পাঠ্য বই যথাসময়ে পৌঁছানো নিয়ে শঙ্কা

12
পাঠ্য বই যথাসময়ে পৌঁছানো নিয়ে শঙ্কা

নির্বাচন সামনে রেখে চলতি বছর নভেম্বরের মধ্যে বিনা মূল্যের পাঠ্য বই ছাপানোর উদ্যোগ নেয় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। তবে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ শেষেও চারটি শ্রেণির ১০টি বইয়ের ছাপার কাজ শুরু করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি চলমান থাকায় বছরের প্রথম দিন সব শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।পাঠ্য বই যথাসময়ে পৌঁছানোয় শঙ্কা

ছাপাখানা মালিক ও এনসিটিবির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূলত তিন কারণে এ বছর সঠিক সময়ে পাঠ্য বই ছাপানোয় সংকট তৈরি হয়েছে।

Pop Ads

এর মধ্যে আছে নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে তৈরি করা ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুশীলন পাঠ’ ও ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ অধিকতর যাচাই কার্যক্রম, ছাপাখানা মালিকদের ব্যাংক ঋণ জটিলতা এবং নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে যথাসময়ে পাঠ্য বই সরবরাহে কিছুটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রাথমিকের বই অক্টোবরের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা ছিল। এবার নতুন শিক্ষাক্রমের বই যুক্ত হচ্ছে প্রাথমিকের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে। ফলে যাচাই-বাছাই শেষ করে পাণ্ডুলিপি (বইয়ের খসড়া) পেতে দেরি হয়েছে।

তবে নভেম্বরে প্রায় শতভাগ বই সরবরাহ শেষ করা হয়েছে। দশ ভিসা নামের একটি প্রতিষ্ঠান প্রাথমিকের কিছু বই দিতে পারেনি। এর আগেও প্রতিষ্ঠানটি এমন কাজ করেছে, তাই তাদের কাছ থেকে আমরা আর বই নেব না। বাকি বই অন্য ছাপাখানা থেকে সমন্বয় করা হবে।

এ ছাড়া নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে অষ্টম ও নবম শ্রেণির বই তৈরি করা হচ্ছে। এসব শ্রেণিতে থাকছে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুশীলন পাঠ’ ও ‘অনুসন্ধানী পাঠ’। বিষয়গুলো অধিকতর যাচাই-বাছাই করে পাণ্ডুলিপির অনুমোদন পেতে দেরি হয়েছে। আগের বছর ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির এসব বিষয় নিয়ে সমালোচনা হয়েছিল।’

বাকি দুই সমস্যার বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেন, ‘ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আমরা অনেকগুলো ছাপাখানা মালিকের ব্যাংক ঋণ নিশ্চিত করেছি।

এখন ঋণ নিয়ে আর কোনো জটিলতা নেই। নির্বাচনের কারণে রাজনৈতিক দলগুলোর অবরোধে ট্রাকে করে বইগুলো উপজেলা পর্যায়ে পাঠাতে হিমশিম খেতে হয়েছে। আমরা মঙ্গল ও শুক্র-শনিবার করে ট্রাকগুলো পাঠিয়েছি। ট্রাক থেকে বই দ্রুত সংগ্রহ করতে নির্দেশনা দিয়েছি। এ ছাড়া ১৬ ডিসেম্বরের পর দেশের পরিস্থিতি বুঝে বইয়ের ট্রাকগুলোর নিরাপত্তার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ফলে এখন বই নিয়ে আর কোনো জটিলতা থাকছে না।’

বোর্ডের তথ্য মতে, এ বছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায় ৩৩ কোটি বই ছাপার কাজ চলছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রাথমিকের প্রায় সাড়ে ৯ কোটি এবং মাধ্যমিকের প্রায় সাড়ে ২৩ কোটি বই। এর মধ্যে প্রাথমিকের প্রায় শতভাগ বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। মাধ্যমিকের ষষ্ঠ শ্রেণির বই প্রায় শতভাগ ছাপা হয়েছে, একই অবস্থায় আছে সপ্তম শ্রেণির বইয়ের কাজ। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অষ্টম শ্রেণির বই ৩৪ শতাংশ এবং নবম শ্রেণির ১৯ শতাংশ বই উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে।

২০২৩ সালে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমের বই দেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালের জন্য দ্বিতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতেও নতুন শিক্ষাক্রমের বই যুক্ত হচ্ছে। আগের বছর ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ব্যাপক ভুল-ভ্রান্তি নিয়ে সমালোচনা হয়। সমালোচনার মধ্যে বাতিল করা হয়েছে এই দুই শ্রেণির বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’। অষ্টম ও নবম শ্রেণিতেও এসব বিষয় যুক্ত হচ্ছে। ফলে এ বছর এই দুই শ্রেণির এসব বই সতর্কতার সঙ্গে যাচাই করা হচ্ছে। এসব কার্যক্রমের কারণে বই ছাপার অনুমোদনও পিছিয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির চেয়ারম্যান শহীদ সেরনিয়াবাত কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিন শতভাগ বই শিক্ষার্থীদের দেওয়া সম্ভব হবে না। যেসব বই এখন ছাপাখানায় দেওয়া হচ্ছে তা জানুয়ারির মধ্যে পাওয়া যাবে না। এখনো আট কোটি বই ছাপা শুরু হয়নি। আবার যেগুলো ছাপা হয়েছে, তার মধ্যে কয়েকটি ছাপাখানা খুবই নিম্নমানের কাগজ ব্যবহার করেছে।’