ওমিক্রনের বিষয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

ওমিক্রনের বিষয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের বিষয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, তবে এটি মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সংস্থাটির শীর্ষ বিজ্ঞানী সৌম্য সোয়ামীনাথন শুক্রবার এক সম্মেলনে বলেছেন, এখনকার পরিস্থিতি এক বছর আগের চেয়ে একেবারেই ভিন্ন। খবরে বলা হচ্ছে বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশে অমিক্রন পাওয়া গেছে।

নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট অনেক বেশি পরিবর্তিত হলেও এটি আগেরগুলোর চেয়ে বেশি সংক্রমণশীল এবং কোভিড টিকাকে ফাঁকি দিতে পারে কি না – এসব বিষয়ে এখনও পরিষ্কার হওয়া যায় নি। এই ভাইরাসটি দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত করা হয়। দেশটির বিজ্ঞানীরা এর পরই এই ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপারে বিশ্বকে সতর্ক করে দেন।

Pop Ads

‘আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই’
প্রাথমিক বিশ্লেষণে বলা হয় – কোভিড-১৯ প্রতিরোধে মানবদেহের যে ক্ষমতা, নতুন এই অমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট তাকে হয়তো অকার্যকর করে দিতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা একথাও উল্লেখ করেছিলেন যে এই বিশ্লেষণের ব্যাপারে তারা নিশ্চিত নন।

ড. সোয়ামীনাথন দক্ষিণ আফ্রিকার তথ্য বিশ্লেষণ তুলে ধরে বলেন এই ভ্যারিয়েন্ট “অতি সংক্রমণশীল” এবং সারা বিশ্বে এই ভ্যারিয়েন্ট প্রাধান্য বিস্তার করতে পারে- যদিও এসব আগে থেকে ধারণা করা কঠিন। তিনি বলেন, সারা বিশ্বে বর্তমানে যেসব সংক্রমণ ঘটছে তার ৯৯%-জন্য দায়ী ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট।

“আমাদের কতোটা উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত? আমাদের প্রস্তুত ও সতর্ক থাকা প্রয়োজন, আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার কারণ নেই। কারণ আমরা এখন এক বছর আগের চেয়ে ভিন্ন অবস্থানে আছি,” বলেন তিনি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি কার্যক্রমের পরিচালক মাইক রায়ান বলেছেন, কোভিড-১৯ মোকাবেলায় বর্তমানে যেসব টিকা রয়েছে সেগুলো “অত্যন্ত কার্যকর” এবং এখন আমাদের সারা বিশ্বে আরো বিস্তৃতভাবে টিকা সরবরাহ করার ব্যাপারে মনোযোগ দিতে হবে।

নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের কারণে এসব টিকাতে পরিবর্তন ঘটাতে হবে – এমন ধারণার পক্ষে কোনো তথ্য প্রমাণ নেই। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট মোকাবেলায় বিশ্বের অনেক দেশ ইতোমধ্যে আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলীয় কয়েকটি দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা সব আন্তর্জাতিক যাত্রীদের সেদেশে প্রবেশের ক্ষেত্রে ভ্রমণের আগের একদিনের মধ্যে কোভিড টেস্ট বাধ্যতামূলক করেছে। নতুন ভ্যারিয়েন্ট মোকাবেলায় ভ্রমণের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছে।

এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের ছ’টি রাজ্যে ওমিক্রনের সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়েছে। সংক্রমণের অন্তত দুটো ঘটনা ঘটেছে ভারতেও। ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের একজন দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিক যিনি সেদেশ থেকে ভারতে এসেছিলেন এবং ইতোমধ্যে ভারত ছেড়ে চলেও গেছেন। আরেকজন দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর বেঙ্গালুরুর একজন ডাক্তার। তিনি কোথাও গিয়েছিলেন কি না সেবিষয়ে কোনো তথ্য নেই।

নতুন ভ্যারিয়েন্ট আসার সাথে সাথে ইউরোপের দেশগুলোতেও সংক্রমণ বেড়ে গেছে। জার্মানিতে যারা এখনও টিকা নেয়নি তাদের চলাচলের ওপরে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। যারা টিকা নিয়েছেন কিম্বা কোভিড থেকে সম্প্রতি সেরে উঠেছেন শুধুমাত্র তারাই রেস্তোরাঁ, সিনেমা এবং অনেক দোকানপাটে যেতে পারবেন।

জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেল বলেছেন, টিকা নেওয়াকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে বাধ্যতামূলক করা হতে পারে। প্রতিবেশি দেশ অস্ট্রিয়াতে ১লা ফেব্রুয়ারি থেকে টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডসেও ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বুস্টার টিকা দেওয়ার গতি আরো দ্রুত করার ওপর জোর দিচ্ছেন। তারা বলছেন, জানুয়ারি মাসের মধ্যেই প্রাপ্তবয়স্ক সবাইকে বুস্টার টিকা দেওয়া হবে। সূত্র: বিবিসি