শিল্পে প্রযুক্তির ব্যবহারে গবেষণা প্রয়োজন

54
শিল্পে প্রযুক্তির ব্যবহারে গবেষণা প্রয়োজন

উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়াতে এবং পণ্যে বৈচিত্র্য আনার জন্য শিল্পকারখানায় আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজনের বিকল্প নেই। কিন্তু এসব আধুনিক প্রযুক্তি পরিচালনায় দক্ষ জনশক্তির যথেষ্ট অভাব রয়েছে। দক্ষ কর্মী তৈরিতে যে ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা ও গবেষণা দরকার, তাও অপর্যাপ্ত। গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো ব্যয় করতে চায় না। বেশির ভাগ শিল্পপ্রতিষ্ঠান বছরে এ ক্ষেত্রে শ্রমিকপ্রতি ৫০০ টাকারও কম অর্থ ব্যয় করে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুবিধা নিতে হলে গবেষণা খাতে জোর দেওয়া জরুরি।

রোববার রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টারে ‘বাংলাদেশের শিল্প খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার’ শীর্ষক এক সংলাপ অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এ সংলাপের আয়োজন করে।

Pop Ads

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। আলোচনায় অংশ নেন ইউনাইটেড নেশন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইউএনআইডিও) বাংলাদেশ প্রতিনিধি জাকি উজ জামান, বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির, বিজিএমইএর পরিচালক আসিফ আশরাফসহ বিভিন্ন শিল্প উদ্যোক্তারা।

অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী বলেন, সময়মতো প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ না করলে, ভালো গবেষণা না হলে শিল্প খাত পিছিয়ে যাবে, দেশও পিছিয়ে পড়বে। এখনও প্রয়োজনীয় অনেক ক্ষেত্রে সঠিক বিনিয়োগ হচ্ছে না। বৈদেশিক বিনিয়োগ সেভাবে আসছে না।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মানে অসন্তোষ প্রকাশ করেন শিল্পমন্ত্রী। তিনি বলেন, অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কী পড়ানো হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। শিক্ষার্থীরা শুধু সনদপত্র পাচ্ছে। চাকরির পরীক্ষায় তারা টিকতে পারছে না। দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হলে শিক্ষায় কোনোভাবে ছাড় দেওয়া যাবে না।

তিনি বলেন, প্রবাসী শ্রমিকরা রেমিট্যান্স পাঠান। আর উচ্চ শিক্ষিত ব্যবসায়ীরা রেমিট্যান্স তো পাঠান না, উল্টো দেশ থেকে টাকা নিয়ে যান। কোরবানির সময় অনেক চামড়ার জোগান হয়। কিন্তু বিক্রি হয় না। ট্যানারিতে চামড়া পড়ে থাকে। সেগুলো বর্জ্য হয়ে যাচ্ছে। কারণ, কিছু ব্যবসায়ীর এখন অনেক টাকা, তারা বিদেশে থাকেন। তাদের কিছু হয়ও না। কারণ, ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা কিংবা মন্ত্রীর সঙ্গে তাদের খাতির থাকে। একশ্রেণির ব্যবসায়ী ব্যাংকের টাকা খেয়ে ফেলছেন, মানুষের টাকাও খেয়ে ফেলছেন। আসলে অসততাই মূল সমস্যা।

মূল প্রবন্ধে সিপিডির গবেষণা ফেলো সৈয়দ ইউসুফ সাদাত বলেন, শিল্প খাতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের জন্য ভালো মানের গবেষণা ও উদ্ভাবন দরকার। কিন্তু শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো এ খাতে একেবারেই ব্যয় করতে চায় না। ওষুধ, চিকিৎসা ও রাসায়নিকের মতো কয়েকটি শিল্প ছাড়া বেশির ভাগ শিল্পপ্রতিষ্ঠান বছরে প্রতি শ্রমিকের পেছনে ৫০০ টাকারও কম ব্যয় করে। বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর মাত্র ৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠান গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগ করেছে। আর ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে বিনিয়োগ করেছে যথাক্রমে ২ ও ১ শতাংশ। বিষয়টি দেশের শিল্প খাতের জন্য অশনিসংকেত।

অনুষ্ঠানে ফাহমিদা খাতুন বলেন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য শিল্প খাতে উচ্চ মানের প্রযুক্তি ব্যবহার করতেই হবে। প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সারাবিশ্বে যেভাবে বিপ্লব হচ্ছে, তাতে এর সঙ্গে তাল মেলাতে না পারলে বাংলাদেশ পিছিয়ে যাবে। অর্থনীতির গতি শ্লথ হয়ে পড়বে। তৈরি পোশাক খাত ছাড়া উল্লেখযোগ্য আর কোনো রপ্তানি খাত নেই। পোশাক খাতেও খুব ভালো প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে না।

জাকি উজ জামান বলেন, রপ্তানি বাড়াতে হলে হাই-টেক পার্কে বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার। সেজন্য উচ্চতর গবেষণা খাতে বিনিয়োগ প্রয়োজন। এ বিনিয়োগ হতে হবে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ।

সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, বড় প্রকল্পগুলোতে যেসব প্রযুক্তি পণ্য ব্যবহার হয়েছে বা হচ্ছে তার ছিটাফোঁটা কাজ যদি দেশের কোম্পানিগুলো পেত, তাহলে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দাঁড়িয়ে যেত। দেশের আইটি খাতের উদ্যোক্তারা বিদেশ থেকে প্রযুক্তি আনার বিপক্ষে নন, তবে এসব প্রকল্প যখন শুরু হয় তখন চুক্তিতে ন্যূনতম ৬০ শতাংশ স্থানীয় মূল্য সংযোজনের শর্ত দেওয়া উচিত ছিল। এতে দেশের আইটি খাতে দক্ষতা বাড়ত। দক্ষ জনবলও কিছুটা তৈরি হতো।

আসিফ আশরাফ বলেন, বড় কারখানাগুলোতে অটোমেশন হচ্ছে। ছোট কারখানাগুলো এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। ছোটদের ব্যবসায় অটোমেশন যুক্ত করতে সরকারের নীতি সহায়তা দরকার।