চলছে কৃষির রূপান্তর। সব ধরনের কৃষিতে লাভ সমান নয়। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে ন্যূনতম লাভ বা ক্ষতির ঝুঁকি আছে। কৃষকরা তাই যে ফসল, সবজি বা ফলে লাভ বেশি, সেদিকেই ঝুঁকছেন।
এ কারণে নিত্যনতুন বিচিত্র ফসল কিংবা বিদেশি ফল চাষের দৃশ্য এখন গোটা দেশেই। টাঙ্গাইলের সখিপুরের ইন্দারজানি গ্রামের সিদ্দিক হোসেনের গল্পটি একটি ব্যতিক্রম। তিনি উচ্চমূল্যের বিদেশি ফল নয়, আপাতদৃষ্টিতে কম আকর্ষণীয় দেশি ফল টক বরইয়ের বাণিজ্যিক চাষ করছেন। নারীসহ বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষের কাছে ফলটির জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে একে লাভজনক কৃষিপণ্য হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
সিদ্দিক হোসেনের টক বরইয়ের ফলন দেখতে একদিন ইন্দারজানি গ্রামে তাঁর বাগানে যাই। সারি সারি বড় বড় গাছে ঝুলছিল পাকা বরই। দুপুরের রোদ পড়ে বরইগুলো চিকচিক করছে। সিদ্দিকের বাগানটির বয়স ১৫ বছর।
একদল নারী কর্মী বরই পাড়ছিলেন। শখ করে তাঁদের সঙ্গে যোগ দিলাম আমিও। মনে পড়ল শৈশবে গ্রামের বাড়িতে বরই পাড়ার স্মৃতি। সিদ্দিক হোসেন ২০০টি দেশি বরইগাছ দিয়ে শুরু করেছিলেন। এখন তাঁর ৮১ বিঘার টক বরই বাগানে নানা আকারের চার হাজার গাছ।
এত কিছু থাকতে টক বরই চাষের চিন্তা এলো কেন মাথায়—সে প্রশ্নের জবাবে সিদ্দিক বললেন, অনেক ভেবেচিন্তে খোঁজ করে এ পথে এসেছেন। বাজারে বাজারে ঘুরে বুঝতে চেষ্টা করেছেন কোন ফলের চাহিদা বেশি কিন্তু জোগান কম। দেখেছেন, দেশি টক বরই, বিশেষ করে মেয়েদের খুব পছন্দের। সে তুলনায় বাজারে কম পাওয়া যায়।
সময়, চাহিদা ও বাজারের কথা মাথায় রেখে যাঁরা কৃষি অনুশীলন করেন, তাঁরা সফল হন। সিদ্দিক হোসেন তাঁদেরই একজন। তাঁর হাতে গ্রামীণ নারীসহ বহু মানুষের কর্মসংস্থানও হয়েছে।
বাগান থেকে গেলাম সিদ্দিক হোসেনের বাড়ির উঠানে। সেখানে একদল নারী বিশেষ কৌশলে বরইয়ের গ্রেডিং করছেন। বিভিন্ন আকারের ফুটোর চালুনির ওপর বরই ঢালা হচ্ছে। প্রথমে ছোট বরইগুলো পৃথক হয়ে যাচ্ছে। এরপর মাঝারি সাইজের। বড়টা এসে জমা হচ্ছে আলাদাভাবে। এরপর নিজস্ব ব্র্যান্ডের বস্তায় ভরে পাঠানো হচ্ছে বাজারে।
ফলের মৌসুম শেষ হলেও সিদ্দিক হোসেন থেমে থাকেন না। এখন তাঁর স্বপ্ন বরই নিয়ে আরো কিছু করে এর মূল্য সংযোজন করার। সিদ্দিক হোসেনের মতো উদ্যমী উদ্যোক্তাদের হাতেই রচিত হচ্ছে আমাদের আগামী কৃষি অর্থনীতির ভিত।