নেটিজেনদের তোপের মুখে অবশেষে মুখ খুললেন হাসান মতিউর রহমান

নেটিজেনদের তোপের মুখে অবশেষে মুখ খুললেন হাসান মতিউর রহমান

ক’দিন আগে দেশ বরেণ্য গীতিকার ও সুরকার হাসান মতিউর রহমানের কথা-সুরে দুটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচিত হিরো আলম। আর এ সংবাদ প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই এই গীতিকার পড়েছেন তোপের মুখে। তার সমালোচনা করছেন গীতিকার, সুরকার, শিল্পীসহ নানা মানুষজন। অবশেষে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন হাসান মতিউর রহমান।

তার ভাষ্য, ‘সম্মানিত বাংলা গানের শ্রোতা এবং আমার প্রিয় ভক্তবৃন্দ আসসালামু আলাইকুম। আশা করি, সবাই ভালো আছেন। গত দু’দিন যাবৎ একটি বিষয় নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছে। যা আমাকে খুবই বিব্রত করেছে। আমি খুবই মর্মাহত। আমি কেন হিরো আলমের গান করব! আমি কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে নয়। চেয়েছি গান যখন গাইতে চায়, চেষ্টা করে দেখি শিখিয়ে ভালো কিছু আদায় করা যায় কিনা। সেদিন গানের গাইড ভয়েস নিয়ে সবার সামনে আমি তাকে বলে দিয়েছি, একজন তবলা বাদক রেখে একজন গানের শিক্ষকের কাছে মন দিয়ে দুই মাস শিখতে হবে। তা না হলে কিন্তু গান হবে না।’

Pop Ads

হিরো আলমের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘ছেলেটা কিন্তু খুব নরম। সবাইকে সম্মান দিয়ে কথা বলে। বলল, ওস্তাদ আমি শিখব। আপনি চিন্তা করবেন না। এরপর আমি নিজেই ছবিসহ পোস্ট দেই সরল মনে। ভেবেছিলাম, সবাই ভালোভাবে নেবে এবং এ রকম একটি দুঃসাহসিক কাজের জন্য আমাকে উৎসাহিত করবেন। কিন্তু দেখা গেল অনেকেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। সঙ্গে সঙ্গে সবাইকে সম্মান জানিয়ে আমার আইডি থেকে পোস্টটি ডিলিট করে দেই। পরে আমাকে অসম্মান করার জন্য স্ক্রিনশট রেখে ছড়িয়ে দেয়। স্টুডিওতে গোপনে কেউ মোবাইলে ধারণ করে ছেড়ে দেয়।’

 

 

বিষয়টি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার আহ্বান জানিয়ে হাসান মতি বলেন, ‘হিরো আলমের সঙ্গে যারা এসেছিল হয় তারা, না হয় যে কেউ খারাপ উদ্দেশ্যে ভিডিও করে আমাদেরকে সবার কাছে হেয় করেছে। রেকডিংয়ের সময় আমরা একটু মজা করেই থাকি। তবে তা কখনো কেউ জানতে পারে না। একান্তই গোপন।’ ‘যাই হোক আমি বুঝতে পেরেছি, দেশের গান পিপাসুরা আমাকে কত ভালোবাসেন। যারা মন্দ বলেছেন, তারা ভালোবাসেন বলেই বলেছেন। আমি সবকিছু মাথা পেতে নিচ্ছি। বিশ্বাস রাখবেন আমার ওপর। এমন কিছু করব না যাতে আমার জন্য সংগীতের কোনো ক্ষতি হয়,’ বলেন এই গীতিকার।

তিনি আরও বলেন, ‘জীবন কাটিয়েছি গান নিয়ে। পেছনে গেছে অনেকদিন। সামনে আর কতদিন কাজ করতে পারব আল্লাহ্ জানেন। তবে যতদিন আছি আমি আপনাদের সঙ্গেই থাকব ইনশাআল্লাহ। যারা আমার এই সিদ্ধান্তে কষ্ট পেয়েছেন, তারা আমাকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমি আপনাদেরই ভাই-বন্ধু-আংকেল। সব সময় পাশে ছিলাম, পাশে থাকব। আমি খারাপ কিছু করব না, করতে পারি না। চলার পথে সবাই বন্ধু নয়, কিছু বৈরি মানুষও থাকে। কিছু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষও থাকে। খুবই দুঃখজনক। তারাও সুযোগ পেয়ে তৎপর হয়ে ওঠে স্বার্থ উদ্ধারে। কাউকে যদি অজান্তে দুঃখ দিয়ে থাকি, মনে রাখবেন না। সব ভুলে যাবেন।’

সবশেষে ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত, বঙ্গবন্ধু মরে নাই’ গানের এই গীতিকার বলেন, ‘সত্যি এটা অনিচ্ছাকৃত ভুল। একটি আবেদন, মন্দকে দূরে তাড়িয়ে না দিয়ে আসুন সে যাতে ভালো হয় সে চেষ্টা করি। কার ভেতরে কি আছে কেউ জানি না। আমরা সবাই এমন একটি জায়গা থেকেই উঠে এসেছি। মায়ের পেট থেকে কেউ শিখে আসিনি। বহু বাধা পেরিয়ে এখানে এসেছি।

সুযোগ পেয়ে আমরা কি চলছি না! অনুরোধ রইল, আপনি না পারলে করবেন না। যারা পারে তাদের কিছু করতে দিয়েন। আল্লাহ্ সবাইকে এক রকম মেধা দিয়ে পাঠান না।’ উল্লেখ্য, দেশের জনপ্রিয় গীতিকার ও সুরকার হাসান মতিউর রহমান। তার লেখা জনপ্রিয় গানগুলো মধ্যে রয়েছে- ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত, বঙ্গবন্ধু মরে নাই’, ‘আমি বন্দী কারাগারে’, ‘কলমে নাই কালি’, ‘আমার লাইন হইয়া যায় আঁকাবাঁকা’সহ আরও অনেক।