আমার আবেগ কাজ করেছিল তখন : এমপি বাহার

9
আমার আবেগ কাজ করেছিল তখন : এমপি বাহার

বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের হাত-পা ভেঙে গুঁড়া করে দেয়ার কথা আবেগের বসে বলেছিলেন বলে দাবি করেছেন কুমিল্লা-৬ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ দাবি করেন।

নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়; প্রকাশ্যে এমন কথা বলার পর আপনাকে নির্বাচন কমিশন থেকে শোকজ করা হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের হাত-পা গুঁড়া করে দেবো বলে বলেছেন। একজন প্রার্থী হিসেবে আপনি কি এমন কথা বলতে পারেন? জানতে চাইলে বাহার বলেন, ‘যেদিন আমি বক্তৃতা করি, তার ঠিক আগের দিন একজন রিকশাওয়ালা মারা গেছেন। পত্রিকায় আমি এভাবে পেয়েছিলাম, একজন রিকশাওয়ালা তার সন্তানদের লেখাপড়া করান। তিনি সেদিন একটি গ্যারেজে ঘুমিয়েছিলেন। সেখানে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। কারণ তারা (বিএনপি) নির্বাচন প্রতিহত করতে চায়। অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর দুদিন হাসপাতালে কষ্ট পেয়ে মারা যান ওই রিকশাওয়ালা।’

Pop Ads

ক্ষমতাসীন দলের এই সংসদ সদস্য বলেন,
ট্রেনের চারটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। একজন নারী ও একটি শিশু মারা গেছে। এগুলো আমাকে মানসিকভাবে যন্ত্রণা দিয়েছে। যারা নির্বাচন প্রতিহত করতে চায়, তাদের বিষয়ে বলেছিলাম। তারা তো প্রতিহতের নামে মানুষ হত্যায় লিপ্ত। ২০১৪ সালে তারা চার থেকে পাঁচশত ভোটকেন্দ্র জ্বালিয়ে দিয়েছিল। যাতে ওই কাজগুলো তারা না করতে পারে, সেজন্য মানসিক জোর বাড়াতে এমন কথা বলেছি।

তিনি আরও বলেন, ‘এটা আমার রাজনৈতিক বক্তৃতা ছিল। যদি নির্বাচনের আচরণের ভেতরে না পড়তাম, তাহলে এটি নিয়ে কোনো প্রশ্ন ছিল না। কিন্তু আমি এত বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিলাম, মনে হয়েছে কীসের রাজনীতি আমরা করি, মানুষ হত্যার রাজনীতি করি? আমরা তো প্রোগ্রাম করি, আমরা তো মানুষ হত্যার রাজনীতি করি না।’

‘আমি তো মুক্তিযোদ্ধা। আমি একটি থানা দখল করেছিলাম। ৫২টি মেয়েকে সেখান থেকে উদ্ধার করেছি। তখনই উপলব্ধি করতাম, কখন দেশ স্বাধীন হবে, আর আমাদের মেয়েরা নিরাপত্তা পাবেন। আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পর আমাদের মেয়েরা নিরাপদ না। ট্রেনে উঠলে সেই ট্রেনের বগিতে আগুন লাগিয়ে দেয়, শিশুসহ মারা যান,’ যোগ করেন বাহাউদ্দিন বাহার।

তিনি বলেন, ‘যদি আবেগ না থাকত, তাহলে এই কথা আমি বলতাম না। অন্য সময় এটা বলা যেত, কারণ তাহলে নির্বাচনী আচরণবিধির মধ্যে পড়ত না।’

আপনার আসনে একজন সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমন প্রশ্নে তিনি বলেন,
৭১ টিভির কুমিল্লা প্রতিনিধি নিরপেক্ষ না থেকে আমার বিপক্ষে খণ্ডিত নিউজ দিচ্ছে। আমি তাকে বলেছিলাম, দয়া করে আমার নিউজ দেয়া লাগবে না আপনার। এটা কি বলা অপরাধ হয়ে গেছে? খণ্ডিত নিউজ দিয়ে আমাকে বিব্রত করবেন না, এটা বলার অধিকার আমার নেই?

একাধিকবার শোকজ করা হয়েছে আপনাকে। বারবার কেন আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি আচরণবিধি লঙ্ঘন করছি না। আমাকে যেই চিঠি দেয়া হয়েছে, সেই চিঠি আচরণবিধিতে চলে না। আমাকে কী সাজা দেয়া হবে, সেটা জানতে এসেছিলাম। সেই ব্যাখ্যা জানতে এসেছিলাম। কারণ আমি তো আইনজীবী না।’

এতদিন যা বলেছেন, তা আচরণবিধি লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে না? প্রশ্নে তিনি বলেন,
ওই একটা জায়গায় হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত এসে যদি আবার ভোটকেন্দ্র দখল করে। আগুন লাগাতে চায়, তাদেরকে ধরবেন, ভেঙে দেবেন। এটা আমার আবেগ থেকে বলা।

প্রসঙ্গত, ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর এক উঠান বৈঠকে এমপি বাহার বলেন, ‘আগামী ৭ জানুয়ারি ভোট। বিএনপি নির্বাচনে হেরে যাবে বলে নির্বাচনে আসেনি। কোনো বিএনপি-জামায়াতের কর্মীকে কোনো প্রার্থীর পক্ষে পাওয়া গেলে তার হাত-ঠ্যাং (পা) ভেঙে দেবেন আপনারা। আমি আপনাদের সঙ্গে আছি। কোনো ভয়ের কারণ নেই। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে যাবে কুমিল্লার মানুষ।’

বিএনপি-জামায়াতের কোনো কর্মীকে নির্বাচনে কোনো প্রার্থীর পক্ষে পাওয়া গেলে তাদের হাত-পা ভেঙে দেয়ার নির্দেশ দেয়া এবং আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সভা করার অভিযোগে বাহারকে ১৯ ডিসেম্বর দুইটি শোকজ করা হয়।