সুনামগঞ্জে বন্যায় কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে

সুনামগঞ্জে বন্যায় কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ছবি-সংগ্রহ

সুপ্রভাত বগুড়া (জীবন জীবীকা): গত ১৫ দিনের ব্যবধানে ফের সুনামগঞ্জে বন্যায় কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। টানা কয়েকদিনের অবিরাম বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকায় দ্বিতীয় দফা সুনামগঞ্জ জেলা শহরের নতুন নতুন এলাকাসহ জেলার ছাতক দোয়ারাবাজার,

তাহিরপর বিশ্বম্ভরপুর ,দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, জামালগঞ্জ, দিরাই ও শাল্লাসহ সব ক’টি উপজেলায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। এদিকে জেলার ছাতকের সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার ১৬৬ সেন্টিঃ ও গত ২৪ ঘন্টায় ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ কারণে সুনামগঞ্জ পৌরসভা ও ছাতক পৌর শহরের অধিকাংশ এলাকার রাস্তাঘাট ও বাসাবাড়ি পানির নীচে তলিয়ে গেছে।

Pop Ads

এছাড়াও ছাতক, সুনামগঞ্জ ও সিলেটের রাস্তাটি পানির নীচে তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সুনামগঞ্জ শহরের কাজির পয়েন্ট, উকিলপাড়া, নতুনপাড়া, বড়পাড়া সাহেববাড়ি ঘাট, ষোলঘর হাজিপাড়া, জামতলাসহ অধিকাংশ এলাকার বাসাবাড়ি রাস্তাঘাট পানিতে নিমর্জ্জিত হয়ে পড়ায় রাস্তাঘাটে যানবাহন চলাচল নেই বলইে চলে।

ফলে মানুষজন চরম বিপাকে পড়ে খাদ্য সংকটে ভূগছেন। জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, উপজেলা সদরের আশ-পাশ ও হাওর এলাকার বিভিন্ন গ্রামে বন্যায়‘কোথাও বুক পানি, কোথাও কোমর সমান পানি হয়েছে। অধিকাংশ বন্যার্তের ঘরে চাউল নেই, গ্যাসের চুলাও ডুবে গেছে। চুলা মেরামত করার মানুষ পাচ্ছেন না অনেকেই।

জ্বালানি কাঠ না থাকায় বহু পরিবাার নিউ উদ্যোগে শুকনো খাবার খেয়ে দিন পার করছেন। এসব ঘরে বয়ষ্ক ও শিশুদের নিয়ে রীতি মতো বিপাকে পড়েছেন বানবাসীরা। কেউ বাচ্চাদের ব্রেড দিয়ে কোন রকম সময় পাড় করছে। চুলা বন্ধ থাকায় শুকনো খাবার খেয়ে দিন পাড় করছেন বানবাসী মানুষ। অনেক পরিবার নিজেদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে ও আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন।

পানি বাড়ার কারণে জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ সড়কের উজ্বলপুর নামক স্থানে সড়ক ভাঙ্গা সড়ক আরও বেশি ভেঙ্গে জেলা সদরের সাথে উপজেলাবাসির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জামালগঞ্জে-সেলিমগঞ্জ সড়ক দিয়ে নদীর পানি উপচে পড়ে বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। জেলার হাওর পাড়ের গ্রামীন জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে।

এদিকে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায়, জেলা শহরের সাথে -জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিপুর, দিরাই-শাল্লা, ছাতক’র একমাত্র সড়কগুলোতে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, যেভাবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে তাতে বন্যার আশংঙ্কা থেকে জেলার প্রতিটি উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

বন্যায় কত হাজার পরিবার ঘরবন্দি হয়েছেন তাদের সঠিক পরিসংখ্যান এখনো জানা না গেলেও প্রায় লাখ মানুষ পানিবন্দি হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। এদিকে জেলায় রোপা আমন, সবজি ক্ষেত ও পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ও জানা যায়।

জেলা প্রশাসন জেলায় বন্যা কবলিত এলাকার মানুষজনের জন্য খাদ্য সহায়তা হিসেবে জিআর  ৪০০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৮ লাখ টাকা, শিশু খাদ্য বাবত ৩ লাখ, গোবাদি পগুল খাদ্য বাবত ২ লাখ টাকা এবং ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের হাতে পৌছে দেয়া হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী  সবিবুর রহমান জানান, গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাতের ফলে দ্বিতীয় দফায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে শহেরর রাস্তাঘাট ও বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ জানান, সুনামগঞ্জে আরো কয়েক দিন ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এতে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে।

বন্যা কবলিত মানুষজনকে নিরাপদে রাখতে জেলার সব ক’টি উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং যারা বন্যা কবলিত হবেন তাৎক্ষনিক জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবীদের দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে । বন্যা পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসনের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here