সুপ্রভাত বগুড়া (আবদুল ওহাব শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি: করোনা দৃর্যোগ কালীন মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলায় চলছে জমজমাট সুদের ব্যবসা। পেটের ক্ষুধা নিবারণের জন্য ও ক্ষুদে ব্যবসায় আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার লোভ দেখিয়ে দেয়া হচ্ছে সুদ্রে উপর টাকা।
এই টাকা চক্রাকারে বৃদ্ধি হওয়ায় ফলে কর্ম জীবনে ঘুরে দাঁড়ানো তো দুরের কথা, দাদন ব্যবসায়ীদের ঋণের জালে জড়িয়ে নি:স্ব হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। আর রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে চলেছেন দাদন ব্যবসায়ীরা। কিন্ত প্রশাসনিকভাবে এ বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি না দেয়ায় বেড়েই চলেছে সুখোরদের দাম্ভিকতা।
উপজেলা সদর থেকে শুরু করে প্রতিটি ইউনিয়ন, গ্রাম, পাড়া ও মহল্লার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মধ্যবিত্ত পরিবার এবং নিম্নবিত্ত পরিবার দাদন ব্যবসায়ীদের ঋণের জালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
অবৈধ এ দাদন ব্যবসা সম্পর্কে অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে এমনই ভয়াবহ তথ্য। উপজেলার ৯ ইউনিয়নের আড়িয়া বাজার, মানিকদীপা, বারআন্জুল, নয়মাইল, মাদলা, চাচাইতারা, মালীপাড়া, আশেকপুর, শাবরুল, রাণীর হাট, খরণা, বীরগ্রাম, টেংগামাগুর, গোহাইল, জমাদারপুকুর, পোয়ালগাছা, খাদাশ, চোপিনগর, শাহনগর, কামারপাড়া, বড়পাথার, আমরুল, গোবিন্দপুর, নগরহাট, মাঝিড়া, ডুমুনপুকুর, সাজাপুর, খোট্রাপাড়া, মোস্তাইল, জালশুকা, হরিতলা এলাকার ভুক্তভোগি লোকজনের সাথে এবিষয়ে কথা বললে তারা চোখের জলে এসব তথ্য জানান।
গোহাইল ইউনিয়নের খাদাশ তালুকদারপাড়া গ্রামের কয়েকটি ভুক্তভেুগী পরিবার জানায়, দাদন ব্যবসায়ীরা সুদের টাকা দেয়ার সময় গরীব লোকজনের বসতভিটা বা জায়গা জমির দলিল, পর্চা এবং স্বাক্ষর করা সাদা ষ্ট্যাম্প নেয়। এরপর টাকা দিতে কোন একটু বিলম্ব হলে বাড়তে থাকে সুদের সুদ। এভাবে চক্রাকারে সুদের জালে বন্দী হয়ে পড়ে অসহায় দরিদ্ররা। আড়িয়া ইউনিয়নের বারআন্জুল গ্রামে নাম না করার শর্তে চোখের পানি ফেলে কয়েক দিনমজুর দাদন ব্যবসায়ীদের দাম্ভিকতার বর্ণনা দেন।
বলেন, ভিটেমাটি বিক্রি করেও দাদনের টাকা শোধ করতে সম্ভব হচ্ছেনা। ফলে মানবেতর জীবন পিছু ছাড়ছেনা। স্থানীয়রা জানান, দাদন ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক নেতাদের সাথে রয়েছে গভীর আঁতাত। ফলে বিচার প্রার্থী হয়েও লাভ হয়না। যে লাউ সেই কদুই হয়। মাঝখানে শত্রæতা বাড়ে। তাই আইনের দারস্থ হতে তারা ভয় পায়।
এ প্রসংগে গোহাইল ইউপি চেয়ারম্যান আলী আতোয়ার তালুকদার ফজু জানিয়েছেন, শুধু এই ইউনিয়নেই শতাধিক দাদন ব্যবসায়ী রয়েছে। যাদের জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেক পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে এলাকা ছেড়েছে। অবৈধ হলেও প্রকাশ্যে জমাদারপুকুর এলাকায় সুদেেখারেরা একটি অফিস তৈরী করেছে। প্রতিদিন পঞ্চাশ থেকে এক লক্ষ টাকা নিয়ে বসে। গরীবদের সুদের উপর টাকা দেয়।
