গাজায় তিন ধাপে চলবে ইসরাইলি অভিযান

64
গাজায় তিন ধাপে চলবে ইসরাইলি অভিযান

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় তিন ধাপে অভিযান পরিচালনা করবে ইসরাইল। এ কথা বলেছেন ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্ত। এ ছাড়া এই যুদ্ধে ইসরাইলের লক্ষ্য নিয়েও কথা বলেছেন তিনি। শুক্রবার তেল আবিবে ইসরাইলি পার্লামেন্ট নেসেটের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির বৈঠকে যুদ্ধের লক্ষ্যসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি। গ্যালান্ত জানিয়েছেন, তাদের লক্ষ্য হলো হামাসকে সামরিকভাবে দুর্বল করে দেওয়া, হামাসের সরকার পরিচালনার সক্ষমতা ধ্বংস করা এবং গাজায় নতুন ‘নিরাপত্তা সরকার’ প্রতিষ্ঠা করা।

ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বৈঠকে উপস্থিত কমিটির সদস্যদের যুদ্ধের লক্ষ্য নিয়ে বলেন, ‘আমরা (তিন ধাপের) প্রথম ধাপে রয়েছি, যেটিতে একটি সামরিক অভিযান চলছে। এরপর হবে স্থল হামলা। এর মাধ্যমে হামাসকে পরাজিত ও তাদের অবকাঠামো ধ্বংস করা হবে।’

Pop Ads

তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের দ্বিতীয় ধাপেও হামলা হবে। তবে ওই হামলার তীব্রতা প্রথম ধাপের চেয়ে কম থাকবে। কারণ ওই সময় হামাসের প্রতিরোধের পকেটগুলো ধ্বংস করা হবে।’ আর যুদ্ধের তৃতীয় ধাপ নিয়ে ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এই ধাপটি হবে গাজা উপত্যকায় নতুন একটি নিরাপত্তা সরকার প্রতিষ্ঠা করা। গাজায় প্রতিদিনকার জীবন নিয়ে ইসরাইলের যে দায়িত্ব রয়েছে, সেটির অবসান ঘটানো এবং ইসরাইল ও গাজার আশপাশের বাসিন্দাদের জন্য নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করা।’

গাজায় শরণার্থী শিবিরে বিমান হামলা, ১৮ ফিলিস্তিনি নিহত ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার একটি শরণার্থী শিবিরেও বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এই হামলায় আরও ১৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া হামলায় আহত হয়েছেন আরও বিপুলসংখ্যক মানুষ। টানা দুই সপ্তাহ ধরে ইসরাইল অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে এবং অবিরাম এই হামলা থেকে স্কুল, হাসপাতাল ও শরণার্থী শিবিরও বাদ যাচ্ছে না।

আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত জাবালিয়া ক্যাম্পে বেশ কয়েকটি বাড়ি লক্ষ্য করে ইসরাইলি বিমান হামলায় অন্তত ১৮ ফিলিস্তিনি নিহত হন বলে গাজার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জানিয়েছে। মন্ত্রণালয়টি আরও জানিয়েছে, জাবালিয়া ক্যাম্পের আনোয়ার আজিজ মসজিদ স্কোয়ারে বেশ কয়েকটি বাড়ি লক্ষ্য করে চালানো বিমান হামলায় বিপুলসংখ্যক মানুষও আহত হয়েছেন।

গাজার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার অফিসিয়াল ফেসবুক অ্যাকাউন্টে বেশকিছু ছবি প্রকাশ করেছে, যেখানে কেমাল আদওয়ান হাসপাতালে (উত্তর গাজার) সিভিল ডিফেন্স এবং মেডিকেল টিমগুলোকে নিহতদের উদ্ধারের পাশাপাশি আহতদের সেবা দিতে দেখা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, ‘হামলার পর বিস্তৃত ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যে কয়েক ডজন আহত মানুষ ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়ির ধ্বংসস্ত‚পের নিচে আটকে আছেন।’

পশ্চিম তীরেও শরণার্থী শিবিরে হামলা, নিহত ১৩ ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর অঞ্চলের তুলকারেম শহরের একটি ফিলিস্তিনি শরণার্থী ক্যাম্পে অভিযান চালিয়েছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সেনা সদস্যরা। বিধ্বংসী সেই অভিযানে পাঁচ শিশুসহ ১৩ জন বেসামরিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। শুক্রবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইসরাইলের দখলদার সেনাবাহিনী বৃহস্পতিবার তুলকারেমের নূর শামস শরণার্থী শিবিরে বিধ্বংসী অভিযান চালিয়েছে। এতে ওই শিবিরের ১৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।’

বৃহস্পতিবার নূর শামস শরণার্থী শিবির ও আশপাশের এলাকায় রাতভর অভিযান শেষে শুক্রবার সকালে সেনা সদস্যরা ওই এলাকা ত্যাগ করে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে পশ্চীম তীরের স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেল ‘প্যালেস্টাইন টিভি’।

