পারিবারিক সহিংসতার উৎপত্তি, কারণ এবং প্রতিকার

পারিবারিক সহিংসতার উৎপত্তি, কারণ এবং প্রতিকার। সম্পাদিত-ছবি

 মো: শহিদুল আলম শাহীন

সুপ্রভাত বগুড়া (স্বাধীন মতামত): একটি পরিবার বলতে আমরা সাধারণতঃ বুঝি একজন গৃহকর্তার মা-বাবা, স্ত্রী এবং তাদের সন্তানসহ যৌথ বসবাস। এখানে সবাই আপনজন তাই পারিবারিক অশান্তির বদলে শান্তিই শ্রেয় ও কাম্য। কোন কারণে এই শান্তি বিঘিœত হলে সৃষ্টি হয় অশান্তি যা পরবর্তিতে সহিংসতায় রুপ নেয়। সাধারণতঃ যে সকল কারণে পরিবারে সহিংসতার উৎপত্তি হয় তার মধ্যে অন্যতম হল যৌতুক।

এই যৌতুকের শিকার ধনী গরীব শিক্ষিত অশিক্ষিত প্রায় সব পরিবার। দেশে যৌতুক বিরোধী আইন বিদ্যমান থাকলেও অনেকে সেই আইনের তোয়াক্কা করে না। যাদের যৌতুক দেয়ার সামর্থ নেই তাদের মেয়েকে যৌতুকলোভী স্বামী ও তার পরিবারের লোকদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হতে হয়।

Pop Ads

এমনকি তাদের হাতে জীবন পর্যন্ত দিতে হয়। অথবা করতে হয় আত্মহত্যা। অনেক সময় সন্তানকে হত্যা করে নিজে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। বাবা মার সবচেয়ে আদরের ধন যাকে কোলে পিঠে করে মানুষ করে নরপশুর কাছে বলি দেয়ার জন্য সমর্পণ করা হয়। এর চেয়ে হৃদয় বিদারক আর কি হতে পারে। আবার এও দেখা যায় যে, যৌতুক পাবার পরও যৌতুকলোভী স্বামীর মন ভরেনা ।

তাই সে পুনরায় যৌতুকের জন্য হন্যে হয়ে ওঠে ও তার আত্মীয় স্বজনের উপর চাপ প্রয়োগ করে। আমাদের দেশে মেয়ের সুখের জন্য বাব মা যতটুকু সামর্থ দেয়ার চেষ্টা করে। এখানে নির্যাতিত নারীদের জন্য নারী নির্যাতন আইন বলবৎ আছে। তারপরও এদেশের মেয়েরা হাজার কষ্ট সহ্য করে নিজের সংসার টিকিয়ে রাখতে চায়। কিন্ত্র উন্নত দেশে বিশেষতঃ মধ্যপ্রাচ্যে এর ব্যতিক্রম দেখা যায়।

সেখানে বিবাহের ক্ষেত্রে একজন পুরুষকেই মেয়েকে দেনমোহর ও বিভিন্ন উপঢৌকন দিতে হয়। সেজন্য সেখানে মেয়েদের এবং অভিভাবকের যৌতুকের জন্য নির্যাতিত হতে হয় না। সুতরাং আমাদের দেশে আইনের সঠিক প্রয়োগ এবং জনগনের সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রতিরোধের মাধ্যমে এই ষৃণ্য যৌতুক প্রথা দূর করা সম্ভব। মনে রাখা উচিত আমাদের সবার ঘরেই মেয়ে আছে এবং তাদেরকে একদিন অন্যের হাতে তুলে দিতে হবে।
ইদানিং পরিবারে আরেকটি সহিংসতার ভয়াবহ নজির আমরা সংবাদপত্রে প্রায়শ দেখতে পাই।

