রাস্তায় ব্যারিকেড বসিয়ে বিক্ষোভ : মিয়ানমারে সেনাবিরোধী বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে প্রাণহানি ছাড়ালো ৫শ ১০ জনে !!

সুপ্রভাত বগুড়া (আন্তর্জাতিক): মিয়ানমারে সেনাবিরোধী বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে মোট প্রাণহানি ছাড়ালো ৫শ ১০ জন। কিন্তু তারপরেও থামানো যাচ্ছে না বিক্ষোভকারীদের। আজও দেশটির বিভিন্ন জায়াগায় সেনাবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার আরো ১৪ বিক্ষোভকারী নিহত হয়। ইয়াঙ্গুনের দাগোন এলাকায় নিরাপত্তাবাহিনীর প্রবেশে বাধা দিতে বিক্ষোভকারীরা বালুর বস্তা দিয়ে রাস্তা আটকে রাখে।

এসময় তাদের লক্ষ্য করে পুলিশ গুলি ছুঁড়লে ৮ জন মারা যায়। সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে প্রায় দুই মাস ধরে চলা বিক্ষোভে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী দিন ছিল শনিবার। এ দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৪১ জনে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে বেসরকারি সংস্থা অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স। নিহতদের মধ্যে অন্তত ১২ জন শিশু ছিল।

Pop Ads

তাদের মধ্যে আটজন নিহত হয়েছেন ইয়াংগনের দাক্ষিণ দাগন এলাকায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আন্দোলনকারীরা ওই এলাকায় বালির বস্তা দিয়ে অবরোধ তৈরি করেছিল। নিরাপত্তা বাহিনী তা সরাতে ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে। স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, রাতেও সেখানে গোলাগুলির শব্দ পেয়েছেন তারা। সে কারণে হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।

একদিনে শতাধিক বিক্ষোভকারী নিহত হওয়ার দিনে জমকালো ডিনার পার্টি আয়োজন করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা গেছে, সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অভ্যুত্থানের নেতারা লাল কার্পেটের ওপর দিয়ে অভ্যাগত অতিথিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন।

রাজপথে বিপুল পরিমাণ রক্তক্ষয়ের পর রাতে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে জমকালো ডিনার পার্টিতে সমবেত হন সেনা কর্মকর্তারা। বিক্ষোভকারীদের রক্তাক্ত করে কর্মকর্তাদের এমন ডিনার পার্টি আয়োজনের নিন্দা জানিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। বিক্ষোভ দমনের নামে সাধারণ মানুষ হত্যায় নিন্দা জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আর এই হত্যাকাণ্ড মেনে নেয়া যায়না বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস প্রতিবাদকারীদের ওপর এই হত্যা-নিপীড়ন বন্ধ করতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। মিয়ানমারজুড়ে এই বিক্ষোভের পেছনের অন্যতম সংগঠন জেনারেল স্ট্রাইক কমিটি অব ন্যাশনালিটিস (জিএসসিএন) ফেইসবুকে পোস্ট করা এক খোলা চিঠিতে ‘সেনাশাসনের বিরোধিতাকারী জনগণ, তরুণ, নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের সুরক্ষা’ নিশ্চিত করতে দেশটিতে ক্রিয়াশীল বিভিন্ন জাতির সশস্ত্র গোষ্ঠীর সহযোগিতা চেয়েছে।

তাদের ওই আহ্বানে সাড়াও মিলছে। মঙ্গলবার তিনটি সশস্ত্র গ্রুপ এক যৌথ বিবৃতিতে সামরিক বাহিনীকে হত্যা বন্ধ করে রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনের আহ্বান জানিয়েছে। মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি, আরাকান আর্মি এবং তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি তাদের ওই যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, সেনাবাহিনী এই আহ্বানে সাড়া না দিলে তারাও মিয়ানমারের সর্বজাতির আত্মরক্ষার ‘বসন্ত বিপ্লবে’ শামিল হবে।

দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এ দেশটির বিস্তৃত অংশ দুই ডজন সশস্ত্র গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে। গত কয়েকদিনে ওই গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সেনাবাহিনীর লড়াইয়ের তীব্রতাও বেড়েছে। এদিকে মিয়ানমারের কারেন প্রদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছে থাইল্যান্ড। গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে। দেশটির নেত্রী অং সান সু চিসহ বেশ কয়েকজন নেতাকে আটক করা হয়েছে। এরপর থেকেই ইয়াঙ্গুন, মান্দালয়সহ বিভিন্ন শহরে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ চলছে।