ঈদুল ফিতরের তাৎপর্য ও করণীয়

আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আজিজুল হক

সুপ্রভাত বগুড়া (ধর্ম ও জীবন): ঈদ মানে খুশি বা আনন্দ। প্রতি বছর ঈদ আসে আনন্দ নিয়ে। কিন্তু এবছর ঈদ এমন এক সময় হাজির, যখন করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে পুরো বিশে^র জনজীবন স্তব্ধ, মর্মাহত। ঈদ মুসলমানদের জাতীয় উৎসব।

Pop Ads

পবিত্র মাহে রমজানের দীর্ঘ একমাস সিয়াম কিয়ামের সাধনার পর মুসলিমজাতির নিকট আগমন করছে অনাবিল সুখের আনন্দের ভরা ঈদুল ফিতর। এই আনন্দ আল্লাহ তায়ালার একটি মহা হুকুম পালন করার শুকরিয়াস্বরূপ।

সুতরাং প্রকৃত ঈদ ঐ ব্যক্তির জন্য যে পুরো রমজান মাস আল্লাহর হুকুম যথাযথ ভাবে পালন করে নিজেকে আল্লাহ তায়ালার রহমত ও ক্ষমাপ্রপ্তির উপযোগী বানিয়েছে। আনন্দ-খুশি উদযাপন করা মানুষের ফিতরাত বা স্বভাবের চাহিদা। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষেরই উৎসব আছে।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, প্রত্যেক সম্প্রদায়েরই ঈদ আছে-প্রতিটি জাতিরই খুশির দিন আছে। আর এটা আমাদের ঈদ-আমাদের খুশির দিন। (বুখারী) হযরত আনাছ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) যখন হিজরত করে মদীনায় আগমন করলেন, তখন তিনি সেখানে দেখলেন যে, মদীনাবাসীগণ বছরে দু’টি দিনে বিশেষভাবে উৎসব পালন করে। রাসূলূল্লাহ (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, এ দু-দিনের কী তাৎপর্য আছে? তারা বললো, আমরা জাহেলিয়াতের যুগে এ দিন দু’টিতে খেলাধুলা করতাম।

তখন রাসূলে করীম (সাঃ) বললেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ দু’দিনের পরিবর্তে তোমাদেরকে এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ দুটো দিন দিয়েছেন। তাহলো ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর। (আবু দাউদ) তবে অন্যান্য জাতির ঈদ আর আমাদের ঈদ এক নয়। আমাদের ঈদ-উৎসবে অশ্লীলতার কোন সুযোগ নেই। আছে শুধু তাকবীর ধ্বনি-আল্লাহর বড়ত্বের ঘোষনা, তাহচ্ছে: “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ”। অর্থ: আল্লাহ সবচেয়ে বড়, আল্লাহ সবচেয়ে বড়, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবূদ নেই। আর আল্লাহই সবচেয়ে বড়, আল্লাহ সবচেয়ে বড়, সকল প্রশংসা শুধু তাঁরই।

পুরস্কারের এই মহান দিসব সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, যখন ঈদের দিন উপস্থিত হয়, তখন আল্লাহ তায়ালা স্বীয় ফিরিশতাগণের সামনে বান্দাদের ইবাদত-বন্দেগী নিয়ে গর্ব করেন এবং জিজ্ঞেস করেন, হে আমার ফিরিশতা সকল! যে শ্রমিক তার দ্বায়িত্ব যথাযথভাবে আঞ্জাম দিয়েছে, তার প্রতিদান কী হতে পারে? তারা আরজ করেন, হে প্রভু! তাদের প্রতিদান তো হলো যথাযথভাবে তাদের পারিশ্রমিক আদায় করে দেয়া। তখন আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, হে আমার ফিরিশতাগণ! আমার বান্দা ও বান্দীরা আমার দেয়া দায়িত্বকে পরিপূর্ণভাবে আদায় করেছে।

অতঃপর সকলে দুআ করতে করতে ঈদগাহে ছুটে এসেছে। আমার সম্মান ও মর্যাদার কসম, আমার ক্ষমা ও বড়ত্বের শপথ! আমি অবশ্যই তাদের প্রার্থনা মঞ্জুর করবো। তারপর তিনি ঈদগাহে সমবেত সিয়াম সাধকদের লক্ষ্য করে ঘোষণা দেন, যাও তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দিয়েছি এবং তোমাদের গুনাহগুলো নেকীর দ্বারা পরিবর্তন করে দিয়েছি। তখন তারা ঈদগাহ থেকে ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে এমন অবস্থায় ঘরে ফিরে যায়, যেন তারা পাপমুক্ত নিষ্পাপ। (বুখারী,মুসলিম) ঈদের প্রকৃত তাৎপর্য এটাই।

ঈদের চাঁদ ওঠার পর আমল হচ্ছে, ঈদের রাতে আল্লাহ পাকের ইবাদত করা। কেননা হাদিসে আছে , যে ব্যক্তি ঈদের রাতে জাগরত থেকে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকবে, তাহলে যেদিন অন্যান্য দিল মরে যাবে, সেদিন তার দিল মরবে না অর্থাৎ কিয়ামতের দিনের আতংকের কারণে অন্যান্য লোকের অন্তর ঘাবড়ে গিয়ে মৃতপ্রায় হয়ে যাবে কিন্তু দুই ঈদের রাত্রে জাগরণকারীর অন্তর ঠিক থাকবে-ঘাবড়াবে না। (ইবনে মাজাহ)

ঈদুল ফিতরে ১৩টি জিনিস সুন্নাত: (১) ভোরে খুব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠা। (২) মিসওয়াক করা এবং উত্তমরূপে গোসল করা। (৩) যথাসাধ্য উত্তম পোশাক পরিধান করা। (৪) সুগন্ধি-আতর ব্যবহার করা। (৫) ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে যেকোন মিষ্টিদ্রব্য খাওয়া। তবে বেজোড় সংখ্যক খেজুর খাওয়া উত্তম। (৬) আনন্দ প্রকাশ কার এবং হাস্যোজ্জ্বল থাকা। (৭) ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বেই সদকায়ে ফিতর (ফেতরা) না দিয়ে থাকলে দিয়ে যাওয়া। (৮) ফজরের পর যথাশীঘ্র ঈদগাহে উপস্থিত হওয়া। (৯) ঈদগাহে যাওয়ার সময় এই তাকবীর আস্তে আস্তে পড়তে পড়তে যাওয়া- “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ”। (১০) ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া। (১১) ঈদগাহে গিয়ে ঈদের নামাজ পড়া। বিনা ওজরে মসজিদে না পড়া। (১২) ঈদগাহে এক পথে যাওয়া এবং অন্য পথে ফিরে আসা। (১৩) সামর্থ অনুযায়ী অধিকহারে নফল দান-সদকা করা।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের এই মহা দুর্যোগে জাকাত-ফেতরা ও নফল দান-সদকা বেশি বেশি করে গরীব-ধনী সকলকে ঈদ উৎযাপন করার তাওফীক দিন। আমিন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here