আজ কেন ভর্তা খাবেন

5
আজ কেন ভর্তা খাবেন

ঈদের কয়েকটা দিন তো জম্পেশ খাওয়াদাওয়া হলো। আজ না হয় ভাত আর ভর্তা খাওয়া যাক।
পয়লা বৈশাখ মানেই তো বাঙালি খাবারদাবারের আয়োজন। তা চারটা-পাঁচটা বাঙালি খাবারের মধ্যে অন্তত একটা ভর্তা তো থাকবেই। একাধিকও থাকতে পারে। আবার অন্য কোনো পদ না থাকলেও কেবল একটি বা দুটি সুস্বাদু ভর্তা দিয়েই তৃপ্তি করে খেয়ে ওঠা যায়। কয়েকটা দিন ঈদের বাহারি পদ খাওয়ার পর আজ ভর্তা-ভাতেই হতে পারে দারুণ স্বাদবদল। ধোঁয়া ওঠা গরম ভাত আর ভর্তা, সঙ্গে একটু আচার। আহ! জমে যাবে একদম।

বাঙালি কিসের না ভর্তা করে বলুন! সবজি, ডাল, ডিম, মাছ, চিংড়ি, এমনকি মাংস দিয়ে পর্যন্ত ভর্তা হতে পারে। বাদ যায় না সবজির খোসাও। কালিজিরার ভর্তাও খান অনেকে। নানা রকম পাতাও হতে পারে ভর্তার উপকরণ। কাঁচা আমের ভর্তার নাম শুনলে জিবে জল আসে! কাঁচা মরিচ, শুকনা মরিচ, বোম্বাই মরিচ বা নাগা মরিচ যোগ করলেও বাড়ে ভর্তার স্বাদ। এমনকি কেবল মরিচ দিয়েও হতে পারে ভয়ানক ঝাল ভর্তা। ভর্তা কিন্তু বেশ স্বাস্থ্যকর খাবারও বটে। গরমের দিনে আরামের খাবার হতে পারে ভর্তা। উপকরণের বৈচিত্র্যে স্বাদও পাবেন ষোলো আনা। শুঁটকির ভর্তাই যেমন স্বাদে অনন্য। টাকি মাছের ভর্তা আর টমেটো ভর্তাও জনপ্রিয়। মাওয়াঘাটের ইলিশের লেজের ভর্তাও তো দারুণ!

Pop Ads

ভর্তার পুষ্টি
ভর্তা কিন্তু বেশ পুষ্টিকর খাবার। পছন্দসই কোনো সবজির ভর্তা করতে পারেন আজ, তাতে মিলবে সবজির পুষ্টি। ডাল, ডিম, মাছ কিংবা মাংস যদি দেওয়া হয় ভর্তায়, তাহলে পেয়ে যাবেন বেশ খানিকটা প্রোটিনও। ভাজাপোড়া খাবারের চেয়ে ভর্তা স্বাস্থ্যকর। অনেক সময় ভর্তায় শর্ষের তেল ব্যবহার করা হয়। শর্ষের তেলের ঝাঁজ আর ঘ্রাণে খাবার টেবিলের পরিবেশটাই যেন বদলে যায়। যথার্থ পরিমাণে শর্ষের তেল দেওয়া খাবার খাওয়া মন্দও নয়। কাঁচা আম এবং কালিজিরাও উপকারী উপাদান। তা ছাড়া সবজির খোসায় এবং অনেক সবজিতে প্রচুর আঁশ থাকে। এই আঁশ যে কেবল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে তা নয়, আঁশসমৃদ্ধ খাবার খেলে রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রাও থাকে নিয়ন্ত্রণে। নানা উপকরণের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে এমনটাই জানালেন রাজধানীর গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্সের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শম্পা শারমিন খান।

ঐতিহ্যে ভর্তা
ভর্তায় পাবেন বাঙালিয়ানার পরশ। কেবল ভাতের সঙ্গেই নয়, রুটি কিংবা পিঠার সঙ্গেও ভর্তা খাওয়ার চল আছে। চিতই পিঠার সঙ্গে নানা রকম ভর্তা খাওয়া হয়। শীতের দিনে শহুরে পথের ধারে আয়েশ করে চিতই পিঠা আর ভর্তা খাওয়ার দৃশ্য আমাদের অনেকেরই খুব চেনা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী মাষকলাইয়ের ডাল দিয়ে বানানো রুটির সঙ্গেও বেগুনভর্তা আর ধনেপাতার চাটনি খাওয়া হয়।

‘ভর্তা প্ল্যাটার’ বাড়িতে-রেস্তোরাঁয়
শখ করে ভর্তা খাওয়া হয় শহুরে রেস্তোরাঁতেও। রেস্তোরাঁর আয়োজনে থাকে ভর্তার বাহারি পদ। আজ আপনার বাড়িতেও হতে পারে এমন ‘ভর্তা প্ল্যাটার’। ঝাল ও ঝাঁজযুক্ত খাবার হিসেবেই ভর্তা বহুল প্রচলিত। তবে খুব গরম আবহাওয়ায় অতিরিক্ত ঝাল খাবার খেতে বারণ করা হয়। তাই ভর্তার আয়োজন করলে মাথায় সেটিও রাখুন। তা ছাড়া শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিরও সমস্যা হতে পারে অতিরিক্ত ঝালে। তাই বাড়িতে নানা ধাঁচের, নানা স্বাদের ভর্তা করতে পারেন সবার কথা ভেবে। আজ তো বটেই, সামনের গরমের দিনগুলোতেও খাবার তালিকায় রাখতে পারেন ভর্তা-ভাত। সঙ্গে থাকতে পারে কাঁচা সালাদ আর এক টুকরা লেবু।