তাকওয়া মানুষকে পরিশুদ্ধ ও আলোকিত করে

তাকওয়া মানুষকে পরিশুদ্ধ ও আলোকিত করে। প্রতিকী-ছবি

আলহাজ্ব হাফেজ মাওঃ মুহাম্মদ আজিজুল হক

সুপ্রভাত বগুড়া (ধর্ম ও জীবন): ‘তাকওয়া’ আরবী শব্দটির একটি অর্থ ভয় করা। তাকওয়ার হক সম্পর্কে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন,তাকওয়ার হক হল,প্রত্যেক কাজে আল্লাহর আনুগত্য করা,আল্লাহকে সর্বদা স্মরণ রাখা এবং সবসময় তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা (বাহরে মুহীত)। আল্লাহ তায়ালা বলেন,হে মুমিনরা,তোমরা যথাযথ ভাবে আল্লাহকে ভয় করো এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না (সূরা-আল ইমরান,আয়াত-১০২)।

Pop Ads

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন,সমস্ত ধর্মীয় জ্ঞানের মূল হচ্ছে তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় (দায়লামী)। খোদাভীতি এমন একটি গুণ যা মানুষকে সব ধরনের অন্যায় ও অশ্লিলতা থেকে বিরত রাখে। মুত্তাকীর জন্য কোন আইনের প্রয়োজন হয় না,কোন পাহারাদারের দরকার পড়ে না,বরং তাকওয়াই তাকে সমস্ত মানবতা বিরোধী কাজ এবং সকল গোনাহ থেকে হেফাজত রাখে। হযরত উমর (রাঃ) বিরাট ইসলামী রাজ্যের খলিফা হওয়া সত্বেও নিজেকে রাজা-বাদশা মনে করতেন না, বরং জনসাধারণের সেবক মনে করতেন। তাই রাতে বেশ-পোশাক বদল করে নগরের অলিতে গলিতে ঘুরে বেড়াতেন। যাতে তিনি প্রজাদের দুঃখ-দুর্দশা নিজে দেখতে পান এবং নিজের কানে অভিযোগ শুনতে পান।

অতঃপর তিনি সেসবের সমাধান করতেন। এমনিভাবে এক রাতে ছদ্মবেশে শহরের পথে বের হলেন। হঠাৎ একটি বাড়ির ভেতরের কথাবার্তার আওয়াজ তাঁর কানে ভেসে এলো। বাড়ির নিকটে উপস্থিত হয়ে শুনতে পেলেন,মা তার মেয়েকে বলছে, রাত থাকতেই দুধে পানি মিশিয়ে নাও। দিনের বেলায় মানুষের সামনে মিশানো যাবে না। মেয়েটি বলল,আমি আপনার এ হুকুম মানতে পারিনা। মা বলল,না পরলে কেমন করে চলবে? এই সামান্য দুধ বিক্রি করে তো সংসার চালানো সম্ভব না। তাছাড়া পানি মেশালে সমস্যা কি? মেয়েটি বলল,খলিফা হুকুম দিয়েছেন,দুধে পানি মেশালে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে। খলিফার হুকুম অমান্য করে অপরাধী হতে পারি না। মা বলল,আমরা বাড়িতে রাতের অন্ধকারে পানি মিশালে খলিফা তো আর দেখতে পাবেন না। সুতরাং তিনি আমাদের শাস্তি দিবেন কেমন করে?

