যাকাত যাদেরকে দেওয়া যাবে

যাকাত যাদেরকে দেওয়া যাবে
হাফেজ মাও আলহাজ্ব মো: আজিজুল হক                                                                                        কুরআন মজীদে যাকাতের খাত নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে। এখাত ছাড়া অন্য কোথাও যাকাত প্রদান করা জাযয়ে নয়। ইরশাদ হয়েছে-যাকাত তো কেবল নিঃস্ব,অভাবগ্রস্ত ও যাকাতের কাজে নিযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য,যাদের মনোরঞ্জন উদ্দেশ্য তাদের জন্য,দাসমুক্তির জন্য,ঋণগ্রস্তদের জন্য,আল্লাহর পথে জিহাদকারী ও মুসাফিরের জন্য। এ আল্লাহর বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ,প্রজ্ঞাময়।(সূরাঃতাওবা,আয়াতঃ৬০)
১.যে দরিদ্র ব্যক্তির কাছে অতি সামান্য মাল আছে, অথবা কিছুই নেই,এমনকি একদিনের খোরাকীও নেই এমন লোক শরীয়তের দৃষ্টিতে গরীব। তাকে যাকাত দেওয়া যাবে।(বেহেশতী যেওর)
২.যে ব্যক্তির কাছে যাকাতযোগ্য সম্পদ অর্থাৎ সোনা-রূপা,টাকা-পয়সা,বাণিজ্যদ্রব্য ইত্যাদি নিসাব পরিমাণ আছে সে শরীয়তের দৃষ্টিতে ধনী।  তাকে যাকাত দেওয়া যাবে না।(আহকামুল ফিকহ্)
৩.অনুরূপভাবে যে ব্যক্তির কাছে যাকাতযোগ্য সম্পদ নিসাব পরিমাণ নেই,কিš‘ অন্য ধরনের সম্পদ যাতে যাকাত আসে না যেমন ঘরের আসবাবপত্র,পরিধেয় বস্ত্র,জুতা,গার্হ¯’ সামগ্রী ইত্যাদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত এবং নিসাব পরিমাণ আছে তাকেও যাকাত দেওয়া যাবে না।(মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস,৭১৫৬)এই ব্যক্তির উপর সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব।
৪.যে ব্যক্তির কাছে যাকাতযোগ্য সম্পদও নিসাব পরিমাণ নেই এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত অন্য ধরনের মাল-সামানাও নিসাব পরিমাণ নেই এই ব্যক্তিকে যাকাত দেওয়া যাবে।(মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস১০৫৩৬)
৫.যে ব্যক্তি এমন ঋণগ্র¯’ যে,ঋণ পরিশোধ করার পর তার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে না তাকে যাকাত দেওয়া যাবে। (আহকামে যিন্দেগি)
৬.কোনো ব্যক্তি নিজ বাড়িতে নিসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী,কিš‘ সফরে এসে অভাবে পড়ে গেছে বা মাল-সামান চুরি হয়ে গেছে এমন ব্যক্তিকে যাকাত দেওয়া যাবে। তবে এ ব্যক্তির জন্য শুধু প্রয়োজন পরিমাণ গ্রহণ করাই জায়েয,এর বেশি নয়।(আহকামুল ফিকহ্)
৭.যাকাতের টাকা এমন দরিদ্রকে দেওয়া উত্তম যে দ্বীনদার। দ্বীনদার নয় এমন লোক যদি যাকাতের উপযুক্ত হয় তাহলে তাকেও যাকাত দেওয়া যাবে। কিš‘ যদি প্রবল ধারণা হয় যে,যাকাতের টাকা দেওয়া হলে লোকটি সে টাকা গুনাহের কাজে ব্যয় করবে তাহলে তাকে যাকাত দেওয়া জায়েয নয়।(আহকামুল ফিকহ্)
৮.যাকাত শুধু মুসলমানদেরকেই দেওয়া যাবে। হিন্দু,বৌদ্ধ,খৃষ্টান বা অন্য কোনো অমুসলিমকে যাকাত দেওয়া হলে যাকাত আদায় হবে না। তবে নফল দান-খায়রাত অমুসলিমকেও করা যায়।(মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস৭১৬৬)
