দিল্লি-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনার পর হাসিনা সরকারের স্বস্তি

74
দিল্লি-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনার পর হাসিনা সরকারের স্বস্তি

নয়াদিল্লিতে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র ‘টু প্লাস টু’ সংলাপে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারত ‘খুব স্পষ্টভাবে’ তাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা। তার এ মন্তব্যের পরে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে।

শুক্রবার (১০ নভেম্বর) বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে কোয়াত্রা বলেন, আমরা আঞ্চলিক ইস্যুগুলো নিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনা করেছি এবং বাংলাদেশের বিষয়ে আমরা সংলাপে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি খুব স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছি।

Pop Ads

তিনি বলেন, তৃতীয় কোনো দেশের নীতি নিয়ে মন্তব্য করা আমাদের জায়গা নয়। বাংলাদেশের নির্বাচন তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং তাদের ভবিষ্যত নির্ধারণের দায়িত্ব জনগণের।

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের সঙ্গে পঞ্চম টু প্লাস টু মিনিস্ট্রিয়াল ডায়ালগে অংশ নিয়েছেন।

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অবস্থান স্পষ্ট করলো ভারতবাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অবস্থান স্পষ্ট করলো ভারত
ভারত ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সম্মান করে’ বলে কোয়াত্রার মন্তব্যে শেখ হাসিনার প্রতি নয়াদিল্লির সমর্থনের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। বেশ কয়েকজন পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ভারতের এই মন্তব্যে মার্কিন প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে একটি বার্তা দিয়েছে যে, প্রতিবেশী দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয় থেকে তাদের দূরে থাকা উচিত।

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার অজুহাতে মার্কিন কর্তৃপক্ষ, বিশেষ করে বাংলাদেশে পিটার হাসের নেতৃত্বাধীন মিশনকে দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ।

যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনযুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন
বাংলাদেশে গত দুটি সাধারণ নির্বাচন যেভাবে হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন’ অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে গত মে মাসে ঘোষিত বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি আকারে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে প্রথম পদক্ষেপকে ‘হাত ঘোরানো’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

কয়েক মাস ধরে পিটার হাসের আচরণ- তিনি বিরোধী দলগুলোর সাথে বেশ কয়েকটি বৈঠক করেছেন এবং নির্বাচন কমিশনকে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপের জন্য রাজি করানোর চেষ্টা করেছেন। এটিকে কোনো বিদেশি কূটনীতিকের ‘অশোভন কার্যকলাপ’ হিসাবে দেখা হয়েছে। এতে ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও তার মিত্র জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের বিরোধী দল যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপকে ব্যবহার করে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে।

এ অবস্থায় ঢাকার ক্ষমতাসীনদের মধ্যে জল্পনা-কল্পনা চলছিল যে, ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একমত কিনা। ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী তার সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে যা বলেছিলেন, তা পুনর্ব্যক্ত করে কোয়াত্রার মন্তব্য শুক্রবার এই সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়েছে।

বাংলাদেশের নির্বাচনকে তাদের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে নয়াদিল্লীর বার্তাকে প্রতিবেশীর (বাংলাদেশ) প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গির স্পষ্ট প্রত্যাখ্যান হিসেবে দেখা হচ্ছে।

কোয়াত্রা বলেন, ‘বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও অংশীদার হিসেবে আমরা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সম্মান করি এবং একটি স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল দেশের রূপকল্পকে সমর্থন অব্যাহত রাখবো।’ গত ২৮ অক্টোবর বিরোধী দলের সহিংস বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে এই মন্তব্য এসেছে- যেখানে এক পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়, প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা চালানো হয় এবং বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে মারধর করা হয়।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও তৃণমূল বিএনপির বর্তমান সভাপতি শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, আমরা ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের বক্তব্যকে স্বাগত জানাই। কারণ বাংলাদেশের জন্য স্থিতিশীলতা মৌলিক, শান্তি আবশ্যক এবং প্রগতিশীল রাজনীতি হচ্ছে- যার জন্য দেশ সবসময় লড়াই করেছে। তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা- বার্তাটি মার্কিন সরকার ভালোভাবে গ্রহণ করেছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও শেখ হাসিনার বিশেষ সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, তিনি (কোয়াত্রা) আজ যা বলেছেন তার আমরা প্রশংসা করি।

তিনি বলেন, আমাদের দেশ সবার প্রতি বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরিতা নয়- এমন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে, যা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণয়ন করেছিলেন। তিনি (কোয়াত্রা) যা বলেছেন তার আমরা প্রশংসা করি।