মেয়েটি এবার বলল,বাহ! খলিফা না দেখলে কি আল্লাহ দেখতে পাবেন না? আমি খলিফার চাইতে আল্লাহর শাস্তিকে বেশি ভয় করি। একথা বলে নিজের অটল সিদ্ধান্ত মাকে জানিয়ে দিল। মেয়েটির মনে যথার্থ আল্লাহর ভয় তথা তাকওয়া দেখে হযরত উমর (রাঃ) অতিশয় আনন্দিত হলেন। অর্ধ জাহানের খলিফা হওয়া সত্বেও উমর (রাঃ) সহায়-সম্বলহীন,এতিম সেই মেয়েটিকে নিজের ছেলে আসেম (রাঃ) এর সাথে বিয়ে দিলেন। সেই খোদাভীরু মেয়েটির ছেলের ছেলেই হলেন,মুসলিম দুনিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ট খলিফা হযরত উমর ইবনে আব্দুল আজিজ (রহঃ) (ইসলাহী খুতুবাত)। আরেকটি ঘটনা শুনুন,একবার হযরত উমর (রাঃ) সফরে বের হয়েছিলেন। সফরে সঙ্গে থাকার সব রশদ শেষ হয়ে গেল।

পথিমধ্যে তিনি দেখলেন,একজন রাখাল বকরি চড়াচ্ছে। তখন আরব সমাজের নিয়ম ছিল,মানুষ পথিক ও মুসাফিরদের বিনামূল্যে দুধ পান করতো। সুতরাং,হযরত উমর (রাঃ) রাখালকে বললেন,তুমি যদি একটি ছাগল দুইয়ে দুধ পান করাতে! রাখাল বলল,আপনি যেহেতু মুসাফির,আপনাকে দুধ পান করাতে পারলে তো ভালই ছিল,কিন্তু মুসকিল হল,এ ছাগলগুলো যে আমার নয়। আমি কেবলমাত্র এসবের রাখাল। তাছাড়া মালিক কাউকে দুধ পান করানোর অনুমতিও আমাকে দেয়নি। তার কথায় উমর (রাঃ) মুগ্ধ হলেন। কিন্তু তিনি রাখালকে পরীক্ষা করতে চাইলেন। বললেন, এখান থেকে একটা বকরী আমার কাছে বিক্রি করো।

এতে তুমি টাকা পাবে আর আমি বকরী। পথে তার দুধ খেতে পারব আবার প্রয়োজনে এটার গোস্তও খেতে পারব। আর মালিককে বোঝানোর জন্যে বলবে,একটা বকরী বাঘে খেয়ে ফেলেছে। ব্যস সব সমাধান। রাখাল বলল,‘ইয়া হাযা ফাআইনাল্লাহ’ অর্থাৎ সাহেব! তাহলে আল্লাহ কোথায়? তিনি তো সব দেখবেন। উমর (রাঃ) সন্তষ্ট হয়ে বললেন,তোমার মত মানুষ যতদিন পৃথিবীতে থাকবে ততদিন দুনিয়ার কোন অকল্যান হবে না (উসদুল-গাবা)। তাকওয়া মানুষকে সত্যিকারের মানুষ বানয়। সকল অন্ধকার দূরীভূত করতে প্রয়োজন তাকওয়া। তাকওয়া অর্জনের হুকুম আল্লাহ দিয়েছেন। ইরশাদ করেন হে মুমিনগণ! তোমরা তাকওয়া অর্জন কর। আর প্রত্যেকেই যেন চিন্তা করে দেখে পরকালের জন্য সে কি করছে।

আল্লাহকে ভয় করতে থাক (সূরা-হাশর,আয়াত-১৮)। অন্যত্র্য বলেন, হে ঈমানদাররা! তোমরা তাকওয়া অর্জন কর এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাক ( সূরা-তাওবা,আয়াত-১১৯)। সুরা আহযাবে বলেন,তোমরা তাকওয়া অর্জন কর এবং সঠিক কথা বল। তাহলে তিনি তোমাদের আমলসমূহ সংশোধন করবেন এবং গোনাহসমূহ ক্ষমা করবেন (আয়াত-৭০)। তাকওয়া অর্জনের উপায় হচ্ছে, আল্লাহর আযাবের কথা চিন্তা করা,ওলী-আল্লাদের সোহবত গ্রহণ করা,সর্বদা সত্য কথা বলা। বস্তুত তাকওয়ার ভিতরেই রয়েছে গোটা দ্বীনের নির্যাস।