বগুড়ার শিবগঞ্জে হত্যা মামলার আসামির গাড়ি ব্যবহার করছেন এএসপি !

বগুড়ার শিবগঞ্জে হত্যা মামলার আসামির গাড়ি ব্যবহার করছেন এএসপি ! ছবি-বাপ্পী

সুপ্রভাত বগুড়া (অভিজিৎ বাপ্পি শিবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ): বগুড়ায় হত্যা মামলার আসামির প্রাইভেট কার ব্যবহার করছেন সদ্য প্রত্যাহার হওয়া সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার (এএসপি) আরিফুল ইসলাম সিদ্দিকী ও তার স্ত্রী ডা. শারমিন সুলতানা। মামলার বাদীর অভিযোগ আসামিদের কাছ থেকে প্রাইভেট কার ঘুষ হিসেবে নিয়েছেন এএসপি আরিফুল ইসলাম সিদ্দিকী। আর মামলার আসামি রাসেল মাহমুদ সবুজ বলেছেন, ঘুষ না, গাড়িটি ভাড়া দেয়া হয়েছে এএসপি আরিফুল ইসলামের স্ত্রী ডা. শারমিন সুলতানাকে।

এদিকে আসামিদের কাজ থেকে গাড়ি ঘুষ নেয়ার বিষয় নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে বগুড়ার শিবগঞ্জে। এ কারণেই হত্যা মামলাটি পুলিশ সুপারের আদেশে শিবগঞ্জ থানা থেকে ডিবি পুলিশের কাছে স্থানান্তর করা হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে শিবগঞ্জ উপজেলার দাড়িদহ হাই স্কুলের সামনে প্রতিপক্ষের মারপিটে আহত হন কৃষকলীগ নেতা আজহারুল ইসলাম নান্টু (৩৫)। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯ ফেব্রুয়ারি রাতে তিনি মারা যান।

Pop Ads

এ ঘটনায় নিহতের বাবা আব্দুল বাছেদ মন্ডল বাদী হয়ে ১০ ফেব্রুয়ারি শিবগঞ্জ  থানায় মামলা দায়ের করেন।  ( মামলা নং-১০ তারিখ-১০-০২-২১)। মামলায় বিএনপির নেতাকর্মীসহ ১৩ জনকে আসামি করা হয়।
বাদী অভিযোগ করেছেন, সার্কেল এএসপি আরিফুল ইসলাম এবং মামলার ২ নং আসামি বিএনপি নেতা মাহবুবর আলম মানিক বগুড়ার উপশহরে একই বিল্ডিংএ বসবাস করেন। সেই সুবাদে তাদের মধ্যে সখ্যতা রয়েছে।

মামলার ৩ নং আসামি রাসেল মাহমুদ সবুজ ২ নং আসামির ভাগিনা। মামা ভাগিনা যৌথ ভাবে সার্কেল এসপিকে সাড়ে ৮ লাখ টাকায় প্রাইভেট কার (ঢাকা মেট্রো-গ-২৫-১৮৫৪) কিনে দিয়েছেন। সেই গাড়িটি সার্কেল এএসপির স্ত্রী ব্যবহার করেন। বাদী আব্দুল বাছেদ বলেন, আসামিদের কাছ থেকে গাড়ি কিনে নেয়ার বিষয়টি পুলিশ সুপারের সাথে সাক্ষাৎ করে অভিযোগ দিয়েছি। তিনি বলেন, সার্কেল এএসপি গাড়ি ঘুষ নিয়ে আসামিদের গ্রেফতার করতে দেননি।

একই অভিযোগ করে শিবগঞ্জের ময়দানহাটা ইউপি চেয়ারম্যান এসএম রূপম বলেন, হত্যা মামলার আসামিদের কাছ থেকে সার্কেল এএসপি গাড়ি উপহার নেয়ার বিষয়টি শিবগঞ্জের মানুষ সবাই জানেন। তার স্ত্রী ডা. শারমিন টিএএমএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই গাড়িতেই যাতায়াত করেন। একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যাচ্ছে এএসপি আরিফুল ইসলাম নিজেই ঢাকা মেট্রো-গ-২৫-১৮৫৪ নাম্বারের গাড়ি চালিয়ে তার স্ত্রীকে টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নামিয়ে দিচ্ছেন।

শিবগঞ্জের সাবেক সার্কেল এএসপি বলেন, বাদী পক্ষের এই অভিযোগ অসত্য। এখন চেয়ারে নাই, অনেকেই অনেক কথা বলবেন। গাড়িটি কার এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিআরটিএ অফিসে খোঁজ নিয়ে দেখেন?
বিআরটিএ অফিসে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে- ঢাকা মেট্রো-গ-২৫-১৮৫৪ নাম্বারের গাড়িটির মালিকানা রংপুর শহরের কামাল কাচনা এলাকার আবুল কালামের ছেলে আকতারুজ্জামানের নামে।

তিনি বলেন, গাড়িটি তিনি রংপুর শহরের আরমান কার হাউসের মাধ্যমে সাড়ে ৮ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন।
আরমান কার হাউসের স্বত্বাধিকারী লেলিন জানিয়েছেন, মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে গাড়িটি কিনেছেন বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার রাসেল মাহমুদ সবুজ নামের এক ব্যক্তি।

তবে এখনও গাড়ির মালিকানা পরিবর্তন হয়নি। রাসেল মাহমুদ সবুজ বলেন, আমি রেন্ট এ কার এর ব্যবসা করি। গাড়িটি ঘুষ কিংবা উপহার দেয়া হয়নি। মাসিক ২০ হাজার টাকা চুক্তিতে এএসপি আরিফুল ইসলামের স্ত্রী ডা. শারমিন সুলতানাকে ভাড়া দেয়া হয়েছে। বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশারফ ভুঞা বলেন, নান্টু হত্যা মামলা নিয়ে এ ধরনের অভিযোগ শুনেছি।

এ কারণে মামলাটি থানা পুলিশের কাছ থেকে ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ৮৮ বোতল ফেন্সিডিল বিক্রির অভিযোগ ২১ এপ্রিল শিবগঞ্জ সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আরিফুল ইসলাম সিদ্দিকীকে প্রত্যাহার করে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে।