ঔষধ তৈরী ও বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই–অক্সাইড শোষণে ব্যবহৃত হবে পালং শাক !

সুপ্রভাত বগুড়া (রান্না-বান্না): পালং শাকের অনন্য গুণের কথা প্রায় সবাই জানেন। সেই সঙ্গে পালং শাক খান না এমন লোক পাওয়া মুশকিল। এবার পালং পাতা নিয়ে গবেষকেরা নতুন এক খবর দিলেন। পালং শাকের পাতায় থাকা জৈব ঝিল্লি বা মেমব্রেন বিশেষ রাসায়নিকের সাহায্যে কার্বন ডাই–অক্সাইডকে চিনিতে পরিণত করতে পারে।

গবেষকদের উদ্ভাবিত কৃত্রিম ক্লোরোপ্লাস্ট ভবিষ্যতে বিভিন্ন রোগের ওষুধ বা বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই–অক্সাইড শোষণে ব্যবহৃত হবে। নেচার ডটকমে সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর টেরেস্ট্রিয়াল মাইক্রোবায়োলজির গবেষকেরা পালংশাক ও কৃত্রিম ক্লোরোপ্লাস্ট নিয়ে গবেষণা করেছেন।

Pop Ads

গবেষণা–সংক্রান্ত নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে সায়েন্স সাময়িকীতে। নেচারের প্রতিবেদনে বলা হয়, কার্বন ডাই–অক্সাইড খাওয়ার নতুন উপায় পাওয়া গেছে। উদ্ভিদ কোষে সালোকসংশ্লেষণ কাঠামো বা ক্লোরোপ্লাস্টের কৃত্রিম সংস্করণ তৈরি করেছেন গবেষকেরা।

এটি সূর্যের আলো কাজে লাগিয়ে পরীক্ষাগারে তৈরি রাসায়নিকের সহায়তায় কার্বন ডাই–অক্সাইডকে চিনিতে রূপান্তর করে। গবেষকেরা বলছেন, তাদের এ কৃত্রিম সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া থেরাপিউটিক ওষুধ কারখানাগুলোতে ব্যবহৃত হতে পারে। ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রক্রিয়া পরিবেশ থেকে কার্বন ডাই–অক্সাইড দূর করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।

তবে এটি বড় আকারে করা যাবে কি না বা আর্থিকভাবে কতটা টেকসই হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। প্রকৃতিতে ছয়টি উপায়ে কার্বন ঠিক করার পদ্ধতি আছে। এতে এনজাইম ব্যবহার করে সৌরশক্তি বা রাসায়নিক শক্তিকে চিনিতে পরিণত করা হয়।

২০১৬ সালে জার্মানির মারবার্গের ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর টেরেস্ট্রিয়াল মাইক্রোবায়োলজির সিনথেটিক জীববিজ্ঞানী টোবিয়াস আরব এবং তার সহকর্মীরা সপ্তম পদ্ধতি বের করেন। টোবিয়াস বলেন, ‘আমরা থার্মোডাইনামিক ও কাইনেটিক পদ্ধতি ব্যবহার করে আরও কার্যকর কার্বন ডাই–অক্সাইড দূর করার পদ্ধতি নিয়ে কাজ করেছিলাম।

এ পদ্ধতিটির নাম সিইটিসিএইচ সাইকেল, যা মূলত এনজাইমের জটিল নেটওয়ার্ক এবং প্রাকৃতিক সালোকসংশ্লেষণ পদ্ধতির চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি শক্তি উৎপাদনে কার্যকর। তবে এটি জীবন্ত কোষের কার্যপদ্ধতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে কি না, তা পরিষ্কার ছিল না।

এ পদ্ধতি খতিয়ে দেখতে টোবিয়াস ও তাঁর সহকর্মী টায়রেন মিলার পালংশাক নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। তিনি ক্লোরোপ্লাস্ট থেকে আলোক সংগ্রহকারী পালংশাকের ঝিল্লি আলাদা করেন। এরপর তা সিইটিসিএইচ চক্রের ১৬টি এনজাইমসহ বিক্রিয়ায় যুক্ত করেন। কিছু পরিবর্তন আনার পর তাঁরা দেখেন পালংশাকের ঝিল্লি ও এনজাইম একত্রে কাজ করছে।

তাঁরা এভাবে কার্যকর কৃত্রিম ক্লোরোপ্লাস্ট তৈরি করেন। এতে এনজাইমগুলো কার্বন ডাই–অক্সাইডকে গ্লাইকোলেটে পরিণত করে যা বিভিন্ন জৈব পদার্থ তৈরিতে কাজে লাগে।’ কলোরাডোর গোল্ডেনের ন্যাশনাল রিনিউয়েবল এনার্জি ল্যাবরেটরির জৈব রসায়নবিদ পল কিং বলেছেন, এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি আবিষ্কার।

টোবিয়াস আরব বলেন, পালংশাক উৎপাদন করে ঝিল্লি সংগ্রহ সময়সাপেক্ষ বলে তাঁরা পালংশাক ঝিল্লি প্রতিস্থাপন কৃত্রিম সিস্টেম তৈরি করছেন। টোকিও ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির সিনথেটিক জীববিজ্ঞানী ইউতেৎসু কুরুমা বলেছেন, ‘আমরা কৃত্রিম কোষের জন্য শক্তি উত্পাদন ব্যবস্থা হিসেবে ক্লোরোপ্লাস্টের অনুকরণ ব্যবহার করতে পারি।’

তবে এটি করার জন্য, কৃত্রিম ক্লোরোপ্লাস্টকে প্রাকৃতিক ক্লোরোপ্লাস্টের মতো স্ব-মেরামত এবং স্ব-প্রজনন করার কিছুটা ক্ষমতা অর্জনের জায়গায় নিতে হবে। তারা এখনো এটা করতে পারেননি। তবে গবেষকেরা থেমে নেই। তারা যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকদের সঙ্গে যৌথভাবে সিনথেটিক কোষ নিয়ে গবেষণা করছেন।

গবেষক টোবিয়াস বলেন, ‘প্রকৃতি খুব রক্ষণশীল। এটি কখনো সালোকসংশ্লেষণের সম্পূর্ণ পরিসীমা মেলে ধরেনি। প্রকৃতি যে সমাধানগুলো কখনো স্পর্শ করেনি, তা আমরা বুঝতে পারছি। সেটাই আমাদের কাছে রোমাঞ্চকর।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here