সমাজের সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজের উদাহরণ হচ্ছে পরকীয়া। বিবাহোত্তর স্বামী স্ত্রীর পরপুরুষ অথবা অন্য মেয়ের প্রতি আসক্ত হওয়া ও অবৈধ মেলামেশাকে পরকীয়া বলা হয়। স্বামী অথবা স্ত্রীর এধরনের কার্যকলাপ সংসারে নিয়ে আসে অশান্তি। পরিণতিতে আসে বিভেদ ও বিচ্ছেদ। বিপাকে পড়ে সন্তানেরা। কিন্তু দেখা গেছে এই পরকীয়াই অনেক সময় সহিংসতায় রুপ নেয়। স্বামীর পরকীয়ায় স্ত্রী যখন বাধা হয়ে দাঁড়ায় তখন পরকীয়ার টানে স্ত্রীকে খুন করতে দ্বিধাবোধ করেনা। তদ্রুপ স্ত্রীও পরকীয়ার টানে স্বামীকে খুন করতে পিছপা হয় না।

এমনকি সন্তানেরাও অনেক সময় পরকীয়ার রোষানলে পড়ে খুনের শিকার হয়। এক্ষেত্রে অসহায় মেয়েদের কাছে স্বামীর পরকীয়া মেনে নেয়া ছাড়া কোন উপায় থাকে না। আর মেয়েরা সাবলম্বী হলে সর্বোত্তম কাজ হল বিবাহ বিচ্ছেদ করা। তাই অভিভাবকদের উচিত মেয়েদের শিক্ষিত করে সাবলম্বী করে তোলা আর মেয়েদের উচিত খারাপ পরিণতির কথা বিবেচনা করে এই নিষ্ঠুর পরকীয়ায় জড়িত না হওয়া।

পরিবারের জন্য আরেকটি বিরাট সমস্যা হল সন্তানদের প্রতি অনেক অভিভাবকের উদাসীনতা। অভিভাবকদের উচিত ছোটবেলা থেকে ছেলেমেয়েদের সুশিক্ষা, শিষ্টাচার, ভালোমন্দ সম্পর্কে জ্ঞান দান করা। এর অভাবে ছেলেমেয়ে একদিন হয়ে উঠবে উশৃংখল। পরিবার ও সমাজের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। হয়ে উঠতে পারে জঙ্গী, সন্ত্রাশি ও নেশাখোর। এদের পরিবার ও মানুষের প্রতি কোন সহানুভুতি থাকে না। নেশার টাকার জন্য এরা চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও খুনখারাবি এমনকি বাবা মাকে পর্যন্ত খুন করতে পারে।

তাই সময় থাকতেই অভিভাবকদের উচিত ছোট বেলা থেকেই সন্তানদের প্রতি নজর দেয়া ও তাদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করা এবং সুসন্তান হিসাবে গড়ে তোলা। পরিবারে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়। আমাদের অনেকের পরিবারে কাজে সহায়তা করার জন্য গৃহকর্মী রাখা হয়। তারা নিতান্ত অভাবের তাড়নায় পেটের দায়ে কাজের জন্য আমাদের দ্বারস্থ হয়।

পরিবারের অনেকে তাদের সংগে অমানুষিক নির্যাতন করে থাকে। তারা যৌন নির্যাতনেরও শিকার হয়। নির্যাতনের কারণে জীবন পর্যন্ত দিতে হয়। কি পাপ করেছিল তারা ? দুবেলা দুমুঠো ভাত ছাড়া তাদের আর কোন কিছু চাওয়ার ছিল না। তারপরও সারাদিন পরিশ্রমের পর তাদের থাকতে হয়েছে অনাহারে অর্ধাহারে। তাদের আর্তনাদ কারও কর্ণগোচরে আসেনি।

বিদেশে কুকুর বিড়ালও মানুষের আদর ভালোবাসা পায়। কিন্তু আমরা ভুলে যাই মানুষ মানুষের জন্য। কারণ আমরাও তাদের ছাড়া চলতে পারিনা। সংসারে তাদের অবদান অবশ্যই কম নয়। সুতরাং তাদের ছাড়া আমরা যখন চলতে পারিনা তাই পরিবারের অভিভাবকদের উচিত তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করা এবং পরিবারের একজন সদস্য হিসাবে স্নেহ ও ভালোবাসা দেয়া।

                                                                                             লেখক/প্রবন্ধিক:                                                                                                           মো: শহিদুল আলম শাহীন                                                                                                 মোবা: ০১৭৩৮-৪৮৯২০৬।