চিনির দাম আরও বাড়ল, সরবরাহ কম বাজারে

66
চিনির দাম আরও বাড়ল, সরবরাহ কম বাজারে

চলতি বছরে যে কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে, তার মধ্যে চিনি অন্যতম। পণ্যটির বাজার স্বাভাবিক রাখতে সরকার সম্প্রতি শুল্ক কমিয়ে অর্ধেকে নামিয়েছে। তবে চিনির দামের লাগাম টেনে ধরা যায়নি। গত এক সপ্তাহে খোলা চিনির কেজিতে আরও ৫ টাকা বেড়েছে। এমনকি বেশি দাম দিয়েও পাওয়া দুষ্কর হয়ে গেছে পণ্যটি। বাজারে বেশির ভাগ খুচরা দোকানে পাওয়া যাচ্ছে না চিনি।

খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, গত এক সপ্তাহে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চিনিতে ৪০০ টাকার বেশি দাম বেড়েছে। আর পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিল থেকে বাজারে চিনির সরবরাহ কমেছে। মিল থেকে এখন প্রতি কেজি ১৩৭ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। সে জন্য খুচরা বাজারে দাম বেড়েছে।

Pop Ads

অন্যদিকে আমদানিকারক ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, বিশ্ববাজারে আবারও দাম বেড়েছে চিনির। এ ছাড়া ডলারের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা তৈরি করছে গ্যাস সংকট। গত দুই-তিন দিন ধরে কারখানায় গ্যাসের চাপ কমে গেছে। সে জন্য চাহিদা মতো উৎপাদন করা যাচ্ছে না। এ কারণে বাজারে চিনির সরবরাহ কমছে।

সরকার ও চিনি বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যতবারই চিনির দর নির্ধারণ করে দিয়েছে, তা একবারও কার্যকর হয়নি। প্রায় আড়াই মাস আগে খোলা চিনির কেজি ১৩০ এবং প্যাকেটজাত চিনির কেজি ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বাজারে বিক্রি হচ্ছে এর চেয়ে বেশি দামে।

গতকাল বুধবার রাজধানীর মালিবাগ, হাতিরপুল ও কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, খুচরা পর্যায়ে খোলা চিনির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা দরে। প্যাকেট চিনির গায়ে মূল্য লেখা ১৩৫ টাকা। দোকানিরা অপরিচিত ক্রেতাদের কাছে প্যাকেট চিনি বিক্রি করছেন না। পরিচিতদের কাছে ১৪০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। গত বুধবার চিনির কেজি বিক্রি হয় ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়।

দাম বাড়ার সঙ্গে চিনির সরবরাহ সংকটও কিছুটা আছে বলে জানান খুচরা ব্যবসায়ীরা। সরেজমিন দেখা গেছে, ছয়-সাত দোকানে খুঁজলে পাওয়া যাচ্ছে এক দোকানে।
ঢাকার কারওয়ান বাজার ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বড় পাইকারি বাজার। গতকাল দুপুরে ইস্কাটন রোড থেকে কারওয়ান বাজারে চিনি কিনতে এসে বেশ বিরক্ত হলেন রনি তালুকদার নামের এক ক্রেতা। কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেটের আটটি দোকানে খোঁজার পর একটি দোকানে চিনি পেয়েছেন তিনি। ১৪৫ টাকা দরে দুই কেজি চিনি কেনার পর সমকালকে এই ক্রেতা বলেন, ‘পাঁচ দিন আগে ১৩৫ টাকায় কিনেছি। আজ কেজিতে ১০ টাকা বেশি নিল। ভাউচার চাইলাম; কিন্তু দোকানদার দিল না।’

গত বুধবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রতি টন অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে শুল্ক ৩ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে দেড় হাজার টাকা এবং পরিশোধিত চিনি আমদানিতে শুল্ক ৬ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৩ হাজার টাকা করেছে। ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত এই শুল্কহার বলবৎ থাকবে। দাম যেন ক্রেতার নাগালে থাকে, সে জন্যই শুল্ক কমিয়েছে সরকার। তবে শুল্ক কমানোর ঘোষণার দিন বাজারে খোলা চিনির দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছিল। গত দুই দিনে কেজিতে আরও ৫ টাকা বাড়ল।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, চিনির খুচরা দাম গত এক মাসের ব্যবধানে ৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেড়েছে। এক বছরের ব্যবধানে এই হার আরও অনেক বেশি। এক বছরে চিনির দাম বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ।

দাম বৃদ্ধির বিষয়ে কারওয়ান বাজারের আল-মদিনা স্টোরের স্বত্বাধিকারী নুরে আলম সমকালকে বলেন, ‘গত বুধবার চিনির বস্তা (৫০ কেজি) ছিল ৬ হাজার ৪৫০ টাকা। আজ (বুধবার) কিনলাম ৭ হাজার টাকায়। এতে প্রতি কেজির দাম পড়ছে ১৪০ টাকা। এর সঙ্গে শ্রমিক খরচ আছে। ঘাটতিও আছে। সে জন্য ১৪৫ টাকার কমে বিক্রি করা যাচ্ছে না।’

জানতে চাইলে বাংলাদেশ পাইকারি চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি আবুল হাশেম সমকালকে বলেন, কোনো কোনো আমদানিকারকের কাছে চিনি নেই। যাদের আছে তারা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন মিলগেটে পাইকারি প্রতি কেজি কিনতে হচ্ছে ১৩৭ টাকা দিয়ে।

উৎপাদন কম হওয়ার কারণে বাজারে সরবরাহ কমছে বলে দাবি করেছেন আমদানিকারকরা। দেশে চিনির অন্যতম শীর্ষ বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র সহকারী ব্যবস্থাপক তাসলিম শাহরিয়ার বলেন, কারখানায় গ্যাসের চাপ কমে গেছে। সে জন্য উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। তাছাড়া মাঝে বিশ্ববাজারে দাম কমলেও এখন আবারও বেড়েছে। ডলারের দামও বেড়েছে অস্বাভাবিক। এলসি খোলার ক্ষেত্রেও জটিলতা আছে। এসব কারণে বাজারে সরবরাহ কিছুটা কম।