শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে। দুই পা ফুলে আছে; পায়ের পাতায় পানি এসেছে। উচ্চতার নিরিখে তার ওজন ৭০ শতাংশের কম অথবা শিশুর দেহে মারাত্মক অপুষ্টি সমস্যার লক্ষণাদি দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থায় শিশুর চিকিৎসায় করণীয় জানাচ্ছেন
প্রফেসর ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী
সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশু স্বাস্থ্য বিভাগ
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
শিশুর কংকালসার দেহ, চর্বি বলতে কিছু নেই।
কাঁধ, বাহু ও ঊরু সব জায়গায় অস্থিচর্মসার অবস্থা। চামড়া ঝুলে আছে। বুকের সব অস্থি বাহ্যিকভাবে ফুটে উঠেছে। এ অবস্থায় শিশুর শারীরিক পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
শিশুকে শারীরিক পরীক্ষা করে দেখা
* শিশুর পানি স্বল্পতার কোনো চিহ্ন বা শকের লক্ষণাদি
* হাতের তালু মারাত্মক রকমের ফ্যাকাসে
* চোখে ‘এ ভিটামিন’ ঘাটতির নমুনা
* কান পাকা, গলা ব্যথা, ত্বকের সংক্রমণ বা নিউমোনিয়া বা অন্যকোনো ইনফেকশনের লক্ষণ
* জ্বর অথবা তাপমাত্রা কমে যাওয়া
* মুখে ঘা
* চামড়ায় কোয়াশিওরকারের পরিবর্তন চিহ্নাদি।
চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা
* মারাত্মক অপুষ্টি সমস্যাজনিত শিশু রোগীর চিকিৎসার বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্টাফ থাকাই বাঞ্ছনীয়। ভর্তি শিশু রোগী অন্যান্য সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত শিশু রোগী থেকে পৃথক ইউনিটে রাখা উচিত।
* শিশুকে রাখতে হবে উষ্ণ স্থানে (২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড)।
শিশুকে পরিষ্কার করার পরপর তাড়াতাড়ি শুকনা কাপড়চোপড় পরানো উচিত।
* সব সময় মা যেন শিশুর সঙ্গে অবস্থান করেন।
* শিশুর খাবার ঠিক নিয়মে তৈরি করে দেওয়া। দিনরাতে তাকে খাওয়ানোর প্রক্রিয়াটি সুচারুভাবে সম্পন্ন করার সাংগঠনিক ভিত।
* নিখুঁত ওজন নির্ণয়ের জন্য ওজন মাপার যন্ত্র।
খাবার চার্ট রেখে শিশুর ওজনে বাড়া মনিটর করা। বর্হির্বিভাগ ও কমিউনিটি স্তরে অসুস্থ শিশুকে ভালোভাবে পুনর্বাসিত করা, যাতে করে পুনর্বার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে।
চিকিৎসার নানা দিক
হাইপোগ্লাইসেমিয়া : মারাত্মক অপুষ্টিতে ভোগা সব শিশুর ‘রক্তে গ্লুকোজের কম মাত্রা’ সমস্যায় পড়ার ঝুঁকি থাকে। যে কারণে ভর্তির সঙ্গে সঙ্গে শিশুটিকে ১০ শতাংশ গ্লুকোজ বা সুক্রোজ বা খাবার খেতে দিতে হবে। এসব বাচ্চাকে হাইপোগ্লাইসেমিয়া প্রতিরোধক ঘন ঘন খাবার খেতে দিতে হয়।
পানিশূন্যতার চিকিৎসা : শরীরে পানি ঘাটতি বা ডিহাইড্রেশন বোঝার জন্য আছে কিছু লক্ষণ। মারাত্মক অপুষ্টি সমস্যায় ভোগা শিশুতে এসব লক্ষণ বিবেচনা করে পানি ঘাটতি আছে কি না তা নির্ণয় দুরূহ হয়ে পড়ে।
ইনফেকশনের চিকিৎসা : মারাত্মক অপুষ্টি আক্রান্ত শিশুতে ইনফেকশনের সাধারণ লক্ষণাদি যেমন—জ্বর প্রায়ই থাকে না। অথচ গোপনে সে বেশ কয়েক ধরনের ইনফেকশনে আক্রান্ত থাকতে পারে। সে কারণে মারাত্মক অপুষ্টিতে ভোগা প্রতিটি শিশু কোনো না কোনো ইনফেকশনে আক্রান্ত এ কথা মনে রেখে সরাসরিভাবে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে এন্টিবায়োটিকস চিকিৎসা পেয়ে থাকে।