চালের দাম কমাতে চার দিন সময় দিলেন খাদ্যমন্ত্রী

6
চালের দাম কমাতে চার দিন সময় দিলেন খাদ্যমন্ত্রী

নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের পরপরই চালের দাম বেড়েছে কেজিতে পাঁচ থেকে আট টাকা পর্যন্ত। সেই সঙ্গে প্রতিটি সবজির দাম বেড়েছে। বেড়েছে মাছ-মাংসের দামও। এ অবস্থায় ধান-চালের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধে বড় হুঁশিয়ারি দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।

চার দিনের মধ্যে চালের দাম কমিয়ে আগের অবস্থায় না আনলে মজুদকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

Pop Ads

গতকাল বুধবার খাদ্য অধিদপ্তরের সম্মেলনকক্ষে ধান-চালের বাজার ঊর্ধ্বগতির রোধকল্পে মতবিনিময়সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ হুঁশিয়ারি দেন খাদ্যমন্ত্রী। মতবিনিময়সভার পর খাদ্যমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করেন।

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, যাঁরা চার দিনের মধ্যে লাফিয়ে লাফিয়ে চালের দাম বাড়িয়েছেন, তাঁরা আবার চার দিনের ব্যবধানে আগের জায়গায় নিয়ে আসবেন।

তিনি বলেন, ভরা মৌসুমে আমন চালের দাম বাড়বে, এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়িয়েছেন, এখন সেভাবেই কমাতে হবে। মিলগেটে দুই টাকা দাম বাড়লে, পাইকারি বাজারে ছয় টাকা কেন বাড়বে প্রশ্ন রেখে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, অবৈধ মজুদকারী কিংবা অহেতুক দাম বাড়িয়ে দেওয়া ব্যবসায়ী—কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। সবাইকে জবাবদিহি করতে হবে।

বিনা লাইসেন্সে যারা ধানের স্টক করছে, তারা কোনোভাবেই ছাড় পাবে না।
মন্ত্রী বলেন, প্রস্তুত করা চাল বাজারে ছাড়তে হবে। সংকট তৈরি করা যাবে না। প্রচুর ধান আছে। সরবরাহের ঘাটতি নেই।

এ সময় আরসি ফুড ও ডিসি ফুডদের ফুড গ্রেইন লাইসেন্সবিহীন মজুদদারি বন্ধ করতে ও লাইসেন্স নবায়ন করার জন্য নির্দেশনা দেন সাধন মজুমদার।
নিজের বাড়ি থেকেই অভিযান শুরু বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। তিনি অবৈধ আড়তদারদের উদ্দেশে বলেন, ‘যারা হাজার হাজার মণ ধান আড়তদারির নাম করে বিনা লাইসেন্সে স্টক করছে, তাদের ছাড় দেওয়ার কোনো উপায় নেই। আপনি মিল মালিক হলেও যদি আপনার কাছে ধান মজুদ থাকে তাহলে আপনাকেও ছাড় দেওয়ার কোনো উপায় নেই। আমার বাবা হলেও উপায় নেই।’

মন্ত্রী নিজের বাড়ি থেকেই এ কার্যক্রম শুরু করেছেন উল্লেখ করে বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকায় এ বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী অপারেশনে আছে। ব্যাবসায়িক সূত্র বা ইকোনমিকস থিওরিতে বলে, যখন চাহিদা বেশি হয় তখন দাম বাড়ে, সরবরাহ কমে গেলে দাম বাড়ে।’

প্রয়োজনে সরকারিভাবে আমদানি করা হবে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই মুহূর্তে সরবরাহ কমের কোনো অবস্থা দেখছি না। প্রচুর ধান আছে। সরবরাহ যাতে না কমে যায় তার জন্য আমরা এরই মধ্যে ট্যাক্স ফ্রি করে দিয়ে আমদানি করার চেষ্টা করছি, আমাদের ফাইল প্রসেসে আছে। হয়তো আমরা এটা দুই-চার-পাঁচ দিনের মধ্যে ফাইনাল করব।’

ব্যবসায়ী ও মিল মালিকদের প্রতিক্রিয়া

বৈঠকে নওগাঁ ধান-চাল মালিক সমিতির নিরোদ বরণ সাহা চন্দন বলেন, মোটা চালের দাম বাড়েনি। সরু ও মোটা চালের দাম এক নয়। মোটা চালের দাম দুই-তিন টাকা বেড়েছে। গত ইরি মৌসুমের জিরাশাইল চালের দাম পাঁচ-ছয় টাকা বেড়েছে। যেভাবে ঢালাওভাবে মিলারদের দায়ী করা হচ্ছে, তা ঠিক নয়। করপোরেট কম্পানিগুলো ধান-চালের বাজারকে অস্বাভাবিকভাবে বাড়াচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

দিনাজপুরের ব্যবসায়ী সমিতির হান্নান বলেন, সরকারিভাবে একই সঙ্গে সব জেলা থেকে প্রকিউরমেন্ট করায় মোটা ধানের সংকট হয়। নির্বাচনের কারণে সবাই ব্যস্ত ছিলেন, ছাঁটাই ও বাজারজাত কম হয়েছে। এরই মধ্যে ধানের দাম ও চালের দাম কমতে শুরু করেছে। মনিটরিং বাড়ালে দাম আরো কমবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশ অটো মেজর হাসকিং মিল মালিক সমিতির সেক্রেটারি এইচ আর খান পাঠান সাকি বলেন, ‘সুস্থ প্রতিযোগিতামূলক বাজার প্রত্যাশা করি আমরা। চালের বাজার বাড়লে ছোট মিল মালিকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’

প্রাণ গ্রুপের পরিচালক কামরুজ্জামান বলেন, বাজার বাড়তি থাকায় তাঁরা ধান কিনছেন না।

এসিআইয়ের রুবেল বলেন, এ বছর নন-প্রফেশনাল লাইসেন্সবিহীন লোক ধান কিনছে। তারা অবৈধ মজুদ করে বাজার অস্থির করছে।

বাংলাদেশ অটো মেজর হাসকিং মিল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রশিদ বলেন, মিলারদের প্রতিযোগিতা করে ব্যবসা করতে হয়। সিন্ডিকেটের কোনো সুযোগ নেই।

খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেনের সভাপতিত্বে মতবিনিময়সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেন, এফপিএমইউয়ের মহাপরিচালক মো. শহিদুল আলম, খাদ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুনসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা।