।

তবে শুরুতে শুধু বিভিন্ন হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের টিকাদান কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হবে। টিকা দেওয়ার কাজটি করবেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল টেকনোলজিস্টসহ অন্য কর্মীরা। এদিকে গত বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, কতজন টিকা নেবেন, সেই সংখ্যা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ টিকাদান কর্মসূচির প্রথম মাসে অনলাইনে রেজিস্ট্রশনে তেমন প্রতিক্রিয়া না পাওয়ায় সরকার ৬০ লাখের পরিবর্তে ৩৫ লাখ মানুষকে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আমরা বছরব্যাপী যত টিকা পাব, সবই দেশের মানুষকে দিতে থাকব। স্বাস্থ্যমন্ত্রী দাবি করেন, অনেক দেশ না পারলেও বাংলাদেশ ইতোমধ্যে টিকা নিয়ে এসেছে। এরই মধ্যে আনা টিকা সব জেলায় পৌঁছে গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ, অর্থাৎ ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০৮ জন মানুষকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

জাতীয়ভাবে কোভিড-১৯ টিকা বিতরণ ও প্রস্তুতির পরিকল্পনা অনুযায়ী, তিন ভাগে (ফেইজ) মোট পাঁচ ধাপে এসব টিকা দেওয়া হবে। কোভিড-১৯ মহামারি প্রতিরোধে সামনের কাতারে থাকা মানুষ প্রাধান্য পাবেন। এদিকে শুক্রবার বিকাল ৫টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত ৯ দিনে ২ লাখ ৬০ হাজার ৪৩৬ জন টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন বলে আইসিটি বিভাগ সূত্র বলছে। তবে সুরক্ষা অ্যাপসটি এখনো চালু হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের বেশির ভাগ মানুষ করোনার টিকা নিতে আগ্রহী।

তবে বড় অংশ এখনই নয়, কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস অপেক্ষার পর টিকা নিতে চায়। করোনার টিকা নিয়ে মানুষের এই মনোভাব উঠে এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের এক জরিপে। এতে বলা হয়, ৮৪ শতাংশ মানুষ টিকা নেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। এখনই পেলে টিকা নেবেন ৩২ শতাংশ, অপেক্ষার পর নিতে চান ৫২ শতাংশ, আর কখনোই টিকা নেবেন না ১৬ শতাংশ মানুষ।