ইসরাইল-হামাসের চলমান সংঘতের আঁচ পৌঁছেছে ফিলিস্তিনের অপর ভূখণ্ড পশ্চিম তীরেও। লড়াই শুরুর পর থেকেই পশ্চিম তীরের বিভিন্ন শহর ও গ্রামে ইসরাইলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছেন ফিলিস্তিনিরা। সেসব বিক্ষোভ কঠোর হাতে দমনও করছে ইসরাইলি সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ১৩ দিনে ইসরাইলি বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে পশ্চিম তীরে নিহত হয়েছেন অন্তত ৬১ জন এবং আহত হয়েছেন এক হাজার ২০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি। এ ছাড়া ৭ অক্টোবর থেকে প্রতি রাতে পশ্চিম তীরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে ইসরাইলি সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। সেসব অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৯ শতাধিক ফিলিস্তিনিকে।

গাজায় গ্রিক অর্থোডক্স গির্জায় বিমান হামলা, নিহত ১৮ গাজায় শত শত বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আশ্রয় নেওয়া একটি গ্রিক অর্থোডক্স গির্জায় বৃহস্পতিবার রাতে ইসরাইলি বিমান হামলা হওয়ার কথা জানিয়েছেন ‘দি অর্থোডক্স প্যাট্রিয়ার্কেট অব জেরুজালেম’ কর্তৃপক্ষ ও ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। গাজার হামাস পরিচালিত সরকারি গণমাধ্যম জানায়, বিমান হামলায় ১৮ জন খ্রিষ্টান ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তবে গির্জা থেকে মৃতের সংখ্যা সম্পর্কে কোনোকিছু জানানো হয়নি।

ইসরাইলের সেনাবাহিনী বলেছে, গেরিলা কমান্ড সেন্টারে বিমান হামলায় গির্জার একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলেছেন, অন্তত ৫০০ মুসলিম ও খ্রিষ্টান ইসরাইলের বোমা হামলা থেকে বাঁচতে গির্জাটিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। অর্থোডস্ক গির্জা এক বিবৃতিতে বলেছে, দি অর্থোডক্স প্যাট্রিয়ার্কেট অব জেরুজালেম’ কর্তৃপক্ষ গাজায় গির্জা চত্বরে হামলার ঘটনার কঠোর নিন্দা জানিয়েছে।’

গির্জায় হামলাস্থলের ভিডিওতে দেখা গেছে, রাতে আহত একটি বালককে ধ্বংসস্ত‚প থেকে বের করে নিয়ে আসা হচ্ছে। উদ্ধারকর্মীরা জানান, ওপরের তলায় দুইজন বেঁচে গেছেন। আর নিচের তলায় যারা ছিলেন, তারা মারা গেছেন, নয়তো ধ্বংসস্ত‚পে চাপা পড়ে আছেন।
গাজার ২৩ লাখ অধিবাসীর আনুমানিক এক হাজার জনই খ্রিষ্টান। তাদের বেশির ভাগই গ্রিক অর্থোডক্স। ইসরাইলের সেনাবাহিনী বলছে, তারা গির্জার কাছের একটি কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টারে বিমান হামলা চালিয়েছে। ওই সেন্টার থেকে ইসরাইলে হামলা চালানো হতো। কমান্ড সেন্টারটিতে আইডিএফের হামলার ফলে ওই এলাকায় অবস্থিত গির্জাটির একটি দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে হতাহতের ঘটনা সম্পর্কে আমরা অবগত। ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

গাজায় নিহতের সংখ্যা চার হাজার ছাড়াল ইসরাইলিদের অব্যাহত ও নির্বিচার বোমা হামলায় ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নিহতের সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কিদরা শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে মৃত্যুর নতুন সংখ্যা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, গাজায় ইসরাইলের হামলায় এখন পর্যন্ত চার হাজার ১৩৭ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে শিশুই হলো এক হাজার ৬৬১ জন। এ ছাড়া ইসরাইলের হামলায় ১৩ হাজার ২৬০ জন আহত হয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা আরও জানিয়েছেন, গাজায় বর্তমানে চার হাজার মানুষ নিখোঁজ আছেন।

গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলের অবৈধ বসতি লক্ষ্য করে হামাস হামলা চালানোর পরই গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী। ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি শুক্রবার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন, তাদের সেনারা গাজায় যে হারে হামলা চালাচ্ছে, এমন তীব্র হামলা গত কয়েক দশকে দেখা যায়নি। তিনি বলেছেন, ‘বিমান বাহিনীর যুদ্ধযন্ত্র খুব ভালো কাজ করছে। বিমান বাহিনী সাউদার্ন কমান্ড, স্থল আর্ম, গোয়েন্দা দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে। এটি প্রশংসনীয়।’ ইসরাইলের অব্যাহত এই বোমা হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না মসজিদ, গির্জা, বাড়ি-ঘর কোনো কিছুই।