৯.যাকাতের টাকা যাকাতের হক্বদারদের নিকট পৌঁছে দিতে হবে। যাকাতের নির্ধারিত খাতে ব্যয় না করে অন্য কোনো জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হলে যাকাত আদায় হবে না। যেমন রাস্তা-ঘাট,পুল নির্মাণ করা,কুপ খনন করা,বিদ্যুৎ-পানি ইত্যাদির ব্যব¯’া করা ইত্যাদি।(বেহেশতী যেওর)
১০.যাকাতের টাকা দ্বারা মসজিদ-মাদরাসা নির্মাণ করা,ইসলাম প্রচার,ইমাম-মুয়াজ্জিনের বেতন-ভাতা দেওয়া,ওয়াজ মাহফিল করা,দ্বীনি বই-পুস্তক ছাপানো,ইসলামী মিডিয়া তথা রেডিও,টিভির চ্যানেল করা ইত্যাদিও জায়েয নয়। মোটকথা,যাকাতের টাকা এর হক্বদারকেই দিতে হবে। অন্য কোনো ভালো খাতে ব্যয় করলেও যাকাত আদায় হবে না।(মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস৬৯৪৭)
১১.যাকাত আদায় হওয়ার জন্য শর্ত হল,উপযুক্ত ব্যক্তিকে মালিক বানিয়ে দেওয়া। যাতে সে নিজের খুশি মতো তার প্রয়োজন পূরণ করতে পারে। এরূপ না করে যদি যাকাতদাতা নিজের খুশি মতো দরিদ্র লোকটির কোনো প্রয়োজনে টাকাটি খরচ করে যেমন,তার ঘর সংস্কার করে দিল,টয়লেট ¯’াপন করে দিল কিংবা পানি বা বিদ্যুতের ব্যব¯’া করল তাহলে যাকাত আদায় হবে না।(রদ্দুল মুহতার২/২৫৭) নিয়ম হল,যাকাতের টাকা দরিদ্র ব্যক্তির মালিকানায় দিয়ে দেওয়া। এরপর যদি সে নিজের খুশি মতো এসব কাজেই ব্যয় করে তাহলেও যাকাতদাতার যাকাত আদায় হয়ে যাবে।
১২.আত্মীয়-স্বজন যদি যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হয় তাহলে তাদেরকে যাকাত দেওয়াই উত্তম। ভাই,বোন,ভাতিজা,ভাগনে,চাচা,মামা,ফুফু,খালা এবং অন্যান্য আত্মীয়দেরকে যাকাত দেওয়া যাবে।(মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস৭১৬০) দেওয়ার সময় যাকাতের উল্লেখ না করে মনে মনে যাকাতের নিয়ত করলেও যাকাত আদায় হয়ে যাবে। এ ধরনের ক্ষেত্রে এটাই উত্তম।
১৩.নিজ পিতা-মাতা,দাদা-দাদী, নিজ পিতা-মাতা,দাদা-দাদী,নানা-নানী,পরদাদা প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ যারা তার জন্মের উৎস তাদেরকে নিজের যাকাত দেওয়া জায়েয নয়। এমনিভাবে নিজের ছেলে-মেয়ে,নাতি-নাতিন এবং তাদের অধন্তনকে নিজ সম্পদের যাকাত দেওয়া জায়েয নয়। স্বামী এবং স্ত্রী একে অপরকে যাকাত দেওয়া জায়েয নয়।(রদ্দুল মুহতার২/২৫৮)
১৪.বাড়ির কাজের ছেলে বা কাজের মেয়েকে যাকাত দেওয়া জায়েয যদি তারা যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হয়। তবে কাজের পারিশ্রমিক হিসেবে যাকাতের অর্থ দিলে যাকাত আদায় হবে না। কেউ কেউ কাজের লোক রাখার সময় বলে,মাসে এত টাকা করে পাবে আর ঈদে একটা বড় অংক পাবে। এক্ষেত্রে ঈদের সময় দেওয়া টাকা যাকাত হিসাবে প্রদান করা যাবে না। সেটা তার পারিশ্রমিকের অংশ বলেই ধর্তব্য হবে।(আহকামুল ফিকহ্)
১৫.কোনো লোককে যাকাতের উপযুক্ত মনে হওয়ায় তাকে যাকাত দেওয়া হল,কিš‘ পরবর্তীতে প্রকাশ পেল যে,লোকটির নিসাব পরিমাণ সম্পদ রয়েছে তাহলেও যাকাত আদায় হয়ে যাবে। পুনরায় যাকাত দিতে হবে না। তবে যাকে যাকাত দেওয়া হয়েছে সে যদি জানতে পারে যে,এটা যাকাতের টাকা ছিল সেক্ষেত্রে তার ওপর তা ফেরৎ দেওয়া ওয়াজিব।(বেহেশতী য়েওর)
১৬.যাকাত দেওয়ার পর যদি জানা যায় যে,যাকাত-গ্রহীতা অমুসলিম ছিল তাহলে যাকাত আদায় হবে না। পুনরায় যাকাত দিতে হবে।(বেহেশতী যেওর)
১৭. গরীব অপ্রাপ্তবয়স্ক(বুঝমান)ছেলে-মেয়েকে যাকাত দেওয়া যায়।(রদ্দুল মুহতার ২/২৫৭)