সরকারি চাল কিনে মাছ ব্যবসায়ী কারাগারে !

সুপ্রভাত বগুড়া (অন্তর আহম্মেদ নওগাঁ): নওগাঁর ধামইরহাটে প্রশাসনের মাধ্যমে দলীয় ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তন্ময় ভৌমিক, নওগাঁ প্রতিনিধি নওগাঁর ধামইরহাটে বিক্রি করা ত্রাণের ৬ বস্তা চাল ক্রয় ও মজুদ রাখার অপরাধে ওমর ফারুক নামে এক মাছ ব্যবসায়ীর ৭দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত।

বুধবার বিকেলে উপজেলার উমার ইউনিয়নের বিহারীনগর গ্রামের এই কারাদন্ডের পর স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে প্রশাসনের মাধ্যমে দলীয় ক্ষমতা অপব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে।

Pop Ads

পূর্বশত্রুতার জের ধরে প্রশাসনের মাধ্যমে ক্রেতা ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট শাহীন মিয়া ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে কারাদন্ডাদেশ দিলেও বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এলাকাবাসি তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। সেই সাথে ক্ষোভেরও সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, সরকারি ওএমএস ও ভিজিডি’র চাল বিক্রি, ক্রয় ও মজুদ রাখা নিয়ম না থাকলেও অনেক উপকারভোগী মোটা জাতের চালগুলো বিক্রি করে থাকেন। সেই কিনে নেন মাছ চাষি ও গরুর খামারীরা।

নওগাঁর ধামইরহাটের উমার ইউনিয়ন পরিষদের বিহারীনগর গ্রামের দুই উপকারভোগীসহ কয়েকজন তাদের পরিবারের সমস্যার কারণেই নিজেরাই সরকারি মোটা জাতের চাল বিক্রি করে খাবারের জন্যে চিকন জাতের কিনেন।

উপকারভোগী আমজাদ হোসেনের স্ত্রী বুলু আরা জানান, তার ছোট ছেলে টনসেল রোগে আক্রান্ত। সরকারি দেওয়া মোটা জাতের চাল খেতে না পারায় তা ৮শ’ টাকায় বিক্রি করি ওমর ফারুকের কাছে। এর মধ্যে ৫শ’ টাকা দিয়ে চিকন জাতের চাল কিনি আর বাঁকি টাকা দিয়ে ঔষধ কিনেন।

আরেক উপকারভোগী মুনছুরের মা মনোয়ারা জানান, ১০ কেজি দরে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৩০ কেজি চাল পেয়েছেন। পরিবারের অসুখ ও অন্য খরচ মেটাতে ৮শ’ টাকা দিয়ে বিক্রি করেন। স্থানীয়রা জানান, একই গ্রামের ইউপি সদস্য মামুনুর রেজা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

এতে রেজা জয়ী হলে মোহাম্মদ আলীর তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু করেন। এরই অংশ হিসেবে মোহাম্মদ আলী দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ইউপি সদস্য মামুনুর রেজা ও রেজার সহযোদ্ধা ফারুকের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসনের কাছে গত ২৮ এপ্রিল ত্রাণের চাল ও কম্বল আত্মসাতের অভিযোগ করেন।

উমার ইউপি সদস্য মামুনুর রেজা জানান, মোহাম্মদ আলীর ইউনি নির্বাচনে পরাজয় হওয়ার পর থেকে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে। এর মধ্যে ওয়ার্ড আ’লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ারপর এই ষড়যন্ত্রের পরিমাণ আরো বেড়ে যায়। এরই অংশ হিসেবে ২৮ এপ্রিল তার ও ফারুকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেন।

পরদিন প্রশাসনিক কর্মকর্তার উপস্থিতিতেই আমার (মামুনুর রেজা) ও ফারুকের বাড়িঘর আইন বর্হিভূত তল্লাশি করেন ওয়ার্ড সভাপতি মোহাম্মদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম। ওমর ফাকুকের বড় ভাই বকুল হোসেন জানান, ফারুক দুটি পুকুরে মাছ চাষ করেন।

পাশাপাশি ইলেক্ট্রনিক্সের দোকান রয়েছে। তিনি কোন চাল ব্যবসায়ীর সাথে জড়িত নন। ত্রাণের মোটা জাতের চাল যারা খান না তাদের কাছ থেকে চালগুলো মাছের খাদ্য হিসেবে কিনেছেন। ওমর ফাকুকের বড় ভাই জহুরুল ইসলাম জানান, বুধবার দুপূরে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পূর্ব শত্রুতার জের ধরে তাদের বাড়ি তল্লাশি করেন।

বাড়ি থেকে উদ্ধারকৃত চালগুলো ফারুকের কাছ থেকে জানাতে চাইলে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বলেন, যারা মোটা জাতের এই চালগুলো খান না বা পারিবারিক প্রয়োজনে বিক্রি করেছেন তাদের কাছে থেকে কিনেছেন। তিনি ক্রয় করা অপরাধের বিষয়টি তা জানা ছিল না এবং ভুলও স্বীকার করেছেন। তারপরও প্রশাসনিক কর্মকর্তা তার জরিমানা না করে আ’লীগ নেতাদের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে কারাদন্ডাদেশ দেন।স্থানীয়রা জানান, সরকার মোটা জাতের চাল উপকারভোগিরা অনেকেই না খেয়ে বিক্রি করেন। সেই চালগুলো মাছ ও গরুর খাদ্য হিসেবে কিনেন সংশ্লিষ্টরা।

একই ভাবে না বুঝেই উপকারভোগিদের কাছ থেকে মাছের খাদ্য হিসেবে কিনেন বিহারীনগর গ্রামের ওমর ফারুক। উপকারভোগীরা ঘটনাস্থালে এসে বিক্রির কথা স্বীকার করলেও শুধু মাত্র ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট শাহীন মিয়া ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ৭ দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ডাদেশ দিয়েছেন।

কিন্তু উপকারভোগীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এ ঘটনায় প্রমাণিত হয় প্রশাসন প্রভাবিত হয়ে এই কারাদন্ডদেশ দেন।স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের সাথে কথা বলা সম্ভব না হলেও সভাপতি মোহাম্মদ আলী জানান, প্রতিদিন অনেক কাগজে স্বাক্ষর করতে হয়।

গ্রামবাসি তার অজান্তেই অভিযোগে স্বাক্ষর করে নিয়ে প্রশাসনের কাছে দিয়েছেন। তিনি নিজেও চক্রান্তের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেন।মাছের খাদ্য হিসেবে ফারুক চালগুলো কিনেছে বলে ঘটনাস্থালে গিয়ে জানা গেছে। তারপরও এই ছোট ঘটনায় জরিমানা না দিয়ে কারাদন্ডাদশে দেওয়াকে অমানবিক উল্লেখ করে স্থানীয় উমার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: নুরুজ্জামান জানান, স্থানীয় দ্বন্দ্বে আওয়ামী লীগের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে প্রশাসন এই দন্ডাদেশ দিয়েছেন বলে মনে করেন।

ধামইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গণপতি রায় জানান, সরকারি চাল বিক্রি, ক্রয় ও মজুদ রাখা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। লিখিত অভিযোগ প্রক্ষিতে অভিযান পরিচালনা করে সরকারি ৬ বস্তা চাল ওমর ফারুকের বাড়িতে পাওয়ায় তার কারাদন্ড দেওয়ায় হয়েছে। এর সাথে আরো কে কে জড়িত তা ক্ষতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণের করা হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here