বন্ধ্যত্ব চিকিৎসা : সমস্যা নির্ণয় করা জরুরি

6
বন্ধ্যত্ব চিকিৎসা : সমস্যা নির্ণয় করা জরুরি

বন্ধ্যত্ব হলো এমন একটি অবস্থা, যেখানে একটি দম্পতি জন্ম নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা ব্যবহার না করে এক বছর নিয়মিত সহবাস করার পরও যদি সন্তান ধারণে সক্ষম না হন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার বিভিন্ন জটিলতা, যেমন—ঘন ঘন গর্ভপাত বা মৃত সন্তান প্রসব করা ইত্যাদি বন্ধ্যত্বের মধ্যেই পড়ে।

প্রধান কারণ

Pop Ads

বন্ধ্যত্বের জন্য ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে স্ত্রীর সমস্যা, ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে স্বামীর শারীরিক সমস্যা আর বাকি ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে দুজনেরই সমস্যা দায়ী। কিন্তু ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে সমস্যা অজানা থেকে যায়।

নারীর বন্ধ্যাত্বের কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে—

* অনিয়মিত ডিম্বস্ফোটন বা ডিম না ফোটা, যা পিসিওএস বা পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম রোগে বেশি হয়। ওভারির রিজার্ভ কমে যাওয়া বা ডিমিনিশড ওভারিয়ান রিজার্ভ। মেয়েদের ক্ষেত্রে ৩০ বছরের পর তাঁর ডিমের সংখ্যা বা ওভারিয়ান রিজার্ভ কমতে থাকে। অনেকের অল্প বয়সেই ডিমের রিজার্ভ কমে যায়।

পরিবেশদূষণ, হরমোন অটো-অ্যান্টিবডি এটির অন্যতম কারণ।

* অ্যান্ডমেট্রিওসিস, পিআইডি বা প্রজননতন্ত্রে ইনফেকশন। হরমোনজনিত সমস্যা এবং প্রজনন অঙ্গের সঙ্গে জড়িত সমস্যাগুলো। যেমন—ফ্যালোপিয়ান টিউবে খুঁত বা বাধা (সাধারণত সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড সংক্রমণ বা অ্যান্ডমেট্রিওসিসের কারণে হয়)।

* থাইরয়েড অথবা পিটুইটারি গ্রন্থির সমস্যা ইত্যাদি।

পুরুষদের বন্ধ্যত্বের কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে

* টেস্টিসে শুক্রাণুবাহক টিউবে বাধা।

* প্রজননতন্ত্রের ইনফেকশন।

* বীর্য তৈরি না হওয়া, বীর্যপাত না করতে পারা।

* বিভিন্ন হরমোনজনিত সমস্যা।

এসব কারণে বীর্য পরিমাণে কম হয়। অস্বাভাবিক গঠনের বীর্য বেশি থাকে। অনেক সময় বীর্যরসে কোনো বীর্যই থাকে না।

* ছেলেদের বীর্যের মান ও সংখ্যা ৪০ বছর বয়স থেকে কমতে থাকে। তাই এরপর বন্ধ্যত্ব যেমন বাড়তে থাকে, তেমনি জন্মগত ত্রুটিযুক্ত বাচ্চা জন্মের আশঙ্কাও বেড়ে যায়।

সমস্যা নির্ণয়

* কোনো দম্পতির একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ মেডিক্যাল ইতিহাস, শারীরিক পরীক্ষা এবং সন্দেহজনক রোগ নির্ণয় নিশ্চিত করার জন্য নারী-পুরুষ উভয়ের বিভিন্ন ল্যাবরেটরি পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এটির কারণ নির্ণয় করা যায়।

* মেয়েদের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য লক্ষণগুলো হলো অনিয়মিত মাসিক, মাসিকে ব্যথা, মুটিয়ে যাওয়া শরীরে অস্বাভাবিক লোম বৃদ্ধি ইত্যাদি।

বন্ধ্যত্ব সমস্যার চিকিৎসা

* প্রয়োজনীয় ওষুধ, যা ডিম্বের উন্নতি ও ডিম্বস্ফোটন সংঘটিত করে সেগুলো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে।

* যৌন সহবাসের শিক্ষা।

* অত্যাধুনিক ইন্টারভেনশন চিকিৎসা

* আইইউআই : সচল শুক্রাণুর একটি উচ্চ একাগ্রতা অর্জনের জন্য ইনসেমিনেশন এবং ওয়াশিংয়ের দ্বারা সার্ভিক্সের বাইপাস করতে এটি তৈরি করা হয়। এটি সরাসরি জরায়ুগহ্বরে স্থাপন করা হয়।

* ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) যেখানে ডিম শুক্রাণুর দ্বারা শরীরের বাইরে ফার্টিলাইজড বা উর্বর করা হয়।

পরামর্শ দিয়েছেন

ডা. সুমাইয়া আক্তার

প্রসূতি, স্ত্রীরোগ, বন্ধ্যত্ব ও প্রজনন হরমোন বিশেষজ্ঞ এবং ল্যাপারোস্কপিক সার্জন

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা