৯ ও ১০ ই যিলহজের আমল

৯ ও ১০ ই যিলহজের আমল
হাফেজ মাও: মো: আজিজুল হক

(১) তাকবীরে তাশরীক পড়াঃ- ৯ই যিলহজের ফজর থেকে ১৩ই যিলহজের আসর নামায পর্যন্ত সর্বমোট ২৩ওয়াক্তে, ঈদের নামায ধরলে ২৪ওয়াক্তে প্রত্যেক ফরয নামাযের সালাম ফিরানোর পর একবার তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব। জামাআতে নামায হোক বা একাকী সর্বাবস্থায়ে বলতে হবে। পুরুষ হোক অথবা নারী সকলকেই বলতে হবে।

পুুরুষরা উচ্চস্বরে আর মহিলারা নিম্নস্বরে পড়বে। তাকবীরে তাশরীক এইঃ- আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।(অর্থঃ আল্লাহ সবচেয়ে বড়
আল্লাহ সবচেয়ে বড়, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নাই আর আল্লাহ সবচেয়ে বড়, আল্লাহ সবচেয়ে বড় এবং সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য)।

Pop Ads

তাকবীরে তাশরীকের ইতিহাসঃ-
তাকবীরে তাশরীক্ব আল্লাহর তিনজন সম্মানিত ও নৈকট্যপ্রাপ্ত নবী, রাসূল ও ফেরেশতার মুখনিঃসৃত বানী। হযরত ইবরাহীম (আঃ) যখন সজোরে সুতীক্ষè ছুরি হযরত ইসমাঈল (আঃ)- এর গলায় চালানো শুরু করলেন, এমন সময় হযরত জিবরাঈল (আঃ) আল্লাহর নির্দেশে আসমান থেকে দুম্বা নিয়ে সেখানে হাজির হয়ে এ ভয়াবহ দৃশ্য দেখে বলে উঠলেন, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। হযরত ইবরাহীম (আঃ) যখন আল্লাহর কুরবানী দেখলেন, তখন তিনি বলে উঠলেন, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।

আর ইসমাঈল (আঃ) যখন দেখলেন তার পরিবর্তে দুম্বা যবাই হয়ে গেছে তখন তিনি ‘আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ” বললেন। এভাবে তিনজনের যিকিরকে একত্রিত করে পরিপূর্ণ তাকবীরে তাশরীক্ব করা হয়েছে। (শামী)

(২) হজ পালন করাঃ- হজ ইসলামের অন্যতম একটি রোকন। সুতরাং যাদের উপর হজ ফরয হয়েছে
তাদেরকে অবশ্যই হজ¦ পালন করতে হবে। তাছাড়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, কবুল হজের বদলা একমাত্র জান্নাত। (বুখারী, মুসলিম) অন্যত্র বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে হজ করে এবং হজের প্রাক্কালে অশ্লীল কথা, কাজ ও পাপ থেকে বিরত থাকে, সে নবজাত শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে বাড়িতে ফিরে আসে।

(বুখারী ও মুসলিম) হজ আদায়কারী ৮ই যিলহজ ইহরাম অবস্থায় তালবিয়া পড়তে পড়তে মিনায় যাবে। সেখানে যোহর, আসর, মাগরিব, ইশা ও ফজর পড়বে। ৯ই যিলহজ ফজর পড়ে সূর্যোদয়ের পর আরাফাতের উদ্দেশ্যে রওনা হবে।

আরাফায় যোহর ও আসর পড়বে এবং সূর্যাস্ত পর্যন্ত দুআ-দরূদ-ইস্তেগফার তালবিয়া পাঠ করতে থাকবে।
সূর্যাস্তের পর মাগরিবের নামায না পড়েই মুযদালিফার উদ্দেশ্যে রওনা হবে। মুযদালিফায় পৌঁছে মাগরিব ও ইশা এক আযান ও এক ইকামাতে আদায় করবে। রাত সেখানেই কাটাবে। এখান থেকেই ৭০টি কংকর সংগ্রহ করবে। মুযদালিফায় ফজরের নামায পড়ে একটু ফর্সা হলে আবার মিনায় আসবে। মিনায় এসে শুধু বড় জামারায় ৭টি কংকর মারবে।

