যেসব কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বেড়ে যায় দূরত্ব

যেসব কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বেড়ে যায় দূরত্ব

দাম্পত্য জীবনে সুখ-শান্তি ও দুঃখ-কষ্ট সবই মহান আল্লাহ প্রদত্ত। তবে সুখ-শান্তি সবসময়ই আল্লাহর নিয়ামত। বিয়ের পর একজন নারী বাবার বাড়ির সব ছেড়ে অন্যের বাড়ি চলে আসেন। শুরু হয় নতুন জীবন। আর এই নতুন জীবন কিংবা দাম্পত্য জীবন সুখের করতে কিছু কর্তব্য রয়েছে স্বামী-স্ত্রীর। সম্পর্কে ছোট ছোট কিছু ভুলের জন্য অনেক সংসারেই ক্ষতি হতে দেখা যায়।

সঙ্গীকে ছোট বা অপমান করা : অল্প দোষ-ত্রুটিতেই সঙ্গীকে ছোট করে কথা বলা, অপমান কিংবা বকাঝকা খুবই খারাপ স্বভাব। আধুনিক এই সময়ে অনেক স্ত্রী বা স্বামীর মধ্যেই এমনটা দেখা যায়। এক্ষেত্রে অনেক পুরুষ হয়তো মনে করে তার এমন ব্যবহারে বীরত্ব প্রকাশ পায়, তার স্ত্রী নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ওই ব্যক্তি স্ত্রীর কাছে একজন খারাপ মানুষ হিসেবে থাকেন।

Pop Ads

বিচ্ছেদের হুমকি : অনেক স্বামী রয়েছেন যারা কোনো বিষয়ে স্ত্রী দ্বিমত পোষণ করলেই তালাকের হুমকি দেন। এ ধরনের কথাবার্তা সংসারে কল্যাণ বয়ে আনে না। এ পরিস্থিতিতে ওই স্ত্রী নিজেকে সবসময় অসহায় ভাবতে থাকেন। একসময় স্বাভাবিক জীবনের ছন্দপতন হয়। দুশ্চিন্তা থেকে মানসিক রোগও হয়ে থাকে।

তাই কোনো স্বামীরই জীবন সঙ্গীকে কথায় কথায় তালাকের হুমকি দেয়া উচিত নয়। ইবনে ওমর (রা.) বিশ্বনবী (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, ‘আল্লাহ তাআলার কাছে নিকৃষ্টতম হালাল বস্তু হচ্ছে তালাক।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২১৭৪)

সময় না দেয়া : দাম্পত্য জীবনে একজন আরেকজনকে সময় দেয়া খুবই জরুরি। এতে যেকোনো সমস্যা যেমন সহজেই সমাধান করা যায়, একইভাবে মনও হালকা হয়। মানসিকভাবে শান্তি অনুভব করা যায়। এ জন্য স্বামী বা স্ত্রীর উভয়েরই সঙ্গীকে সময় দেয়া গুরুত্বপূর্ণ।

মন খারাপ রাখা : সঙ্গীর সঙ্গে মন খারাপ করে কথা বলার মতো অভ্যাস অনেকেরই রয়েছে। অথচ তারা দিব্যি বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে খোশ আমেজে গল্প করছে, আড্ডা দিচ্ছে। শুধু সঙ্গীর সঙ্গে কথা বলার সময় মন খারাপ করে কথা বলে। দিন শেষে বাসায় ফিরে স্ত্রীর সঙ্গে খারাপ আচরণ করে সঙ্গীকে মানসিক কষ্ট দেন।

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) জাবির (রা.)-কে বলেন, ‘কুমারী বিয়ে করলে না কী জন্য? তার সঙ্গে তুমি খেলতে, সেও খেলতো তোমার সঙ্গে। তাকে হাসাতে তুমি, সেও হাসাতো তোমাকে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৩৬৭)

জীবন-যাপনে হস্তক্ষেপ : একজন পুরুষ যদি তার ইচ্ছামত জীবন পরিচালনা করতে পারে তাহলে তার স্ত্রীর ক্ষেত্রে কেন নয়। এমন অনেকেই আছেন যারা পরিবারে নারীদের নানা বিধি-নিষেধের মধ্যে রাখেন। বাইরে বের হওয়া যাবে না, টেলিভিশন দেখা যাবে না, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করা যাবে না-সহ নানা নিয়ম বেঁধে দেয়। অথচ এসবই স্বামী করে যাচ্ছে। এটি কখনোই ঠিক নয়। এতে সংসারে শান্তির বিপরীতে ধীরে ধীরে অশান্তি শুরু হয়।

পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা কি অন্য লোকদের পুণ্যের আদেশ করো আর তা নিজেদের জন্য ভুলে যাও, অথচ তোমরা কিতাব তিলাওয়াতও করো। তোমরা কি এতটুকুও বোঝো না?’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৪৪)

অপবাদ দেয়া : অযথাই স্ত্রীকে সন্দেহ করার প্রবণতা খুবই ভয়ংকর বিষয়। সঙ্গীকে ভুল বুঝতে পারা থেকেই প্রতিদিন সুখের সংসারে বিচ্ছেদ হয়। সঙ্গীকে বিশ্বাস করতে হবে। কোনো ব্যাপারে কখনো নিশ্চিত না হয়ে কিংবা বিষয়টি স্পষ্ট না হলে সন্দেহ করা থেকে বিরত থাকুন।

অনেকেই রয়েছে অপবাদ সহ্য করতে পারেন না। একজন আদর্শ স্বামী কখনোই তার সঙ্গীকে সন্দেহ করে অপবাদ দেয় না। এতে তার সংসারেরই বদনাম ছড়ায়। ইরশাদ রয়েছে যে, ‘হে মুমিনরা, তোমরা অধিক ধারণা থেকে বেঁচে থাকো। নিশ্চয়ই কোনো কোনো ধারণা পাপ।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১২)