বইয়ের ঘ্রাণ নয়, মিলছে পোড়া গন্ধ

13
বইয়ের ঘ্রাণ নয়, মিলছে পোড়া গন্ধ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদ্যালয়টি ছিল একটি ভোটকেন্দ্র। কিন্তু ভোটের এক দিন আগেই দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুনে পুড়ে যায় বিদ্যালয়টির চারটি শ্রেণিকক্ষ। এ অবস্থায় নির্বাচন হয়ে গেলেও গত পাঁচ দিনে পাঠদান শুরু করতে পারেনি শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার সিংরইল ইউনিয়নের হরিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে।

তবে উপজেলা প্রকৌশল বিভাগের একটি দল ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে আগামী রবিবার (১৪ জানুয়ারি) ‘রিবন্ড হ্যামার’ দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির বিভিন্ন জায়গা পরীক্ষা করবে বলে জানিয়েছে।

Pop Ads

বইয়ের ঘ্রাণ নয় মিলছে পোড়া গন্ধগত শনিবার ভোরে দোতলা ভবনের ওই বিদ্যালয়ের নিচতলার চারটি শ্রেণিকক্ষ ছাড়াও পাশের পুরনো আরেকটি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এতে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে শ্রেণিকক্ষের সব সামগ্রী। ধোঁয়ায় কালো হয়ে গেছে শ্রেণিকক্ষের দেয়াল।

আগুনের তাপে খসে পড়েছে দেয়ালের পলেস্তারা। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা যায়, দ্বিতল ভবনটির নিচতলার চারটি শ্রেণিকক্ষের ভেতরে থাকা শিক্ষার্থীদের বেঞ্চ, শিক্ষকদের সামনে থাকা টেবিল ও ব্ল্যাকবোর্ড আগুনে সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। এমনকি আগুনের উত্তাপে শ্রেণিকক্ষের বৈদ্যুতিক পাখাগুলোর কাঠামোও গলে নিচে পড়ে রয়েছে। এ ছাড়া লোহার জানালা ও ওপরের লোহার গ্রিল আগুনের উত্তাপে বাঁকা হয়ে বাইরের দিকে বেরিয়ে এসেছে।

শ্রেণিকক্ষে শুধু আসবাবের নিচে থাকা লোহার কাঠামোগুলো পুড়ে বাঁকা হয়ে পড়ে রয়েছে। এ ছাড়া কক্ষের চারপাশের দেয়াল ও ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। আগুনে পুড়ে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত শ্রেণিকক্ষ ছাড়াও সামনের দেয়াল কালো হয়ে আছে। শ্রেণিকক্ষের ভেতরে পড়ে রয়েছে বেঞ্চের কাঠামো। ছাই পড়ে রয়েছে পুরো শ্রেণিকক্ষে।

দপ্তরি না থাকায় বিদ্যালয়ে আসা শিক্ষকরা পানি এনে টুকরা কাপড় দিয়ে একটি কক্ষের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়া কয়েকটি বেঞ্চের ছাই পরিষ্কার করাচ্ছেন শিক্ষার্থীদের দিয়ে। ওই সময় দেখা যায়, নতুন বই ও নতুন পোশাক পরে আসা শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষের অবস্থা দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছে।

তাইয়িবা নামের এক শিশু শিক্ষার্থী বলে, ‘নতুন বই পাইয়া ইস্কুলে গেছলাম। কিন্তু গিয়া দেহি সব পোড়া। অহনো পোড়া গন্ধ বের অইতাছে। এইতা দেইখ্যা কান্দন আইছে। এমুন কামডা কেরে আমরার ইস্কুলো করলো। আমরা অহন কই পড়বাম? ক্লাস করবাম কই?’

বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারজানা আক্তার বলে, ‘আমরার ইস্কুলডা খুব সুন্দর আছিন। কিন্তু অহন চাওন যায় না। দেখলেই কান্দন আয়। চাইরপাশে খালি আগুনের গন্ধ পাওয়া যাইতাছে। যে বেঞ্চো বইতাম হেই বেঞ্চগুলি পুইর‌্যা গেছে। অহন ইস্কলো আইতে ডরাই (ভয়)।’

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেগম নুরুন্নাহার জানান, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ৫০ লাখ টাকার মতো হবে। তিনি ক্ষয়ক্ষতির এই তালিকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন। জানতে চাইলে নান্দাইল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফজিলাতুন্নেছা জানান, এ ঘটনার পর তিনি গত বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে প্রধান শিক্ষককে বিকল্প অবস্থায় পাঠদান নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।