বেড়েই চলেছে দেশের প্রায় সবগুলো প্রধান নদ-নদীর পানি, বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতির আশংকা!

বেড়েই চলেছে দেশের প্রায় সবগুলো প্রধান নদ-নদীর পানি, বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি আশংকা!

দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়ছে। ভারতের আসাম, মেঘালয়, হিমালয়ের পশ্চিমবঙ্গে ভারী বৃষ্টির কারণে দেশের ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, পদ্মা, সুরমা, কুশিয়ারা, তিস্তা, ধরলা, ধুধকুমারসহ সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

সংস্থাটির তথ্যানুসারে, আজ শনিবার বিকেলের মধ্যে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলা সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণার বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হতে পারে। এছাড়া তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। লালমনিরহাট, নীলফামারি, রংপুর, ও কুড়িগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হতে পারে।

Pop Ads

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র আরো জানায়, আগামী দুই দিনের মধ্যে উত্তরাঞ্চল ও দেশের মধ্যাঞ্চলের আরো ১৭টি জেলা বন্যায় আক্রান্ত হতে পারে। কারণ সেসব এলাকায় বন্যার তীব্রতা বাড়ছে, নদীগুলোর পানি আরো বাড়তে শুরু করেছে।

সারাদেশের ১০৯টি নদী পর্যবেক্ষণ করছে এই দপ্তর। তার মধ্যে ৯৫টি নদীর পানি বেড়েছে। এছাড়া আগামী কয়েক দিনের মধ্যে গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও পাবনায় বন্যার পানি প্রবেশের পূর্বাভাস দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

এদিকে, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে মঙ্গলবার পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। কোথাও কোথা হতে বজ্রসহ ভারী বৃষ্টি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, আজ শনিবার রাজধানীতে থেমে থেমে বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়াও রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় হতে পারে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি।

ভোর ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয় রেকর্ড করা হয় সিলেটে ১০৯ মিলিমিটার। আর রাজধানীতে এ সময় বৃষ্টি হয় ৩৪ মিলিমিটার। এদিকে, ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে আরো ৫৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে। গত তিনদিনে প্রায় আড়াই হাজার মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আসামে বৃষ্টি হতে পারে অন্তত ৩০০ মিলিমিটার।

এসব এলাকার বৃষ্টির পানি বাংলাদেশের সিলেট ও কুড়িগ্রাম দিয়ে নেমে আসবে। ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে গত বৃহস্পতিবার ৯৭২ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা ১২২ বছরের মধ্যে রেকর্ড।
মেঘালয় ও আসামে বৃষ্টি না কমা পর্যন্ত বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির আশা দেখছেন না আবহাওয়াবিদরা।

টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সিলেট মহানগরীসহ বিভাগের ৮০ ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে । গ্রাম, শহর ও উঁচু এলাকাও তলিয়ে গেছে পানির নিচে। পানিবন্দি অন্তত বিশ লাখ মানুষ। রানওয়েতে পানি প্রবেশ করায় বন্ধ আছে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট উঠানামা। সীমান্তের ওপারে আসামে গত তিন দিনে ১০০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ আড়াই হাজার মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সিলেট-ভোলাগঞ্জ ৩২ কিলোমিটার সড়কের বেশিরভাগ অংশ তিন দিন ধরে ডুবে আছে ঢলের পানিতে।
এদিকে, রংপুরে ভারী বৃষ্টিতে তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নীলফামারীর লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম হয়ে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হরিপুর পর্যন্ত ৩৫৫ কিলোমিটারের নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়েছে।

ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ৯টি উপজেলার দুই শতাধিক চর ও নদী সংলগ্ন গ্রাম প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। শেরপুরের ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদী উপজেলার ১৩ ইউনিয়নের অন্তত ৮০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ। পানি বেড়েছে মহারশী, সোমেশ্বরী, চেল্লাখালী ও ভোগাই নদীর।