আসহাবে উখদুদের ঈমান জাগানিয়া সত্য ঘটনা !

আসহাবে উখদুদের ঈমান জাগানিয়া সত্য ঘটনা। প্রতিকী-ছবি

আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আজিজুল হক

সুপ্রভাত বগুড়া (ধর্ম ও জীবন): মানবজাতির হেদায়েতের আলোকবর্তিকা মহাগ্রন্থ আলকুরআনের ৮৫তম সূরা অর্থাৎ সূরায়ে বুরূজের কয়েকটি আয়াত আজকের আলোচ্য বিষয তথা ‘আসহাবে উখদুদ’ এর ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করেই নাযিল হয়েছে। ঘটনাটি সহীহ মুসলিম ও তিরমিযী শরীফেও সাহাবী হযরত সোহাইব ইবনে সিনান আররুমী (রাঃ) হতে বর্ণিত রয়েছে। ঘটনাটি নি¤œরূপঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর আগমনের ৭০বছর পূর্বে তৎকালীন হেজায এবং সিরিয়ার মধ্যবর্তী নাজরান অঞ্চলের লোকজন ছিল মূর্তিপূজক এবং তাদের রাজা ইউছুফ যু-নাওয়াস বড় যালিম ছিল।

সে নিজেকে প্রজাদের উপাস্য দেবতা মনে করতো। রাজার দরবারে ছিল এক বিখ্যাত যাদুকর। এই যাদুকরের যাদুর প্রভাব দ্বারাই জনগণের উপর রাজা তার প্রাধান্য বজায় রাখতো। একদিন যাদুকর রাজাকে বললো, আমি তো বুড়ো হয়ে গেছি। আমার এ বিদ্যা অন্য কাউকে শিক্ষা দেয়া দরকার। নতুবা আমার মৃত্যু হয়ে গেলে আপনি অসুবিধায় পড়বেন। রাজা যাদুকরের কথামত অনেক খোঁঁঁজাখুঁজি করে আব্দুল্লাহ ইবনে তামেরকে যাদুকরের হাতে সোপর্দ করলো। যাদুকর বালকটিকে যাদুবিদ্যা শিক্ষা দিতে লাগলো।

Pop Ads

যাতায়াতের পথে বালক সে যুগের এক আলিম দরবেশের আস্তানার সন্ধান পেল এবং দরবেশের কথাবার্তা শুনে বালক যারপর নাই মুগ্ধ হলো। কিছু কালের মধ্যেই বালকটি তাওহীদের ইলম এবং যাদুবিদ্যা উভয়টি হৃদয়ঙ্গম করে ফেললো। একদিন সে চলার পথে দেখতে পেলো, মস্তবড় একটা অজগর সাপ (অন্য বর্ণনায় বাঘের কথা আছে) রাস্তা আটকে রেখেছে এবং লোকজন ভয়ে অন্য পথে ছোটাছুটি করছে।

আব্দুল্লাহ মনে মনে ভাবলো,আজ পরিক্ষা করে দেখব, যাদুকর উত্তম নাকি আলিম সাহেব? অতঃপর সে একটি পাথর হাতে নিয়ে বললো,হে আল্লাহ! যদি যাদুকরের চাইতে আলিমের কার্যকলাপ আপনার নিকট অধিক পছন্দনীয় হয়, তবে এ পাথরাঘাতে এই প্রাণীটি নিঃশেষ করে দিন। এরপর সেটা ভয়ংকর প্রাণীটির প্রতি ছুড়ে মারলো। পাথরের আঘাতে প্রাণীটি সঙ্গে সঙ্গে মারা গেল।

আর বালকের কারামতের কথা প্রচার হয়ে গেল। বালকের দুআয় কুষ্ঠরোগী ও জন্মন্ধ পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করতে লাগলো। রাজার পরিষদবর্গের একলোক অন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বালকটির ব্যাপারে জানতে পেরে সে বহু উপঢৌকন এনে বললো,তুমি আমাকে ভালো করে দাও আর এসব মাল তুমি নাও। বালক বললো,আমি তো কাউকে আরোগ্য দিবার ক্ষমতা রাখি না,আর কোন উপঢৌকনও গ্রহণ করি না।

আপনি যদি এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনেন তাহলে দুআ করবো,আশাকরি আল্লাহ আপনার অন্ধত্ব দূর করবেন। দরবারী লোক এতে রাজী হলো এবং সেও আরোগ্য লাভ করলো। পরদিন রাজা সেই দরবারীকে সম্পূর্ণ সুস্থ দেখে আশ্চর্য হয়ে জানতে চাইলো,কিভাবে সে আরোগ্য লাভ করেছে। লোকটি এক আল্লাহর কথা বললে রাজা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে অবিরতভাবে শাস্তি দিয়ে শহীদ করলো। ইতিমধ্যে রাজা বালকের কথা জানতে পেরে তাকে দরবারে ডাকলো। খুশির সাথে বালককে বললো,বৎস! তুমি তো অল্প দিনেই যাদুবিদ্যায় বেশ উন্নতি করেছ! বালক বললো,এটা যাদুবিদ্যার ক্ষমতা নয় বরং এক আল্লাহর অনুগ্রহমাত্র।

একথা শুনে রাজা খুব রাগান্বিত হয়ে তাকে নির্যাতন করলো এবং কার কাছে এই ইলম শিখেছে তার সন্ধান নিল। পরে উক্ত আলিমকে করাত দ্বারা দিখন্ডিত করে মর্মান্তিকভাবে শহীদ করলো। এরপর রাজা তার কতিপয় সহচরের মাধ্যমে পাহাড় থেকে নিক্ষেপ করে ও সদুদ্রে ডুবিয়ে শহীদ করতে ব্যর্থ হলো। এতে রাজার ক্রোধ বেড়ে গেল। তখন বালক বললো, আপনি যদি আমাকে হত্যা করতেই চান তবে একটি ময়দানে লোকজন একত্রিত করে আমাকে একটি স্তম্ভের সাথে বাঁধুন।

আর আমার এই তীর নিন এবং এই বলে আমার প্রতি নিক্ষেপ করুন : ‘বিসমি রাব্বি হাযাল গোলাম’ অর্থ্যাৎ এই বালকের প্রভু আল্লাহর নামে নিক্ষেপ করলাম। রাজা তাই করলো, সত্যই এতে বালক শাহাদতবরণ করলো। সমবেত লোকজন আল্লাহর নামের কার্যকারিতা দেখে সকলে বললো,আমরা এই বালকের রবের প্রতি ঈমান আনলাম। এতে রাজা খুবই ক্ষিপ্ত হয়ে স্থানে স্থানে গর্ত খনন করে তার মধ্যে আগুনের বড় বড় কুন্ড তৈরী করলো। অতঃপর যেসব লোক তাকে একমাত্র প্রভু হিসাবে স্বীকার করলো না তাদেরকে সেসব অগ্নিকুন্ডতে নিক্ষপ করতে লাগলো।

ঈমানদারগণ হাসিমুখে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষিপ্ত হলেন কিন্তু ঈমান ত্যাগ করলেন না। অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপের ফলে সে অগ্নি আরো বেশি প্রজ¦লিত হয়ে তার লেলিহান শিখা শহরে ছড়িয়ে পড়লো। যারা মুসলমানদের অগ্নিদগ্ধ হওয়ার তামাশা দেখেছিল, তারাও এই আগুনে পুড়ে ভস্ম হয়ে যায়। কেবল রাজা ইউছুফ যু নাওয়াস পালিয়ে যায়। সে অগ্নি থেকে বাঁচতে সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং সেখানেই তার সলিল সমাধি হয়।(আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)