এরপর যার উপর কুরবানী ওয়াজিব সে কুরবানী করে হলক বা কসর করে হালাল হয়ে যাবে। তারপর তাওয়াফে
যিয়ারতের উদ্দেশ্যে মক্কায় যাবে এবং যথারীতি তাওয়াফে যিয়ারত সেরে, সায়ী করে মিনায় ফিরবে। সেখানে ১১ ও ১২ই যিলহজ পরপর তিন শয়তানকে ৭টি করে কংকর নিক্ষেপ করবে ব্যস হজ সম্পন্ন হয়ে গেল। বাকী থাকল শুধু বিদায়ী তাওয়াফ যা আদায় করা ওয়াজিব।

(৩) ঈদের রাতে ইবাদত করাঃ- রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার রাতে
জাগরিত থেকে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকবে, তাহলে যেদিন অন্যান্য দিল মরে যাবে সেদিন তার দিল মরবে না, অর্থাৎ কিয়ামতের দিনের আতংকের কারণে অন্যান্য লোকের অন্তর ঘাবড়ে গিয়ে মৃতপ্রায় হয়ে যাবে, কিন্তু দুই ঈদের রাত্রে জাগরণকারীর অন্তর তখন ঠিক থাকবে-ঘাবড়াবে না। (ইবনে মাজাহ)

(৪) কুরবানীর দিনের সন্নাতসমূহ আদায় করাঃ- (ক) খুব সকালে ঘুম থেকে উঠা।  (খ) ফজরের নামায মহল্লার মসজিদে পড়া। (গ) মেছওয়াক করা। (ঘ) গোসল করা। (ঙ) শরীয়ত অনুমোদিত পোষাক পরিচ্ছদ পরিধান করা। (চ) সাধ্যমত উত্তম পোষাক পরিধান করা। (ছ) আতর সুগন্ধি ব্যবহার করা। (জ) কোন কিছু না খেয়ে ঈদগাহে যাওয়া।

(ঝ) সর্ব প্রথম কুবানীর গোস্তু হতে খাওয়া। (ঞ) ঈদের নামায (ওযর না থাকলে) মসজিদে না পড়ে ঈদের মাঠে পড়া। (ট) ওযর না থাকলে ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া। (ঠ) উচ্চস্বরে তাকবীর পড়তে পড়তে ঈদগাহ পর্যন্ত যাওয়া। (ড) এক রাস্তায় ঈদগাহে যাওয়া, অন্য রাস্তায় প্রত্যাবর্তন করা। (ঢ) সকাল সকালে ঈদগাহে যাওয়া। (ণ) ঈদুল আজহার নামায যথা সম্ভব সকাল সকালে পড়া। (বেহেস্তী গাওহার)। (৫) ঈদের নামাযঃ- ১০ই যিলহজ ২রাকাত শোকরানা নামায পড়া ওয়াজিব। যাকে ঈদুল আযহার নামায বলা হয়।

ঈদের নামায পড়ার নিয়মঃ-
প্রথমে নিয়ত করবে “আমি আল্লাহর ওয়াস্তে ঈদুল আযহার দুই রাকাআত ওয়াজিব নামায ছয় তাকবীরের সহিত এই ইমামের পিছনে পড়ছি” অতঃপর “আল্লাহু আকবার” বলে হাত বাঁধবে এবং ছানা পড়ে তিনবার এই নিয়মে “আল্লাহু আকবার” বলবে যে, প্রতিবার “আল্লাহু আকবার” বলার সময় উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠাবে।

আর প্রতিবার “আল্লাহ আকবার” বলার পর এতটুকু সময় অপেক্ষা করবে, যে সময়ে তিনবার “সুবহানাল্লাহ” বলা যায় এবং ১ম ও ২য় তাকবীরের পর হাত বাঁধবে না বরং ৩য় তাকবীরের পর হাত বাঁধবে। অন্য জেহরী নামাযের ন্যায় সূরা কেরাআত পড়ে ১ম রাকাআত শেষ করে ২য় রাকাআতে কেরাআতের পর্ব শেষ করবে।

অতঃপর ১ম রাকাআতের নিয়মানুসারে তিনটি তাকবীর বলবে এবং প্রতি তাকবীরের পর হাত ছেড়ে দিবে। এর পর ৪র্থ তাকবীর বলে রুকুতে যাবে। এভাবে নামায শেষ করে ইমাম মেম্বারে দাঁড়িয়ে খুৎবা আরম্ভ করবে তবে জুমআর নামাযের ন্যায় মেম্বরে উঠে প্রথমে একটু বসবে না বরং দুই খুৎবার মাঝে একটু বসবে। আর ঈদের নামাযে ১ম রাকাআতে“সূরা আ’লা” ও ২য় রাকাআতে“সূরা গাশিয়া”পড়া সুন্নাত।(ফাতোয়া আলমগীরি-১/১৫০)।