মেলায় আসছে কাঙ্ক্ষিত বই

13
মেলায় আসছে কাঙ্ক্ষিত বই

বইমেলা এলেই এখন প্রকাশিত হয় গল্প, উপন্যাস, কবিতা ছাড়াও বিচিত্র বিষয়ের অনেক বই। এর ভেতর থেকে পাঠক কি কাঙ্ক্ষিত বইটি খুঁজে পান? সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ‘লেখক বলছি’ মঞ্চে গতকাল সোমবার ঠিক এ প্রশ্নটিই করলেন উপস্থাপক। লোকসাহিত্য গবেষক সৈয়দা আঁখি হক উত্তরটা দিলেন নিজেকে দিয়েই। বললেন, এ দেশে লোকগান ও লোককবিদের নিয়ে কাজ করা মানুষ খুব নেই।

ধারণা করা হয়, এ ধরনের বিষয়ের বইয়ের পাঠকও কম। এর পরও তাঁর লেখা ‘আরকুম শাহর জীবনদর্শন ও গীতিবিশ্ব’ শিরোনামের বইটির নতুন মুদ্রণ শিগগিরই মেলায় আসছে। পাঠকের হাতে কাঙ্ক্ষিত বই না গেলে তো এ বইয়ের প্রথম মুদ্রণের কপি শেষ হতো না।

Pop Ads

‘লেখক বলছি’ মঞ্চের এই আলাপের সূত্র ধরেই যাওয়া হলো শোভা প্রকাশে।

আরকুম শাহকে নিয়ে লেখা বইটি সেখান থেকেই বেরিয়েছে। বিক্রয়কর্মীরা জানালেন, ধীর হলেও এ ধরনের বইয়ের বিক্রি একেবারে মন্দ না। এরই মধ্যে সেখানে এসে হাজির হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থী। বেশ কয়েকটি বই উল্টেপাল্টে দেখে তাঁদের একজন কিনলেন ইংরেজি ভাষা শেখার একটি বই।

ভাষা বা রান্না শেখার মতো কথিত কেজো বইয়ের উল্লেখযোগ্য রকম পাঠক থাকলেও অমর একুশে বইমেলা যে মূলত সৃজনশীল ও মননশীল বইয়ের জন্যই তা স্পষ্ট হলো চলচ্চিত্র নির্মাতা রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিতের কথায়। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবি ‘নোনা জলের কাব্য’র পরিচালক তিনি। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গতকাল মেলায় এসেছিলেন সুমিত। কালের কণ্ঠকে তিনি বললেন, আগে একটা সময় মূলত চলচ্চিত্রবিষয়ক বইয়ের প্রতিই আগ্রহ ছিল। এখন সব ধরনের বই-ই পড়তে চেষ্টা করেন।

তাঁর মতে, চলচ্চিত্র একটি সমন্বিত শিল্প বলে নির্মাতা হিসেবে সমাজ ও চারপাশকে বোঝার জন্য সব ধরনের বই পড়া দরকার। বিশেষ করে নারী লেখকের চিন্তা বোঝার জন্য আপাতত তাঁদের বই পড়ছেন।

গতকাল নিজের জন্য পাঞ্জেরী প্রকাশনী থেকে তরুণ কথাসাহিত্যিক কিযী তাহনিনের গল্পগ্রন্থ ‘ইতি হেকমালন্তি’ কিনেছেন বলে জানান রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত। এ ছাড়া সন্তানের জন্য কিনেছেন বেশ কিছু শিশুতোষ বই।

প্রতিবছরই বাংলা একাডেমি আয়োজিত এ বইমেলায় সবচেয়ে বেশি বের হয় কবিতার বই। সংখ্যায় এর পরই থাকে উপন্যাস ও গল্পের দাপট। বেচাবিক্রি আবার পরের দুটিরই বেশি। তবে মাওলা ব্রাদার্সের ব্যবস্থাপক শাহীন শিকদার বললেন, কয়েক বছর ধরে তাঁরা নন-ফিকশন বইয়ের প্রতি পাঠকের বাড়তি আগ্রহ লক্ষ করছেন। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, “মাওলা ব্রাদার্স প্রবন্ধ-গবেষণার বই শুরু থেকেই প্রকাশ করছে। এবার প্রকাশ করেছি কাবেদুল ইসলামের ‘গণপরিষদ বিতর্কের আলোকে বাংলাদেশের সংবিধান জন্মকথা’, অর্থনীতিবিদ সেলিম জাহানের ‘স্মৃতি হিরণ্ময়’। এ ছাড়া আহমদ ছফার ‘যদ্যপি আমার গুরু’, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘সংস্কৃতির ভাঙা সেতু’র মতো তাঁদের কিছু বই সারা বছরই ভালো বিক্রি হয়।”

কথাপ্রকাশের বিক্রয় কর্মকর্তা জাফরুল ইসলাম জানান, তাঁরাও গল্প-উপন্যাসের পাশাপাশি প্রবন্ধ, গবেষণাগ্রন্থের ওপর জোর দিয়েছেন। এরই মধ্যে মেলায় এসেছে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ‘সাতচল্লিশের দেশভাগে গান্ধী ও জিন্নাহ’, যতীন সরকারের ‘সাংস্কৃতিক জাগরণের প্রত্যাশা’, বেগম আকতার কামালের ‘কবির উপন্যাস’ ইত্যাদি।

অনন্যার প্রকাশক মনিরুল হক বললেন, তাঁরা সব ধরনের বই-ই প্রকাশ করেন। তাঁদের পাঠকও বিষয়বৈচিত্র্য পছন্দ করেন। অনন্যায় কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, হুমায়ূন আহমেদ, মুহম্মদ জাফর ইকবাল প্রমুখের বই বেশি বিক্রি হচ্ছে।‌ মনিরুল হক জানালেন, গত বছর প্রকাশিত ইমদাদুল হক মিলনের আত্মজৈবনিক রচনা ‘যে জীবন আমার ছিল’ বইয়ের তিনটি মুদ্রণ শেষ হয়ে গেছে। এবার আরো একটি মুদ্রণ আসছে।

গতকাল পঞ্চম দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে ৭০টি। এর মধ্যে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘জাতিসংঘে বাংলাদেশ’ (চারুলিপি), অসীম সাহার ‘চরম গরম ছড়া’ (আগামী), মশিউল আলমের ‘তুয়া ও ভয়ঙ্কর বিড়ালেরা’ (মাওলা), সালেক খোকনের ‘১৯৭১ খেতাবপ্রাপ্ত ত্রিশ বীর’ (কথাপ্রকাশ)।