সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ম

3
সালাতুত তাসবিহ নামাজের নিয়ম

তাসবিহ অর্থ আল্লাহর নাম স্মরণ করা বা জিকির করা। সলাতুত তাসবিহ অর্থ তাসবিহ পাঠের নামাজ। এ নামাজে ৩০০ বার একটি তাসবিহ পাঠ করতে হয়। তাই এ নামাজ কে সলাতুত তাসবিহ নামাজ বলা হয়। এ নামাজটি নফল। জীবনে একবার হলেও সালাতুস তাসবিহ নামাজ আদায় করতে বলেছেন রাসুলুল্লাহ সা.।
নফল শব্দের অর্থ অতিরিক্ত। এটি ফরজের মতো আবশ্যক নয়। তবে আদায়ে সওয়াব ও আল্লাহ নৈকট্য অর্জন হয়। নফল নামাজের গুরুত্ব অনেক বেশি। রাসুল সা. বেশি করে নফল নামাজ আদায় করতেন। সাহাবাদের উৎসাহিত করতেন।

নবীজি সুস্থতা-অসুস্থতা, সফর-নিবাস, নিরাপত্তা-যুদ্ধ সব সময় ফরজের পাশাপাশি যতœবান ছিলেন নফল নামাজে। উম্মতকেও নফল পড়ার প্রতি উৎসাহিত করেছেন। নফল নামাজেই মহান আল্লাহর ভালোবাসা ও নৈকট্য অর্জন সম্ভব। ফরজে হয়ে যাওয়া ত্রুটির ক্ষতিপূরণ হয় নফলে।

Pop Ads

নফল নামাজের উপকারিতা অপরিসীম। নফল নামাজে গুনাহ মিটে যায়। সওয়াব-প্রতিদান দ্বিগুণ হয়। আগের গুনাহ মাফ হয়। দুনিয়া-আখিরাতে উঁচু মর্যাদা লাভ হয়। মন-দিল পবিত্র হয়। অন্তর পরিশুদ্ধ হয়। তাকওয়া বা আল্লাহভীতি তৈরি হয়। রাসুল সা. নফল নামাজ সালাতুস তাসবিহ জীবনে একবার হলেও আদায় করতে বলেছেন।

আরও পড়ুন: নামাজ না পড়লে ৬ শাস্তি দুনিয়াতেই

সালাতুত তাসবিহ। তাসবিহের নামাজ। সালাত শব্দের অর্থ নামাজ। আর তাসবিহ বলতে ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’ শব্দগুলো বোঝানো হয়েছে। যে নামাজে এসব তাসবিহ পড়তে হয়, তাকে সালাতুত তাসবিহ বলে।

নবী কারিম সা. জীবনে একবার হলেও মুসলমানরা যেন এ নামাজ পড়ে এ বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন। (আবু দাউদ, হাদিস ১২৯৭, ইবনে মাজাহ, হাদিস ১৩৮৭, সহিহ ইবনে খুজাইমা, হাদিস ১২১৬, সুনানে বায়হাকি কুবরা, হাদিস ৪৬৯৫)

রাসুলুল্লাহ সা. তার চাচা হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-কে এই নামাজ শিক্ষা দিয়েছিলেন। বলেছেন, এই নামাজ পড়লে আল্লাহ তাআলা আগের ও পরের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন।

তিনি বলেন, চাচা! আপনি যদি পারেন, তবে দৈনিক একবার করে এই নামাজ পড়বেন। যদি দৈনিক না পারেন, তবে সপ্তাহে একবার পড়বেন। যদি সপ্তাহে না পারেন, তবে মাসে একবার পড়বেন। যদি মাসে না পারেন, তবে বছরে একবার পড়বেন। যদি এটাও না পারেন, তবে সারা জীবনে একবার হলেও এই নামাজ পড়বেন । (বুখারি ৩৪২৩, ইবনে মাজা ১৭৩)

সালাতুল তাসবিহ নামাজ পড়ার পদ্ধতি

সালাতুল তাসবিহ নামাজ চার রকাত। নিয়ত স্বাভাবিকভাবে করলেই হবে। ‘আমি চার রাকাত নফল নামাজ সালাতুস তাসবিহ পড়ছি’। প্রতি রকাতে সুরা ফাতিহার পর যে কোনো সুরা পড়তে হবে। তবে এই নামাজে প্রতি রাকাতে ৭৫ বার করে, চার রকাতে ৩০০ বার তাসবিহ পড়তে হয়।

সালাতুত তাসবিহ নামাজ পড়ার দোয়া

سُبْحَانَ اللهِ، وَالْحَمْدُ للهِ، وَلَا إلَهَ إلّا اللهُ، وَاللهُ أكْبَر
উচ্চারণ: সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।’ অর্থ: মহা পবিত্র আল্লাহ। সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আল্লাহ সবার চেয়ে বড়।

প্রথম রাকাত এ সানা পড়ার পর তাসবিহ ১৫ বার পড়তে হবে। তারপর স্বাভাবিক নিয়মে সুরা ফাতিহা ও অন্য আরেকটি সুরা পড়ার পর তাসবিহ ১০ বার পড়তে হবে। রুকুতে গিয়ে রুকুর তাসবিহ পড়ার পর তাসবিহ ১০ বার পড়তে হবে। রুকু থেকে দাঁড়িয়ে ‘রাব্বানা লাকাল হামদ’ পড়ার পর তাসবিহ ১০ বার পড়তে হবে। সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবিহ পড়ার পর তাসবিহ ১০ বার পড়তে হবে। প্রথম সিজদা থেকে বসে তাসবিহ ১০ বার পড়তে হবে। আবার সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবিহর পর তাসবিহ ১০ বার পড়তে হবে। এভাবে প্রতি রাকাতে মোট ৭৫ বার এ তাসবিহ পাঠ করতে হবে। একইভাবে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাত পড়তে হবে। (তিরমিজি হাদিস ৪৮১, আবু দাউদ হাদিস ১২৯৭, ইবনু মাজাহ হাদিস ১৩৮৬, ১৩৮৭, মুসতাদরাক হাকিম ১/৪৬৩-৪৬৪, ইবনু খুযাইমা ২/২৩-২৪, মাজমাউয যাওয়াইদ ২/২৮১-২৮৩, তারগিব ১/৩৫৩-৩৫৫)

তবে কোনো এক স্থানে তাসবিহ পড়তে সম্পূর্ণ ভুলে গেলে বা ভুলে নির্দিষ্ট সংখ্যার চেয়ে কম পড়লে পরবর্তী যে রুকনেই স্মরণ আসুক সেখানে সংখ্যার সঙ্গে এই ভুলে যাওয়া সংখ্যাগুলোও আদায় করে নেবে।

এভাবেই এ নফল নামাজ সম্পন্ন করতে হবে। সালাতুস তাসবিহ পড়ে জুমার রাতে দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা ফেরান না। এটা পরীক্ষিত আমল। জীবনের যে কোনো সমস্যায় আল্লাহই সমাধান করতে পারেন। কিন্তু আমরা আল্লাহর থেকে চেয়ে নিতে পারি না। আল্লাহর কাছে চাইলেই আল্লাহ খুশি হন। যে আল্লাহর কাছে চায় না, আল্লাহ তার ওপর অসন্তুষ্ট হন।