শীতে শ্বাসতন্ত্রের রোগ ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত দুই লাখের বেশি

7
শীতে শ্বাসতন্ত্রের রোগ ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত দুই লাখের বেশি

দেশে শীতের তীব্রতার সঙ্গে বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগ। শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত রোগ ও ডায়রিয়ায় গত দুই মাসে দেশের দুই লাখ ২০ হাজার ৪২১ জন আক্রান্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি রোগী পাওয়া গেছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে। মোট আক্রান্তের ৪২.২৯ শতাংশ রোগী বরিশাল বিভাগে।

চিকিৎসকরা বলছেন, শীত মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ বা অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন (এআরআই) বা সর্দিকাশি, গলাব্যথা থেকে শুরু করে ব্রংকাইটিস, ব্রংকিওলাইটিস ও নিউমোনিয়া ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এ ছাড়া পানিবাহিত ডায়রিয়ার রোগী বাড়ছে। বিশেষ করে শিশু এবং বয়স্কদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।

Pop Ads

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম দেশব্যাপী রোগীদের তথ্যের রেকর্ড রাখে।

অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত বছরের ১৫ নভেম্বর থেকে গতকাল পর্যন্ত শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত ৫৮ হাজার ১০২ ও ডায়রিয়াজনিত কারণে এক লাখ ৬২ হাজার ৩১৯ জন চিকিৎসা নিয়েছে। এই সময়ে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে ২৬ জন ও ডায়রিয়ায় দুজন মারা গেছে। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জনই খাগড়াছড়ি জেলার বাসিন্দা।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বেনজির আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, শীতকালে একেকবার একেক অঞ্চলে সংক্রমণ বাড়ে।

প্রতিবছর যদি একই অঞ্চলে সংক্রমণ বেশি হয়, তাহলে গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, এ সময় রোগ থেকে রেহাই পেতে যতটা সম্ভব ঠাণ্ডা পরিবেশ এড়িয়ে চলা ভালো। তবে ঘরের ভেতরে বায়ু চলাচল ঠিক রাখতে হবে। ধুলাবালু থেকে যতটা সম্ভব শিশুদের দূরে রাখতে হবে। টাটকা শাক-সবজি ও ফলমূল খেতে হবে, যাতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, শীতকালে পানি কমে যায় এবং তখন পানির দূষণ বাড়ে। এ সময় এই দূষিত পানির ব্যবহার ও পানি পানে ডায়রিয়া বাড়ে। তাই বিশুদ্ধ পানি বা টিউবওয়েলের পানি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত ৫৮ হাজার, মৃত্যু ২৬

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত দুই মাসে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত আক্রান্ত হয়েছে ৫৮ হাজার ১০২ জন। মৃত্যু ২৬ জনের। এর মধ্যে ১৭ জনই খাগড়াছড়ি জেলার বাসিন্দা। এ ছাড়া কক্সবাজার ও ময়মনসিংহ জেলায় তিনজন করে মারা গেছে। চট্টগ্রামে দুজন ও চাঁদপুরে একজন মারা গেছে।

বিভাগ ওয়ারী আক্রান্তদের হিসাবে ঢাকা বিভাগে ১৪ হাজার ৭০১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে দুই হাজার ৬৫৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে সাত হাজার ১৫৩ জন, রাজশাহীতে দুই হাজার ৬২ জন, রংপুরে ৮৬৬ জন, খুলনায় পাঁচ হাজার ৯৩২ জন, বরিশালে ২২ হাজার ৩৪১ জন ও সিলেট বিভাগে দুই হাজার ৩৯৪ জন।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন) শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল কালের কণ্ঠকে বলেন, বরিশালের গ্রামগুলোতে প্রায় ঘরে ঘরে ঠাণ্ডাজনিত রোগী রয়েছে। শীত মৌসুম এলেই ঠাণ্ডাজনিত রোগের এই প্রাদুর্ভাব প্রতিবছরই দেখা দেয়। এসব রোগী কমিউনিটি ক্লিনিক, উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়, হাসপাতালে ভর্তির তেমন প্রয়োজন হয় না।

ডায়রিয়া আক্রান্ত দেড় লাখের বেশি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত দুই মাসে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে এক লাখ ৬২ হাজার ৩১৯ জন। বিভাগ ওয়ারী হিসাবে ঢাকা বিভাগে ১৯ হাজার ৩৩৮ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৬৭৭১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩২ হাজার ৩১০ জন, রাজশাহীতে পাঁচ হাজার ৭৭৭ জন, রংপুরে তিন হাজার ২৭৪ জন, খুলনায় ১৯ হাজার ৪৭৮ জন, বরিশালে ৭০ হাজার ৮৭৭ জন ও সিলেট বিভাগে চার হাজার ৪৯৪ জন।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন) শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল কালের কণ্ঠকে বলেন, বরিশালে ডায়রিয়া বেশি হওয়ার কারণ পান্তাভাত খাওয়া। অনেকে ভাত পান্তা বানায় পুকুর বা খালের পানি দিয়ে। এ জন্য বরিশাল বিভাগে ডায়রিয়া রোগী বেশি। এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে কাজ করছি।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পেডিয়াট্রিক রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বলেন, শীতকালীন রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা এখন অনেক বেশি। তিনি জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশি, নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস এবং শীতকালীন ডায়রিয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।