রেল লাইন কাটা, খোলা হলো ক্লিপ

14
রেল লাইন কাটা, খোলা হলো ক্লিপ

* ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনায় সন্দেভাজন তরুণ আটক * নাটোরে রেললাইনের কিছু অংশ কাটা * নাশকতার আশঙ্কায় রাতে চলাচল করা ছয়টি ট্রেন বন্ধ * ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথে শেষরাতের ট্রেন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নাটোরে গত দুই দিনে রেলপথে নাশকতার চেষ্টা চালানো হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। এ ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আরিফ মিয়া নামের সন্দেহভাজন একজনকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করছে রেলওয়ে থানার পুলিশ।

ব্রাহ্মণবাাড়িয়ায় গত শুক্রবার রাতে রেললাইনের স্লিপারের ক্লিপ খুলে ফেলা হয়। গতকাল শনিবার নাটোরের নলডাঙ্গা বাসুদেবপুর রেলস্টেশনসংলগ্ন রেললাইনের কিছু অংশ কেটে ফেলা হয়।

Pop Ads

নাশকতার আশঙ্কায় গত শুক্রবার থেকে রাতে চলাচল করা ছয়টি ট্রেন বন্ধ করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় আনসার সদস্য সূত্রে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পৈরতলা গণকবর সংলগ্ন রেল সেতু এলাকায় গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ব্যাগসহ সন্দেহভাজন এক তরুণকে আটক করেন আনসার সদস্যরা। পরে তাঁর ব্যাগ তল্লাশি করে রেললাইনের স্লিপারের খুলে ফেলা ক্লিপ পাওয়া যায়। জিজ্ঞাসাবাদে ওই তরুণ তাঁর নাম আরিফ মিয়া বলে জানান।

পুলিশ বলছে, রেলপথে নাশকতা চালাতে দুর্বৃত্তরা এসব ক্লিপ খুলে থাকে। আরিফ মিয়াকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে জেলা আনসার ও ভিডিপির কমান্ড্যান্ট মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, আরিফ সদর উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। আটক করার পর তাঁর কাছ থেকে রেললাইনের আরো চারটি ক্লিপ উদ্ধার করা হয়। পরে তাঁকে আখাউড়া রেলওয়ে থানার পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে।

জানতে চাইলে আখাউড়া রেলওয়ে থানার ওসি জসিম উদ্দিন খন্দকার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রেলপথে নাশকতার আশঙ্কায় রাতভর পাহারা দিচ্ছি। আমার এলাকায় ৭৬ জন আনসার সদস্য ও ২৯ জন রেল পুলিশ রেলপথের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে।’

রেলপথে ট্রেনযাত্রা নিরাপদ করতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সারা দেশে সচল তিন হাজার ২০০ কিলোমিটার রেলপথের নিরাপত্তায় রেলওয়ে পুলিশের পাশাপাশি প্রায় ১৪ হাজার আনসার সদস্য মেতায়েন করা হয়েছে। এর বাইরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রাত জেগে বিভিন্ন স্থানে টহল দিচ্ছেন।

এর মধ্যেও তৎপর অপরাধীরা।
নাটোরের নলডাঙ্গায় গতকাল নাশকতার উদ্দেশ্যে একটি রেললাইনের কিছু অংশ কেটে ফেলা হয়। এ ঘটনায় নাশকতার আশঙ্কায় গত শুক্রবার থেকে রাতে চলাচল করা পাঁচটি ট্রেন বন্ধ করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেন রয়েছে। এ ছাড়া আন্ত নগর ট্রেন যমুনা এক্সপ্রেসের যাত্রা সংক্ষিপ্ত করায় দুর্ভোগে পড়েছে যাত্রীরা। গতকাল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথে রাতের নির্ধারিত শেষ ট্রেন চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। চাষাঢ়া রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার খাজা সুজন এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, অনিবার্য কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য এ ট্রেন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে যেকোনো সময় এটি চালু হতে পারে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন স্থানে রাতের ট্রেনে নাশকতা এড়াতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে রেলপথের নিরাপত্তায় দুই স্তরে আনসার বাহিনী কাজ করছে। এ ছাড়া রেলস্টেশনগুলোর চেকপোস্টে কড়াকড়ি এবং রেলের প্রতিটি বগিতে বসানো হচ্ছে ক্যামেরা। পুলিশ, র‌্যাবসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নজরদারি বাড়িয়েছে।

সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মতে সারা দেশের লেভেলক্রসিং, রেলগেটসহ হাইওয়ে সড়কে ঝুঁকি বিবেচনা করে জেলাপ্রতি ২৪০ থেকে ২৮০ জন আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

গত ১৭ ডিসেম্বর একটি আদেশে জানানো হয়, সারা দেশে রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চঘাটসহ জনগুরুত্বপূর্ণ এক হাজার ৮৫১টি স্থানে নিরাপত্তায় ১৮ ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ১৩ হাজার আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, রেলপথের ৩৫০ স্থানকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে তদন্ত চলছে। এর মধ্যে ঢাকা রেঞ্জে ১৯৯টি স্থানকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব স্থানে আড়াই হাজার আনসার সদস্য মোতায়েন করেছে সদর দপ্তর।

দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, রেলপথে নাশকতা প্রতিরোধে ৫৭টি স্থানে ৪৫৬ জন আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তাঁদের সতর্ক পাহারায় চলাচল করছে ১৫০টি ট্রেন। রেলওয়ে সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ফেনী প্রতিনিধি জানান, জেলার ২৮ কিলোমিটার রেলপথ পাহারায় ১৩০ জন আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

তদন্তে যা পাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা

তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, বিমানবন্দর স্টেশনে মাস্ক ও ক্যাপ পরা এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির গতিবিধি সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে। এখনো তার পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এর বাইরে তেজগাঁও স্টেশনে টুপি পরা দুজন ও আরো দুই ব্যক্তির গতিবিধি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে। তারা ট্রেন থেকে নেমেই দৌড়াচ্ছিল। পাঞ্জাবি ও টুপি পরা দুজন কিছুদূর এগিয়ে গেলেও পুলিশকে দেখে তারা গতিপথ পরিবর্তন করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ‘তাদের শরীরের ভাষা বলছে, তারা পুলিশকে দেখে ভয় পেয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তাদের পরিচয় শনাক্ত করা চেষ্টা চালাচ্ছি।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, এই ঘটনার ছায়া তদন্ত করছে ডিবি। ডিবির একাধিক দল নাশকতায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে।

র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মোশতাক আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, তেজগাঁওয়ের নৃশংস ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করতে র‌্যাব-১ সহ সংস্থাটির অনেক ব্যাটালিয়ন এবং ইন্টেলিজেন্স ইউনিট কাজ করছে।