আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের কার  কত সম্পদ?

4
আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের কার  কত সম্পদ?

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনায় ৬টি আসনে ২৯ প্রার্থী লড়াইয়ে থাকলেও সবার আগ্রহ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের নিয়ে। প্রার্থীদের মধ্যে বার্ষিক আয় ও সম্পদে সবার ওপরে আব্দুস সালাম মুর্শেদী; আয় বেড়েছে অন্য প্রার্থীদেরও।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করছেন প্রার্থীরা। আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু না হলেও কৌশলী প্রচারণায় ব্যস্ত তারা। তাতে নির্বাচনী আমেজ বইছে খুলনায়। খুলনার ৬টি আসনে নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছিলেন ৫৩ জন। তবে এর মধ্যে ২৪ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে।

বৈধ প্রার্থী আছেন ২৯ জন। বেশ কয়েকজন শক্তিশালী প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় খুলনার কোনো আসনেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই নেই। তাই সবার আগ্রহ আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের নিয়েই।

Pop Ads

হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, খুলনার ৬টি আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে বার্ষিক আয় ও সম্পদ বেশি খুলনা-৪ আসনের প্রার্থী আব্দুস সালাম মুর্শেদীর। আপাদমস্তক ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা এই নৌকার মাঝির বার্ষিক আয় ৮ কোটি টাকারও বেশি। তার সম্পত্তি আছে ১৩৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকার। পাঁচ বছরে তার আয় ও সম্পত্তি দুটোই বেড়েছে।

খুলনা-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েলের বার্ষিক আয় ৭ কোটি ২৮ লাখ টাকা। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে তার বার্ষিক আয় ছিলো ৩ কোটি ২০ হাজার টাকা। তবে গত ৫ বছরে সম্পদ কমেছে শেখ জুয়েলের। আগে তার সম্পদ ছিলো ৬৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫১ কোটি ৩৬ লাখ টাকায়।

প্রথমবার মনোনয়ন পাওয়া আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেনের বার্ষিক আয় ৪৭ লাখ টাকা আর তার সম্পদ রয়েছে মোট ৪ কোটি ৯০ লাখ টাকার।

খুলনায় আওয়ামী লীগের অন্য প্রার্থীদের মধ্যে খুলনা- ১ আসনের ননী গোপাল মণ্ডলের বার্ষিক আয় ১৭ লাখ ৪৭ হাজার টাকা, ৫ আসনের নারায়ণ চন্দ্র চন্দের আয় ১৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা আর প্রথমবার মনোনয়ন পাওয়া আরেক প্রার্থী রশিদুজ্জামান মোড়লের আয় ৬ লাখ ৪৩ হাজার টাকা।

খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, আমি একজন ব্যবসায়ী, ব্যবসার কারণেই আমার সম্পদ বেড়েছে। আমি সরকারকে কর দিচ্ছি। কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। রাজনীতি করি বলে আমার সম্পদ বেড়েছে এমনটা নয়। প্রার্থীদের এসব হলফনামা ভোটারদের মধ্যে আরও বড় পরিসরে প্রচার করা উচিৎ, যাতে তাদের সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয়।

সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাড. কুদরত ই খুদা বলেন, অনেক প্রার্থীরই আয় সম্পদ বেড়েছে। এদের মধ্যে অনেকে এর আগেও নির্বাচন করেছেন। তাদের এই দুই নির্বাচনে আয় ও সম্পদের পরিমাণ দেখলে অনেকক্ষেত্রেই বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়। প্রার্থীরা হলফনামায় যে তথ্য দিচ্ছেন, তার কতটা সত্য তা নির্বাচন কমিশনের দেখা উচিৎ। একইসঙ্গে তাদের দেয়া হলফনামার তথ্য সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা উচিত, ভোটাররা যাতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। খুলনার ৬টি আসনের মধ্যে তিনটি আসনে এবার বর্তমান সংসদ সদস্যরা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন, বাকি তিনটি আসনে নতুন প্রার্থী।

এক নজরে খুলনার ৬টি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের হলফনামা তথ্য :

খুলনা-১ আসনের ননী গোপাল মণ্ডলের বর্তমানে বার্ষিক আয় ১৭ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ পাশ। ইতোপূর্বে তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে। একটিতে তিনি খালাস, অন্যটিতে অব্যাহতি পেয়েছেন।

খুলনা-২ আসনের সেখ সালাউদ্দিন জুয়েলের বর্তমানে বার্ষিক আয় সাত কোটি ২৮ লাখ টাকা; বর্তমান সম্পদ ৫১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পান। তার নামে কোনো মামলা নেই।

খুলনা-৩ আসনের এসএম কামাল হোসেনের বার্ষিক আয় ৪৭ লাখ টাকা; বর্তমান সম্পদ চার কোটি ৯০ লাখ টাকা। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা মাস্টার্স। তার বিরুদ্ধে জরুরি বিধিমালায় একটি মামলা ছিলো, যার চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পুলিশ।

খুলনা-৪ আসনের আব্দুস সালাম মুর্শেদী (আওয়ামী লীগ) বর্তমানে বার্ষিক আয় ৮ কোটি ২ লাখ টাকা; বর্তমান সম্পদ ৩৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিক পাশ। তার নামে কোনো মামলা নেই।

খুলনা-৫ আসনের নারায়ণ চন্দ্র চন্দের বর্তমানে বার্ষিক আয় ১৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা; বর্তমান সম্পদ এক কোটি ২৭ লাখ টাকা। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এমএ পাশ। তার বিরুদ্ধে পূর্বে একটি মামলা ছিলো।

খুলনা-৬ আসনের রশিদুজ্জামান মোড়লের বর্তমানে বার্ষিক আয় ৬ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এমএ পাশ। তার বিরুদ্ধে পূর্বে দুটি মামলা ছিলো। দুটিতেই তিনি খালাস পেয়েছেন।