প্রতিমাসে গ্রাম আদালতে শুধুমাত্র দাদন সংক্রান্ত ১০-১৫টি মামলা পরিচালনা করতে হয়। আমরুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান অটল জানান, ওই ইউনিয়নে প্রায় ৪০-৫০ টি সমিতি গ্রামের আনাচে কানাচে গড়ে উঠেছে। ২০-২৫ জনে মিলে এসব সমিতি করে। তারা ঋণ দেয়ার নামে গরীবদের চুষে খাচ্ছে। দরিদ্ররা টাকা দিতে একটু হিমসিম খেলে অনাকাংখিত ঘটনা সহ সুদের টাকা আদায় করতে প্রয়োজনে সব কিছুই করছে।
জানাগেছে, ক্ষুদ্র ঋণের নামে বিভিন্ন এনজিও এর দাদন ব্যবসার কাহিনী বেশ পুরনো। তাদেরই অনুসরণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভুয়া নামে এ ব্যবসা শুরু করেছে বিভিন্ন ব্যক্তি বা সমিতি। তাদের রেজিষ্ট্রেশন বা অনুমতি নেই। জামানত হিসাবে জায়গা-জমি, কাগজপত্র, বø্যাংক চেক ও অলিখিত নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রেখে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চড়া সূদ সহ নির্ধারিত দৈনিক/সাপ্তাহিক কিস্তি পরিশোধের শর্তে বিভিন্ন ক্ষুদ্র মৎস্য ব্যবসায়ী, সবজি ব্যবসায়ী, ফুটপাতের ব্যবসায়ী ও যেকোন ধরনের ক্ষুদ্র ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী, বাসার কাজের বুয়া, রিকশাচালক, ভ্যান চালক সহ প্রভৃতি শ্রেণীর মধ্যবিত্ত লোকজনের মাঝেই এরা ক্ষুদ্র ঋণের নামে চড়া সুদের ব্যবসা পরিচালনা করছে। এরকম দাদন ব্যবসায়ী অনেকে।
তারা সুদ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন নামে লোন দিয়ে থাকে। সাইন বোর্ড বিহীন এসব প্রতিষ্ঠান। কয়েকজনে মিলে সিন্ডিকেট সৃষ্টি করে ও একত্রে টাকা গচ্ছিত করে সুদের উপর টাকা দিচ্ছে। তাদের দাম্ভিকতার কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে গরীব ও মধ্যবিত্ত শ্রেনীর মানুষ। এইসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যাক্তির কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা অনেক ।
সুদের টাকা আদান-প্রদানকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন লোকজনের সাথে ঝগড়া বিবাদ নিত্ত নৈমিÍক ঘটনা। নিঃস্ব হচ্ছে পারিবারিক অবস্থা। লোন নামীয় প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বিভিন্ন নামের শতাধিক সুদ ব্যবসায়ী রয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। ব্যক্তিগত সুদ ব্যবসায়ীর সংখ্যা সারা উপজেলায় হাজারের বেশি হবে বলে এলাকাবাসি সুত্রে জানাগেছে। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে- এসব সুদ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গ সবাই নিজেদেরকে সরকার অনুমোদিত বৈধ ব্যবসায়ী বলে দাবি করেন।
অথচ, বৈধতার প্রমাণ দেখতে চাইলে তা দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এভাবে অবৈধ দাদন ব্যবসা করে রাতারাতি বিপুল সম্পদের মালিক বনছেন দাদন ব্যবসায়ীরা। কিন্ত প্রশাসনিকভাবে এ বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি না দেয়ায় দিনদিন ঋণের জালে জড়িয়ে নি:স্ব হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। আর নীরবতার এ সুযোগে বেড়েই চলছে দাদন ব্যবসায়ীদের দুর্বৃত্তায়নের দাম্ভিকতা। বিধায় বিষয়টি প্রশাসনের আমলে নেয়া উচিত বলে এলাকার সুশীল সমাজ মনে করে।