যেখানেই হোক রাস্তার পাশে হলেও গাছ লাগাতে হবে : শেখ হাসিনা

সুপ্রভাত বগুড়া (জাতীয়): প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের নেতা-কর্মীসহ দেশবাসীকে দেশের খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় বেশি করে গাছ লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আসুন এই মুজিববর্ষে আমরা সবাই মিলে বৃক্ষরোপন করে দেশকে রক্ষা করি।

দেশের পরিবেশকে রক্ষা করি এবং মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করি। আবার নিজেরা লাভবান হই।’ তিনি বলেন, ‘এই গাছ বিক্রির টাকাও আপনাদের সংসারের উপযোগী হবে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সোমবার বিকেলে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে কৃষকলীগ আয়োজিত সারাদেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে ভাষণে এসব কথা বলেন।

Pop Ads

তিন মাসব্যাপী কৃষকলীগ আয়োজিত ১৪২৭ বঙ্গাব্দের বৃক্ষরোপণের মূল অনুষ্ঠান রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এ্যভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮৪ সাল থেকে কৃষক লীগ বর্ষাকালে সারাদেশে বৃক্ষরোপণের এই কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করে আসছে। মুজিববর্ষ উদযাপনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, সারাদেশে ব্যাপক বৃক্ষরোপণের কর্মসূচি তাঁর সরকার এবং দলের রয়েছে।

তিনি বলেন, অন্তত এক কোটি গাছতো আমরা লাগাবোই এবং এই কর্মসূচি আমাদের অব্যাহত থাকবে। তিনটি করে গাছ লাগালে তিন কোটি গাছ লাগানো যাবে। সকলকে সারাদেশে ফলজ, বনজ ও ভেষজ এই তিন প্রজাতির গাছ অন্তত একটি করে হলেও লাগানোর আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেখানেই হোক রাস্তার পাশে হলেও গাছ লাগাতে হবে। আর উপকূলীয় অঞ্চলে যে গাছগুলো মাটি ধরে রাখে যেমন-ঝাউ, নারকেল, খেজুর ও তালগাছ লাগাতে হবে। আর ব্যাপকভাবে ফলের গাছ লাগাতে হবে। কারণ আমাদের পুষ্টি এই ফল থেকে আসে।’

বৃক্ষরোপণ আর এখন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই বরং এ কর্মসূচিটি এখন একটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং সাবেক কৃষি মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। কৃষকলীগ সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি এমপি স্বাগত বক্তৃতা করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে কৃষিখাত যেন কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেজন্য সরকার বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়েছে। তিনি বলেন,‘২০২০-২০২১ অর্থ-বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে কৃষি খাতে ২২ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

দেশের মানুষ যেন আর খাদ্যাভাবে কষ্ট না পায়, সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে,’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাত্র ৪ শতাংশ সুদে কৃষকরা যেন ঋণ নিতে পারে সেজন্য পৃথকভাবে ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।’

বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাহলে আমাদের উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে এবং আর কেনদিন খাদ্যের জন্য আমাদের দেশকে কারো কাছে হাত পাততে হবে না।’

তিনি বলেন, ‘আগামীতে কৃষি খামার যান্ত্রিকীকরণে ৩ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা আমরা বাজেটে বরাদ্দ রেখেছি। এটা আমরা একেবারে গ্রাম পর্যায়ে পৌঁছে দেব।’ এবারের বাজেটে রেয়াতি শুল্কহারে কৃষি যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানির সুবিধা সম্প্রসারণে বরাদ্দের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষি যান্ত্রিকীকরনকে আমরা আরো উৎসাহিত করতে চাই।

সেক্ষেত্রে আমরা শুধু বাইর থেকে কিনে আনব না, আমাদের যে মেশিন টুল ফ্যাক্টরী রয়েছে (গাজীপুর) সেখানে আমরা কৃষি যন্ত্রাংশ সংযোজন এবং তৈরী করতে পারি। এ ব্যাপারে গবেষণা করে বের করতে হবে, কোনগুলি আমাদের প্রয়োজন’। এ বিষয়ে বর্তমান কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এবং সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

তিনি আগামী বছর থেকে বৃক্ষরোপনে পুরস্কার প্রদানে একটি সীড মানি দিয়ে তহবিল করে দেয়ারও ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘বৃক্ষরোপণের জন্য কৃষকলীগ যে পুরস্কার দিতে চেয়েছে সেখানেও আমরা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একটা ফান্ড দিয়ে দেব সেখানে সীড মানি থাকবে।

সেখান থেকে যে যত বেশি গাছ লাগাবে তার ভিত্তিতে প্রতিবছর আমরা পুরস্কার দেব।’ প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাসে ভিন্ন মাত্রায় অনুষ্ঠানের আয়োজন হলেও আজও অন্তত একটি গাছ হলেও তিনি গণভবনে লাগাবেন বলে অনুষ্ঠানে ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে কৃষিমন্ত্রী অনুষ্ঠানে দলের নেতা-কর্মীদের হাতে বৃক্ষরোপনের জন্য গাছের চারা বিতরণ করেন।

বৃক্ষরোপন কর্মসূচি পালনের জন্য কৃষকলীগ দায়িত্ব প্রাপ্ত হলেও সারাদেশে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ এমনকি শ্রমিক লীগসহ সকল সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশগ্রহণ করে থাকে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এজন্য সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘মূল দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সকল সহযোগী সংগঠনের প্রতিটি সদস্য তিনটি করে গাছ লাগাবেন।’ 

তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে সারাদেশে আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সকল সংগঠনের নেতা-কর্মীরা কৃষকদের ধান কাটায় সহযোগিতা না করলে ঘুর্ণিঝড় আম্পানের কারণে দেশের বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যেতে বলেও আওয়ামী লীগ সভাপতি উল্লেখ করেন। -বাসস।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here