শাজাহানপুরে অবৈধ ইটভাটা রয়েছে অর্ধশত, গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে একটি !

শাজাহানপুরে অবৈধ ইটভাটা রয়েছে অর্ধশত, গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে একটি ! ছবি-ওহাব

সুপ্রভাত বগুড়া (আবদুল ওহাব শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি: বগুড়ার শাজাহানপুরে প্রায় অর্ধশত অবৈধ ইটভাটার মধ্যে একটি ইটভাটা গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এসব ইটভাটার কোনোটিরও পরিবেশ অধিদফতরের অনুমতি নেই, নবায়ন নেই। লাইসেন্সও নেই। সবগুলোই অবৈধ। পরিবেশ অধিদফতর এ তথ্য নিশ্চিত করেন। সোমবার ২৮ ডিসেম্বর উপজেলার বামুনীয়া এলাকায় এম এইচ এফ নামে একটি ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি অবৈধ ইটভাটাগুলো কবে নাগাদ গুড়িয়ে দেয়া হবে সেই অপেক্ষার প্রহর গুনছে এলাকার সাধারন জনগন।

অভিাযান পরিচালনাালে ঢাকা পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদিকুর রহমান জানান, ইটভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ ও সংশোধিত আইন ২০১৯ এর বিভিন্ন ধারা লঙ্ঘন করায় এই ইটভাটা গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ইটভাটা গুলোতেও অভিযান পরিচালনা করা হবে। তবে সবগুলো অবৈধ ইটভাটা গুড়িয়ে দেয়া হলে এ এলাকার জনগন প্রশাসনের প্রতি অনেক সন্তুষ্ট প্রকাশ করতো এবং দেশের ফসলী জমিগুলো ভুমিদস্যুদের কবল থেকে রক্ষা পেতো।

Pop Ads

জানাগেছে, শাজাহানপুর উপজেলার বিভিন্ন দালালদের হাত করে প্রাকৃতিক পরিবেশের বিষয়টি বিবেচনা না করে গ্রামের অভ্যান্তরে ও কৃষি উর্বর ফসলী জমিতে স্থাপন করা হয়েছে বিপুল পরিমান ইটভাটা। ফলে ব্যাপকাহারে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষি ও কৃষক। আর অবৈধ হলেও ইটভাটার অগ্নিশিখা জ্বলছে বছরের পর বছর। তথাপি দেখার কেউ নেই। তবে দীর্ঘ দিন পর একটি ইটভাটা গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বাকি রয়েছে আরও অসংখ্য অবৈধ ইটভাটা।

উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসের তথ্যমতে বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলার মোট আবাদী জমির পরিমান ১৬১৮০ হেক্টর। ইউনিয়নের সংখ্যা ৯ টি। আর ইটভাটার সংখ্য অর্ধশত। তাই ইটভাটা গুলো গ্রাস করেছে সীমিত ভুমির এই উপজেলার মাটি ও মানুষ। কৃষি অফিস সুত্রে জানাযায়, উপজেলার দুবলাগাড়ী, খলীশাকান্দী, মাদলা, জালশুকা, সুজাবাদ ও নয়মাইল এলাকার জমিগুলো সবচেয়ে বেশী কৃষি উর্বর। যার ফলে এসব এলাকায় ধান,গম,ভুট্রা,আলু, বেগুন, শীম,পেঁয়াজ, মরিচ, ফুলকপি,বাঁধাকপি, মুলা,পটল, পুঁইশাক, লালশাক, ধনেপাতা সহ বিভিন্ন তরি-তরকারী চাষ হয় সারাবছর।

এ কারনে এখান থেকে প্রতিদিন শতশত ট্রাক কৃষিপন্য নিয়ে ঢাকা চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায় এবং দেশের খাদ্য চাহিদা পুরন করে। কিন্তু বর্তমানে এসব এলাকায় চাষাবাদের পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে ইট।শুধু তাই নয়, গ্রামের অভ্যন্তরেও স্থাপন করা হয়েছে বিপুল পরিমান ইটভাটা। যার একটির অনুমতি নেই। আর অবৈধ হলেও চলছে বছরের পর বছর। ফসলী জমিগুলোতে ইটভাটার অগ্নিশিখার দাহে ফসল হয়না। ফসলে বিভিন্ন ধরনের রোগ-বালাই দেখা দেয়। এজন্য দেশে খাদ্য শস্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। যার পরিনাম ইতিমধ্যেই বাজারে পড়তে শুরু করেছে। তাই বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে অবিলম্বে শাজাহানপুর উপজেলার অবৈধ ইটভাটাগুলো গুড়িয়ে দেয়া একান্ত প্রয়োজন।

শুধু কি তাই, নির্মল বাতাসের পরিবর্তে ইটভাটার অগ্নিশিখা আর ধুলোবালিতে মানুষের দৈনন্দিন নিঃশ্বাস নেওয়া হয়ে উঠেছে দুর্বিসহ। এভাবে প্রাকৃতিক ও মানব পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। আবার এসব ইটভাটার দালাল রয়েছে। তারা আশেপাশের জমির মালিকদের টাকার লোভ দেখিয়ে একটি জমি ক্রয় করে নিয়ে গভীরভাবে গর্ত করে। পরে পাশের জমি ভেংগে গেলে সে জমি বিক্রি করতে বাধ্য হয়।

কখনও দাপটও দেয়া হয়। নিরুপায় হয়ে কৃষক ওই কৃষি উর্বর জমি ইটভাটা গুলোতে বিক্রি করছে। দাপটে মাটিগুলো নিয়ে যাচ্ছে ইটভাটায়। আর প্রকাশ্যে বলছে কিনে নিয়েছি। এভাবে মারপ্যাচে ফেলে কৃষি উর্বর জমিগুলো একের পর এক ডোবা-নালা ও গর্তে পরিনত হচ্ছে। তথাপি প্রশাসনের ঘুম ভাংছেনা কিছুতেই।